Advertisement
১১ মে ২০২৪

টোপ দিয়ে নাচের দলে, ধৃত এক

বিয়ে হোক বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান। বিহারের গাঁ-গঞ্জে নাচের আসর যে কোনও অনুষ্ঠানের অচ্ছেদ্য অঙ্গ। চড়া আওয়াজে কখনও ‘বিড়ি জ্বালাইলে...’ বা কোনও ভোজপুরি মজলিসি গানের সঙ্গে মেয়েদের নাচ। আর সেই আসরে যাদের নাচতে দেখা যায়, তাদের অনেকেই নদিয়ার কিশোরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাকদহ শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০২:০৮
Share: Save:

বিয়ে হোক বা অন্য কোনও অনুষ্ঠান। বিহারের গাঁ-গঞ্জে নাচের আসর যে কোনও অনুষ্ঠানের অচ্ছেদ্য অঙ্গ। চড়া আওয়াজে কখনও ‘বিড়ি জ্বালাইলে...’ বা কোনও ভোজপুরি মজলিসি গানের সঙ্গে মেয়েদের নাচ। আর সেই আসরে যাদের নাচতে দেখা যায়, তাদের অনেকেই নদিয়ার কিশোরী।

২০০৬ সালের ৮ মে রাতে বিহারের মোতিহারির জিউলিতে বিয়ের আসরে নাচতে গিয়ে বন্দুকের গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়ে গিয়েছিল তাহেরপুরের কিশোরী সুপর্ণা সাহা। কিন্তু তারপরেও অবস্থা যে বদলায়নি, তার প্রমাণ ফের মিলল। কাজের প্রলোভন দেখিয়ে চাকদহের রসুল্যাপুরের এক কিশোরীকে বিহারে নিয়ে গিয়ে নাচতে বাধ্য করা হয়েছিল।

কোনও রকমে বাড়ি ফিরে সেই কিশোরী পুলিশে অভিযোগ দায়ের করায় শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছে এক মহিলাকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সে দালাল। তাকে জেরা করে পুরো চক্রের হদিস পেতে চাইছে পুলিশ। ধৃতের নাম দীপা দাস। বছর চল্লিশের দীপার বাড়ি হরিণঘাটা থানার নিমতলা এলাকায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চাকদহের দেউলি গ্রাম পঞ্চায়েতের রসুল্যাপুর গ্রামের ওই কিশোরী গত ২১ জুন স্কুলে যাওয়ার জন্য ইউনিফর্ম পড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল। তারপর আর ফেরেনি।

সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুজির পর মেয়ের সন্ধান না পেয়ে তার বাবা চাকদহ থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। খোঁজাখুঁজি শুরু করে পুলিশ। বেশ কিছুদিন পর মেয়েটি ফোনে বাড়িতে যোগাযোগ করে। বিশদে কিছু না জানায়নি সে। বলেছিল, ‘‘খুব শিগগির বাড়ি ফিরব।’’

দিন কয়েক আগে সে বাড়ি ফেরে। জানায়, মোটা টাকার কাজ দেওয়ার নাম করে নাম করে দীপা তাকে বিহারের নাচের দলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সেখানে তাকে নাচতে বাধ্য করা হয়।

বাড়ির লোকেরা বিষয়টি থানায় জানায়। পুলিশ কিশোরীকে ডেকে পাঠিয়ে পুরো ঘটনা শোনে। শুক্রবার তাকে পাঠানো হয় কল্যাণী আদালতে। সেখানে গোপন জবানবন্দি দেয় ওই কিশোরী। এদিন রাতেই দীপাকে গ্রেফতার করা হয়।

ওই স্কুলছাত্রী পুলিশকে জানিয়েছে, তার এক সহপাঠির সঙ্গে দীপার পরিচয় ছিল। সে তাকে বলেছিল, বিহারের অনুষ্ঠানে গিয়ে কাজ করলে মোটা টাকা পাওয়া যাবে। তবে কী কাজ, তা তাকে জানানো হয়নি। বিষয়টি বাড়িতে জানাতেও বারণ করেছিল দীপা।

দীপা তাকে কয়েকজনের হাতে তুলে দেয়। তাদের সঙ্গে বিহারের ছাপরা জেলার গোরাবাজার এলাকায় যায় সে। সেখানে একটা বিয়ের বাড়িতে তাকে নাচতে বাধ্য করা হয়। পরে বিভিন্ন জায়গায় মোট ছ’টি অনুষ্ঠানে নাচার পর তাকে মাত্র আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে পরে দীপার মেয়ে পাপিয়া দাসও যোগ দিয়েছিল। সে দীর্ঘদিন ধরেই বিয়ের আসরে নাচে। কার্যত সেই নাচের দল পরিচালনা করে।

পুলিশকে দীপা জানিয়েছে, যারা স্বেচ্ছায় নাচের দলে যোগ দিতে চায়, তাদেরই সে নিয়ে যায়। এমনকী, বাড়িতে জানিয়েই তাদের যেতে বলা হয়। রসুল্যাপুরের কিশোরী বাড়িতে জানিয়েই গিয়েছিল বলে সে জানিয়েছে। নাচের অনুষ্ঠান পিছু মেয়েরা তাকে ২০০ টাকা করে দেয়।

কল্যাণীর মহকুমা শাসক স্বপন কুমার কুন্ডু বলেন, “বিষয়টি উদ্বেগের। এই বিষয় নিয়ে সচেতনতা শিবির আয়োজন করার কথা ভাবছি।”

পুলিশ জানিয়েছে, এক শ্রেণীর দালালরা এলাকার দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের ‘টার্গেট’ করে। তার পরে তাদের মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে নাচের দলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। তাদের নাচ শেখানোরও ব্যবস্থা রয়েছে।

২০০৬ সালে নাচের আসরে গুলি বিদ্ধ হয়ে সুপর্ণার মৃত্যুর পরে বিষয়টি নিয়ে প্রচুর হইচই হয়েছিল। বিহারে নাচতে যাওয়া কিশোরীরা জানিয়েছিল, নাচের আসরে তাদের উপরে প্রচুর অত্যাচার হয়। গায়ে মদ ঢেলে দেওয়া, জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া তো রয়েইছে। কখনও কখনও আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে। গণ্ডগোল হলে বা ক্ষমতা জাহির করার জন্য গোলাগুলিও চলে। সুপর্ণার মৃত্যুর পর জেলার পুলিশ-প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা জানিয়েছিল। কিন্তু অবস্থা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই যে রয়ে গিয়েছে, এই ঘটনা তা আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chakdaha Girl Trafficking Arrested
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE