বিষয় খুচরো। কিন্তু সমস্যা ক্রমে বড় আকার নিচ্ছে। কোথাও খুচরো নেওয়ার সময় বেঁকে বসছেন ক্রেতা। কখনও বিক্রেতা বলছেন, ‘‘নোট দিন না মশাই। আমি খুচরো ফেরত দিচ্ছি।’’ নবদ্বীপে যেমন খেয়াঘাটে কাজ করা শ্রমিকেরা খুচরোয় মজুরি না নেওয়ায় বিপাকে জলপথ পরিবহণ সমিতির কর্তারা। কখনও কখনও খুচরো বচসা গড়াচ্ছে হাতাহাতি পর্যন্ত।
পরিস্থিতি সামাল দিতে এ বার উদ্যোগী হল নদিয়ার বেশ কয়েকটি থানার পুলিশ। কোনও থানা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করতে শুরু করে দিয়েছে। কোনও থানা ব্যবসায়ী ও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করছেন। নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলছেন, “কোনও কয়েনই বাতিল হয়নি। কারও বিরুদ্ধে কয়েন না নেওয়ার অভিযোগ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সেই মতো প্রচার শুরু করেছে শান্তিপুর থানা। তারা রীতিমতো থানার ফোন নম্বর দিয়ে প্রচারে তারা বলছে, কেউ কয়েন নিতে না চাইলে থানায় ফোন করে অভিযোগ জানান। সমস্যাটা একই রকম মুর্শিদাবাদেও। সেখানেও কয়েন নিয়ে নাজেহাল ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই।
খুচরো সমস্যায় খেয়া পারাপার বন্ধ হওয়ার উপক্রম নবদ্বীপে। ঘাট কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি দিতে চান খুচরোয়। শ্রমিকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা পারিশ্রমিক নেবেন নোটে। নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির কর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকার খুচরো জমে গিয়েছে। তাই মজুরি বা অন্য খাতে খরচের জন্য তাঁদের এখন খুচরোই ভরসা।
গঙ্গার পূর্ব পাড়ে মায়াপুর হুলোর ঘাট কিংবা স্বরূপগঞ্জের রেলবাজার ঘাট থেকে যাত্রীদের নৌকায় উঠতে হয় বাঁশের মাচা দিয়ে। নবদ্বীপে গঙ্গা-জলঙ্গি মিলিয়ে ছ’টি খেয়াঘাটের মধ্যে ওই ঘাটগুলিতে এখনও অস্থায়ী জেটি দিয়েই নৌকা চলাচল করে। বছরের বিভিন্ন সময়ে জলের উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাচা ওঠানো-নামানো হয় যাত্রীদের সুবিধার্থে। বর্ষার সময়ে প্রায় প্রতি দিনই মাচার উচ্চতার হেরফের করতে হয় ঘাট কর্তৃপক্ষকে। এ বারেও নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি এ বারে সেই কাজটা করাতে গিয়ে বিপাকে। শ্রমিকেরা খুচরো নিতে চাইছেন না। নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির সম্পাদক অলোক মণ্ডল বলছেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে খুচরো জমতে জমতে আমাদের কাছে ১৮ লক্ষ টাকার খুচরো রয়েছে। কোনও ব্যাঙ্কই খুচরো নিচ্ছে না। এই বিপুল পরিমাণ খুচরো নিয়ে আমরা কী করব বুঝতে পারছি না।”
দুই জেলায় ভিখিরিরা একটা নতুন পথ বের করেছেন। তাঁরা কোথাও পাঁচ জন কোথাও দশ জন একসঙ্গে বেরোচ্ছেন। ভিক্ষা নিচ্ছেন পাঁচ টাকার কয়েন বা দশ টাকার নোটে। তাঁরা সেই টাকায় ভাগাভাগি করে জিনিস কিনে নিচ্ছেন। ভাতজাংলার বছর সত্তরের এক বৃদ্ধা বলছেন, “এ ছাড়া তো আর পথ নেই। কী সমস্যা বলুন তো?’’
দিন কয়েক আগে সিগারেট কেনা নিয়ে কৃষ্ণনগরের পোস্ট অফিস মোড়ে চরম বচসা বেধে গিয়েছিল। সিগারেট কেনার সময় ক্রেতা পাঁচ টাকার কয়েন দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এক টাকার কয়েন নিতে রাজি নন। কথায় কথা বাড়তে বাড়তে এক সময় মুশকিল আসান করে দেন ওই সিগারেট বিক্রেতা। হাতে এক টাকা দামের একটা লজেন্স ধরিয়ে বলেন, ‘‘মুখ মিষ্টি করে এ বার মাথা ঠান্ডা করুন।’’ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাঁরা খুচরো নিলেও ক্রেতা ও ব্যাঙ্ক নিতে চাইছে না। তাতেই সমস্যা বাড়ছে। নদিয়া জেলার লিড ব্যঙ্কের ম্যানেজার সুগত লাহিড়ি বলছেন, “সকলে কয়েন নিতে বাধ্য। তালিকায় ব্যাঙ্কও আছে। পরিষেবা যাতে বিঘ্নিত না হয় তার জন্য অল্প করে জমা দিন।” মুর্শিদাবাদের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার অমিত সিংহ বলছেন, “বিষয়টি নিয়ে সকলকে আমরা সচেতন করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy