ধান কিনতে গাঁ উজাড় করেও সরকারি গোলা আর ভরছে না!
খাদ্য দফতরের আশ্বাসের জোয়ারে কামতি নেই— গত বছরের তুলনায় সহায়ক মূল্য বাড়ানো হয়েছে ৬০ টাকা। বাড়ানো হয়েছে ধান কেনার ঊর্দ্ধসীমাও। দাম মেটানোর পদ্ধতিও ‘মসৃণ’ বলে দাবি করছেন কর্তারা, সরাসরি চাষিদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে টাকা।
কিন্তু সে হাতছানিতে সাড়া দিলে তো! নদিয়া এবং পড়শি মুর্শিদাবাদ জেলায় সিংহভাগ চাষি তাই সরকারি বিক্রয়কেন্দ্রের রাস্তা না মাড়িয়ে ফড়ের উঠোনেই পা রাখছেন।
যার ফল, লক্ষ্যমাত্রা দূরে থাক, এখনও গতবারের অর্ধেক ধানও কিনে উঠতে পারেনি খাদ্য দফতর।
চাষিরা মুখের উপরে জানিয়ে দিচ্ছেন— সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করব কেন? ব্যাঙ্ক থেকে চাহিদা মতো নগদও মিলছে না। দাম কম হলেও, স্থানীয় আড়তদারদের থেকে মিলছে তো নগদ টাকা
এই অবস্থায় আজ, শনিবার কৃষ্ণনগরে আসার কথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। তিনি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
নদিয়া খাদ্য দফতরের হিসেব, গত বছর ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ২৫হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছিল। এবারে সেই পরিমাণ মাত্র ১০হাজার মেট্রিক টন।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের মতে, নোট বাতিলের কারণেই এ বার চাষিরা সরকারি ধান কেনা থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। গতবার পর্যন্ত চেকে ধানের দাম মেটানো হয়েছিল। এ বার ধানের দাম সরাসরি চাষিদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, ব্যাঙ্ক চাষিদের প্রয়োজন মতো নগদ দিতে পারছে না।
আবার অনেক চাষির সমবায় সমিতি ছাড়া অন্য ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো যাচ্ছে না। ফলে, সেই সব চাষিরা সরকারি কেন্দ্রে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। স্বাভাবিকভাবেই ধান কেনার পরিমাণ কমেছে। কীভাবে তা বাড়ানো যাবে, তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে জেলা প্রশাসনের কপালে।
নদিয়া জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা আবার জানাচ্ছেন, চাষিদের সুবিধার জন্য এক দিনে ৩০ কুইন্ট্যাল থেকে ধান কেনার ঊর্দ্ধসীমা ৪৫ কুইন্ট্যাল করা হয়েছে। সারা মরসুমে এক জন চাষি ৯০ কুইন্টাল ধান সহায়ক মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। যা শুনে চাপড়ার এক চাষি বলছেন, ‘‘ভারী হল! এত বাধ্যবাধকতা মেনে ধান বেচা যায়!’’
ছবিটা একইরকম মুর্শিদাবাদে।সেখানে এ বার ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। কিন্তু, এখন পর্যন্ত ২৬ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে। জেলার ২১টি কৃষক বাজার ছাড়াও বিভিন্ন পঞ্চায়েত অফিস এবং অন্যান্য এলাকায় ক্যাম্প করে ধান কেনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তবে চাষিদের অভিযোগ, বিভিন্ন এলাকায় এখনও ক্যাম্প শুরুই হয়নি।
জেলা খাদ্য নিয়ামক অরবিন্দ সরকার জানাচ্ছেন, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাষিরা ধান বিক্রি করতে পারবেন। বলছেন, ‘‘আশা করছি তার মধ্যে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে।’’ সে কথা তাঁরা শুনলে তো!
নদিয়ার আদিত্যপুরের চাষি শুকদেব গোস্বামী জানান, গত বছর খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণগঞ্জে ধান বিক্রি করতে যেতে হয়েছিল। বলছেন, ‘‘তার উপর, প্রমাণপত্র দাও, নাম রেজিস্ট্রেশন করাও বিস্তর ঝক্কি! কে ও পথ মাড়ায়!’’
সহায়ক মূল্যের বিক্রয়কেন্দ্র তাই দুপুর রোদের মাছি তাড়াচ্ছে দুই জেলায়, আর এই সুযোগে চাষিদের উঠোনে ফড়েদের বর্গি হানা চলছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy