Advertisement
২৮ মার্চ ২০২৩

ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনে বাড়ছে ছাত্রীদের হাজিরা

প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলে কোনওদিন ন্যাপকিন সরবরাহের জন্য ভেন্ডিং মেশিন বা ব্যবহৃত ন্যাপকিন পুড়িয়ে ফেলার যন্ত্র বসতে পারে তা কল্পনাতীত ছিল ছাত্রীদের। ফলে, তাদের আত্মবিশ্বাসটাই এক লাফে দ্বিগুণ হয়েছে।

মেশিনে কয়েন দিলে মিলবে ন্যাপকিন। —ফাইল চিত্র।

মেশিনে কয়েন দিলে মিলবে ন্যাপকিন। —ফাইল চিত্র।

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০১:১৮
Share: Save:

মাস খানেক আগে পর্যন্ত অধিকাংশ কিশোরী ছাত্রী নিয়ম করে প্রতি মাসের কয়েকটা দিন স্কুলে আসত না। ছুটি নিয়ে বাড়িতে কাটাত। এখন ‘শরীর খারাপ’-এর সেই দিনগুলিতে তারা স্কুল আসছে। কারণ, মাসের ওই বিশেষ দিনগুলিতে যাতে তারা সাবলীল ভাবে স্বচ্ছন্দে ক্লাস করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলে কোনওদিন ন্যাপকিন সরবরাহের জন্য ভেন্ডিং মেশিন বা ব্যবহৃত ন্যাপকিন পুড়িয়ে ফেলার যন্ত্র বসতে পারে তা কল্পনাতীত ছিল ছাত্রীদের। ফলে, তাদের আত্মবিশ্বাসটাই এক লাফে দ্বিগুণ হয়েছে। ভেঙেছে লজ্জা আর অস্বস্তির দেওয়াল। এমনকী কিশোরীরা এখন খোলাখুলি ঋতুকালীন সমস্যা, শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করার জোর পাচ্ছে।

শিক্ষকেরাও খুব খুশি। আগে যেখানে প্রতি মাসে গাদা-গাদা ছুটির দরখাস্ত জমা পড়ত। এখন তার কিছুই হচ্ছে না।

জেলার প্রথম স্কুল হিসেবে বহরমপুরের হিকমপুর হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসিয়েছিল। তার পরে ডোমকল বালিকা বিদ্যালয় এবং লালগোলা লস্করপুর হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ওই মেশিন বসিয়েছেন। স্কুল উন্নয়ন খাতের টাকায় ওই যন্ত্র বসানো হয়েছে। হিকমপুর হাইস্কুল আবার ভেন্ডিং মেশিনের পাশাপাশি ব্যবহৃত ন্যাপকিন পোড়ানোর যন্ত্রও কিনেছে। পাঁচ টাকার কয়েন যন্ত্রে ফেললে একটি ন্যাপকিন বের হবে।

Advertisement

লালগোলা লস্করপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘‘পিছিয়ে পড়া এলাকার কিশোরীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসা উচিত। মেয়েদের শরীর খারাপের দিনগুলিতে তাদের সঠিক খাওয়াদাওয়া, শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। আর জরুরি কাপড়ের বদলে ন্যাপকিনের ব্যবহার। এটা যদি স্কুল না-বোঝে, তা হলে তারা মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করবে কী করে!’’

তবে জেলার অনেক স্কুলই এখনও এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তারা মনে করছে, ন্যাপকিন নিয়ে কিছু করাটা স্পর্শকাতর বিষয় হবে। স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। এ ব্যাপারে মুর্শিদাবাদ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী বিশ্বাস দে বলেন, ‘‘প্রতিটি ছাত্রীকে স্কুলে প্রতি দিন ছ’ঘন্টা কাটাতে হয়। শরীর খারাপের দিনগুলি ব্যবহারের উপযুক্ত সামগ্রী না-পেলে তারা বাড়িতে কাটাতে বাধ্য হয়। প্রত্যন্ত এলাকার বা গ্রামের স্কুলের অনেক ছাত্রীরই দামি ন্যাপকিন কেনার সামর্থ থাকে না। সেখানে স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি তাদের কম টাকায় সেই স্বাচ্ছন্দ দিতে পারে, তা হলে ছাত্রীরাও নিয়মিত হাজিরায় উৎসাহিত হবে।’’

মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাসের মতে, ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতার জন্য কাপড়ের ব্যবহার এড়ানো উচিৎ। কারণ, বার বার ধুয়ে-মেলে আবার ব্যবহারের প্রক্রিয়ায় সংক্রমণের প্রবল আশঙ্কা থাকে। কিন্তু গ্রামের মহিলাদের মধ্যে ন্যাপকিন ব্যবহারের অভ্যাস নেই।

তিনি জানান, তার চেয়েও বড় কথা, বাজারে ন্যাপকিন যে দামে মেলে তা সাধারণ গ্রামের মহিলাদের নাগালের বাইরে। স্কুলে যন্ত্র বসলে ন্যাপকিন কম দামে কিনতে পারার পাশাপাশি মেয়েদের মধ্যে ন্যাপকিন ব্যবহারের সু-অভ্যাস গড়ে উঠবে এবং সংক্রমণ অনেকাংশে কমে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.