তাঁর বিরুদ্ধে তোলা আদায়ের অভিযোগ ওঠা ‘সুবিদিত’। একাধিক জুলুমবাজির অনুযোগও রয়েছে। তৃণমূলের জেলা নেতারাও মেনে নিচ্ছেন— ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই ক্রমাগত দলের মুখ পোড়াচ্ছিলেন তিনি।’’
দিন কয়েক আগে দুই টোটো চালককে মারধর করে টাকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে শেষ পর্যন্ত সোমবার দুপুরে গ্রেফতার করা হল কৃষ্ণনগরের টোটো ড্রাইভারস অ্যসোসিয়েশনের সভাপতি তপন কুণ্ডুকে। আজ, মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে।
গুন্ডামি-তোলাবাজি যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, এ কথা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোধ্যায়। পুলিশকে সরাসরিই জানিয়েছিলেন— ‘‘এমন অভিযোগ পেলে, দলের রং না দেখে গ্রেফতার করুন।’’ সে বার্তা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দলের শীর্ষ নেতারা।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সে কারণেই তপনের বিরুদ্ধে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে, তার পরেও তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশ তপনের পাশে থাকারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এঁরা গোটা ঘটনার মধ্যে ‘চক্রান্ত’ দেখছেন।
তৃণমূলের অন্দরে তপন বরাবরই কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান অসীম সাহার অনুগামী বলে পরিচিত। শনিবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরেও পুরপ্রধান দাবি করেছিলেন, তিনি নির্দোষ। এ দিনও তিনি ফের দাবি করেন, “আমি এখনও বলছি, তপন নির্দোষ। আদালতে সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে।”
তা হলে কি এই সরকারের পুলিশ নির্দোষদের গ্রেফতার করে? পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়ার বক্তব্য, “নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই ওঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তবে অসীম দাবি করেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ চাপে পড়ে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে।”
কিন্তু কার চাপে?
কেউ সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর দেননি। তবে কৃষ্ণনগর (উত্তর) কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক অবনীমোহন জোয়ারদারের সঙ্গে পুরপ্রধানের ‘সুসম্পর্ক’ সকলেরই জানা। আগেও একাধিকবার দু’জনের লড়াই প্রকাশ্যে এসেছে। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, বিপদ বুঝে এ দিন সকালেই তপন হাজির হয়েছিলেন বিধায়কের কাছে। কিন্তু সেখানে আশ্বাস না পেয়ে ফিরে আসতে হয়। বিধায়কের দাবি, “তপন কুণ্ডু দীর্ঘদিন ধরেই তোলা তুলছিল। এই ধরনের লোকেদের যে আমাদের দলে ঠাই হবে না, পরিষ্কার করে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সকালে ও আমার কাছে এসেছিল। তাড়িয়ে দিয়েছি।”
বছরখানেক আগেই মনসুর শেখ নামে কৃষ্ণনগরের হাটখোলার এক টোটো চালক তপনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু তাতে তাঁর দৌরাত্ম্য কমেনি, বরং বেড়েই চলছিল বলে অভিযোগ
টোটো চালকদের একটা বড় অংশের। তাঁদের দাবি, মাসে পাঁচশো টাকা তোলা নেওয়া থেকে সংগঠনের সদস্য চাঁদা, রক্তদানের চাঁদার মতো নানা ছুতোয় টাকা আদায় করা হত।
তপন যে শুধু টোটো ইউনিয়নের সম্পাদক তা নন, তিনি আবার আইএনটিটিইউসি ইস্টার্ন রেলওয়ে (শিয়ালদহ ডিভিশন) হকার্স ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর শাখা সম্পাদকও। রেলের হকারদের উপরেও জুলুম শুরু হয়েছিল বলে একাধিক বার অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, সেই সব অভিযোগ সংগঠনের নেত্রী দোলা সেনের কানেও গিয়ে পৌঁছেছিল। বছরখানেক আগে কৃষ্ণনগরে দলীয় সম্মেলনে তিনি ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মাসখানেক আগে ফের সম্মেলন করে তাঁকে একই পদে ফিরিয়ে
আনা হয়। গত রবিবার, দোলের দুপুরেই সংগঠনের প্রাক্তন সম্পাদককে বেধড়ক মারধর করারও অভিযোগ রয়েছে তপনের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম অবস্থায় তিনি শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে চিকিতসাধীন।
পুরপ্রধান লড়ে গেলেও এ বার আর তপনের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না আইএনটিটিইউসির জেলা নেতাদের বড় অংশই। সংগঠনের জেলা সম্পাদক সুনীল তরফদার বলেন, “শ্রমিকদের কাছ থেকে কেউ কোনও ভাবেই
টাকা তুলতে পারে না। যদি কেউ সেটা করে থাকে, প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।”