Advertisement
১০ মে ২০২৪

অসময়ে অনায়াস প্রাপ্তিযোগ

গোঁফের রেখা এখনও স্পষ্ট নয়। কারও থুতনিতে সামান্য দাড়ির আভাসে উপচে পড়ছে অহঙ্কার। ফুলপ্যান্টে এখনও অভ্যস্ত নয় তাদের অনেকেই। তবু, কাউন্টারের ওপারে দাঁড়িয়ে বয়ঃসন্ধির ভাঙা গলা নিয়ে তারা চেয়ে নিচ্ছে— ‘একটা হাফ ভদকা দিন তো!’ কিংবা নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের নাম করে অর্ডার দিচ্ছে, রম, হুইস্কি, বিয়ারের।

অলঙ্করণ: মণীশ মৈত্র

অলঙ্করণ: মণীশ মৈত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০১:০৯
Share: Save:

গোঁফের রেখা এখনও স্পষ্ট নয়। কারও থুতনিতে সামান্য দাড়ির আভাসে উপচে পড়ছে অহঙ্কার।

ফুলপ্যান্টে এখনও অভ্যস্ত নয় তাদের অনেকেই। তবু, কাউন্টারের ওপারে দাঁড়িয়ে বয়ঃসন্ধির ভাঙা গলা নিয়ে তারা চেয়ে নিচ্ছে— ‘একটা হাফ ভদকা দিন তো!’ কিংবা নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের নাম করে অর্ডার দিচ্ছে, রম, হুইস্কি, বিয়ারের।

নির্লিপ্ত মুখে খাঁচার ওপারে দোকানিও এগিয়ে দিচ্ছেন সেই ‘মহৌষধি’। কলকাতা থেকে কৃষ্ণনগর কিংবা জলঙ্গি থেকে জঙ্গিপুর ছবিটার ফারাক নেই কিছু।

আর ‘অপ্রাপ্তবয়সে’ সেই প্রাপ্তিযোগই ঘটিয়ে দিচ্ছে নানা অঘটন।

যেমনটা ঘটেছে কলকাতায়! মদ, মাত্রাছাড়া হইচই এবং মৃত্যু!

এটাই কি ভবিতব্য ছিল কলকাতার বছর সতেরোর আবেশ দাশগুপ্তের? এটাই কি ভবিতব্য আবেশের মতো জেলার আরও অসংখ্য কিশোর-কিশোরীদের?

শনিবার টালিগঞ্জের ওই কিশোরের অকাল মৃত্যু উস্কে দিচ্ছে এমন অসংখ্য প্রশ্ন। উদ্বিগ্ন অভিভাবক থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ সকলেই।

তবে কৃষ্ণনগরের মনে এখনও টাটকা ২০১৪ সালের মার্চ মাসের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি। এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল একাদশ শ্রেণির ছাত্র অতনু মণ্ডল। তারপর সে আর বাড়ি ফেরেনি। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের ওই মেধাবী ছাত্র খুন হয়েছিল মদের ঠেকে।

মদ খেয়ে গণ্ডগোল, অপরাধ কিংবা খুনের একাধিক ঘটনা ঘটেছে দুই জেলায়। জেলা পুলিশের এক কর্তাও কবুল করছেন, ‘‘নাবালকদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। একাধিক খুনের ঘটনায় জড়িত নাবালকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। আর প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনায় অনুঘটকের কাজ করেছে মদ!’’

কিন্তু আবগারি আইন বলছে, দোকান থেকে মদ কিনতে হলে বয়স হতে হবে ২১ বছর। সেখানে নাবালকেরা মদ কিনছে কী ভাবে?

অভিযোগ উঠছে আবগারি দফতরের কোনও নজরদারি না থাকার কারণেই অল্পবয়সীদের হাতে অনায়াসে পৌঁছে যাচ্ছে মদের বোতল। মুর্শিদাবাদের আবগারি দফতরের আধিকারিক দেবাশিস বিশ্বাস বলছেন, ‘‘মদের দোকানে কমবয়সীদের মদ বিক্রির অভিযোগ পেলেই সেই দোকান মালিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। গত মার্চ মাসেও আমরা এই অপরাধে একটি মদের দোকান এক মাস বন্ধ করে দিয়েছিলাম।’’

বহরমপুর আইসিআই স্কুলের প্রধানশিক্ষক জয়ন্ত দত্ত বলছেন, ‘‘বাড়ি ফাঁকা থাকলে অনেকেই বন্ধুবান্ধবদের ডেকে নেয়। মনোরঞ্জনের জন্য অনেক সময় জোগাড় করা হচ্ছে মদ। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মেলামেশা করে তাদের সচেতন না করলে এই বিপদ আরও বাড়বে।’’

এই মদ যদি না শেষ হয়?

‘‘ফল হবে ভয়ঙ্কর। আবেশদের সংখ্যাটা আরও বাড়তেই থাকবে।’’ সমস্বরে বলছে দুই জেলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Minors Liquors without any Hazard Alcohol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE