Advertisement
E-Paper

হঠাৎ নেই হয়ে গেল তিন পড়ুয়া

এক সকালে তিন তিনটে বাচ্চা ‘নেই’ হয়ে গেল। সকালে স্কুলে বেরিয়েছিল। হাসিমুখে। ফিরে এল হাসপাতাল ঘুরে। নিথর হয়ে। দোষ কার, কার জন্য তিন তিনটে তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেল তার হিসেবনিকেশ পরে। তিন পরিবারের ছেলে হারানোর যন্ত্রণাটাই বরং কুরে কুরে খাচ্ছে অরঙ্গাবাদকে।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০১:২৮
উপর থেকে, অঙ্কুর সরকার, সৌম্যক জৈন ও বিজয়দীপ সরকার।—নিজস্ব চিত্র

উপর থেকে, অঙ্কুর সরকার, সৌম্যক জৈন ও বিজয়দীপ সরকার।—নিজস্ব চিত্র

এক সকালে তিন তিনটে বাচ্চা ‘নেই’ হয়ে গেল। সকালে স্কুলে বেরিয়েছিল। হাসিমুখে। ফিরে এল হাসপাতাল ঘুরে। নিথর হয়ে।

দোষ কার, কার জন্য তিন তিনটে তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেল তার হিসেবনিকেশ পরে। তিন পরিবারের ছেলে হারানোর যন্ত্রণাটাই বরং কুরে কুরে খাচ্ছে অরঙ্গাবাদকে।

অরঙ্গাবাদ বাজারের ছেলে-বুড়ো সকলের খুব প্রিয় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র অঙ্কুর। বাবা অরবিন্দ সরকার মুদি ব্যবসায়ী। সেই দুরন্ত ছেলেটা আর নেই তা মেনে নিতে পারছে না স্থানীয়েরা। বাড়িতে সাত সকালেই খবরটা পৌঁছোতেই বাবা-মা ছুটে গিয়েছেন তারাপুর হাসপাতালে। দুপুর পর্যন্ত একমাত্র ছেলের দেহের পাশে ঠায় বসে।

পেশায় স্কুলশিক্ষক বিভাস সরকারের একমাত্র ছেলে বিজয়দীপ। একরত্তি সেই ছেলের মৃত্যুতে তাঁতিপাড়ার ঘরে ঘরে আর্তনাদের রোল ওঠে। বিড়ি পাতার ব্যবসায়ী অরুণ জৈন ওরফে পিন্টুর তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সৌম্যক। সেই সৌম্যকের দেহ যখন পাড়ায় ফিরল সারা জৈনপল্লি জুড়ে তখন নেমে এসেছে শ্মশানের নিস্তব্ধতা।

বিড়ি শিল্পের কর্মমুখর শহর অরঙ্গাবাদ এ রকম শোকের সাক্ষী বড় একটা হয়নি অতীতে।

অরঙ্গাবাদ থেকে মেরেকেটে ২০ কিলোমিটার দূরে ফরাক্কা। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া দুই শহর। সেখানকার স্কুলে পড়াশুনো করে অরঙ্গাবাদের শ’খানেক ছেলেমেয়ে। সকাল সওয়া ৬টা নাগাদ বেরিয়ে গিয়ে দুপুর ১টা নাগাদ বাড়ি ফেরা। এসে স্নান, খাওয়া দাওয়া। নৈমিত্তিক এই রুটিনে অভ্যস্ত সকলেই।

শিক্ষক বিভাসবাবুর আর্তনাদ, “এখন কাকে নিয়ে বাঁচব। চকোলেট বায়না করার মতো যে আর কেউ রইল না।”

ভরদুপুরে জঙ্গিপুর পুলিশ মর্গে যখন কফিনে মোড়া তিন শিশুর দেহ ঢুকছে তখনও বাঁধভাঙা ভিড় বাইরে। তিন জনের পরনে সাদা জামা, সাদা প্যান্ট। কোমরে সবুজ বেল্ট। স্কুলের পোশাক। মাথা থেকে পা পর্যন্ত রক্তে ভেজা। ময়না তদন্তের শেষে বাড়ি ঘুরে বিজয়দীপ ও অঙ্কুরের দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাড়ির পাশেই বাজিতপুরের শ্মশানে। সৌম্যকের শেষকৃত্য হয়েছে জগতাই গ্রামের শ্মশানে। শহরের কয়েক’শ মানুষের চোখের জলে শেষকৃত্য গড়িয়েছে রাত পর্যন্ত। কে নেই সেখানে?

তিন পরিবারেরই অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বিড়ি ব্যবসায়ী জঙ্গিুপুরের তৃণমূল প্রার্থী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, “বিভাস বা পিন্টুর ছেলে দেখা হলেই কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ত। এখনও ভাবতে পারছি না, দু’হাতে ধরে যাদের নিয়ে হেসে খেলে বেড়ানোর কথা তাদের শেষকৃত্যে হাজির থাকতে হল আমাকে।”

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হুমায়ূন রেজা বলেন, “সবার পরিবারই আমার খুব কাছের। সৌম্যকের দাদু নির্মল আমার সহপাঠী। তাই শ্মশানে যেতে পারিনি। কি দেখব গিয়ে, নিজের নাতিদের জ্বলন্ত চিতা কি দেখার জিনিস?”

মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পেয়েই মর্গে ছুটে গেছিলেন তৃণমূলের সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস। বলেন, “অতীতে এত শোক পাওয়ার নজির বড় একটা নেই অরঙ্গাবাদের। কী সান্ত্বনা দেব, কাকেই বা দেব? সারাক্ষণ চোখের সামনে ওদের মুখগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে।”

শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে ফরাক্কার ওই স্কুলের। বৃহস্পতিবার নীরবতা পালন করা হয়। স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক সুশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলে মধ্যে সারাক্ষণ ছুটে বেড়াত। সেই ছেলেগুলোকে যখন হাসপাতালে মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখলাম দুটো ছবি মেলাতে পারলাম না।’’ স্কুলের অধ্যক্ষ কৃষ্ণকিশোর জয়সবাল বলছেন, “এ ভাবে ওদের চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না।’’

Students Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy