Advertisement
০৪ মে ২০২৪

পানার জালে বন্দি নৌকা, বন্ধ ফেরি

ঘড়িতে তখন সাড়ে দশটা হবে। মায়াপুর খেয়াঘাটে বেশ ভিড়। নগদ কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন জীবনবিমার এজেন্ট অজয় ভট্টাচার্য। নদী পার হয়ে অফিসে গিয়ে টাকা জমা দেবেন।

কচুরিপানা কাটিয়ে চলছে নৌকা। জলঙ্গি থেকে গঙ্গায় পড়ার মুখে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

কচুরিপানা কাটিয়ে চলছে নৌকা। জলঙ্গি থেকে গঙ্গায় পড়ার মুখে সুদীপ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০২:৪৬
Share: Save:

ঘড়িতে তখন সাড়ে দশটা হবে। মায়াপুর খেয়াঘাটে বেশ ভিড়। নগদ কয়েক লক্ষ টাকা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন জীবনবিমার এজেন্ট অজয় ভট্টাচার্য। নদী পার হয়ে অফিসে গিয়ে টাকা জমা দেবেন।

কিন্তু ঘড়ি কাঁটা ঘুরে বেলা পৌনে একটার ঘর ছুঁয়ে ফেলল, মায়াপুর খেয়াঘাটে তখনও চাপা উত্তেজনা, নৌকা নড়ছে না।

শেষমেশ বাকিদের মতোই হতাশ হয়ে ফিরতে হয় অজয়বাবুকে। শুধু তাঁকেই নয়, গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নবদ্বীপ-মায়াপুর রুটে এ ভাবেই বারবার আটকে পড়ছেন নিত্যযাত্রী থেকে পর্যটক। কারণ একটাই— নদী-ভরা পানার দাপটে নৌকা নড়ছে না।

জলঙ্গি নদীতে ভেসে আসা পানার দাপটে মায়াপুর খেয়াঘাটের স্থায়ী জেটি অকেজো হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে নবদ্বীপ-মায়াপুর রুটে খেয়া চলাচল ব্যবস্থা সাময়িক ভাবে জলঙ্গি নদী থেকে সরিয়ে পার্শ্ববর্তী গঙ্গার ঘাটে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন খেয়াঘাট কর্তৃপক্ষ। সকাল থেকেই জলঙ্গি নদীতে প্রচুর পরিমাণে পানা আসতে শুরু করে। দুপুরের পর থেকে গোটা জলঙ্গি নদী পানায় ঢাকা পড়ে যায়। পরিণতিতে নবদ্বীপ, মায়াপুর, স্বরূপগঞ্জের মধ্যে নৌকা চলাচল সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পানার বহর দেখেই অভিজ্ঞ মাঝিরা মন্তব্য করেন এ ভাবে পানা আসতে থাকলে খেয়া পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শেষ অবধি তাঁদের আশঙ্কাই সত্যি হয়। ভেসে আসা পানার দাপটে নবদ্বীপ-মায়াপুর এবং মায়াপুর-স্বরূপগঞ্জ সন্ধ্যা ছটা নাগাদ নবদ্বীপ-মায়াপুর রুটে খেয়া চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন ঘাট কর্তৃপক্ষ।

বর্ষার ভরা নদীতে প্রতিবারই এই সময় জলঙ্গি দিয়ে অল্পবিস্তর পানা ভেসে আসে বলে জানান নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির সম্পাদক অলোক মণ্ডল। ‘‘কিন্তু এ বারের মতো এত ঘন পানা কোনও বারই হয়নি। পানার চাপ এত বেশি যে তা জলঙ্গি উপচে গঙ্গার পূর্ব কূল বরাবর ভেসে চলেছে। যার ফলে নবদ্বীপ-স্বরূপগঞ্জ রুটেও খেয়া চলাচল ব্যাহত হচ্ছে,’’ বলেন তিনি। সকালের দিকে দীর্ঘক্ষণ সময় নিয়ে যদিও বা দু’একটা খেয়া চলছে, সন্ধ্যার পরে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির কর্তারা।

প্রথমত, পানার প্রবল চাপ ঠেলে নৌকা এগোনোর পথ পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, পনেরো মিনিটের পথ পার হতে আধ ঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। নৌকা চলাচলের নির্ধারিত সময়সূচী মেনে চলা যাচ্ছে না। তৃতীয়ত, জোর করে চলাচলা করতে গিয়ে যাত্রীবোঝাই নৌকার মোটরের পাখা এবং শ্যাফট জলের নিচে পানার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে মাঝনদীতে নৌকা আটকে বিশ্রি কাণ্ড। নিয়ন্ত্রণহীন সেই নৌকা ভেসে যাচ্ছে দু’তিন কিলোমিটার পর্যন্ত। সেই সব নৌকা ফিরিয়ে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন মাঝিরা। চতুর্থত, বর্ষার ভরা নদীর মাঝে নৌকা থেমে গেলেই আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন যাত্রীরা। অনেকেই আগুপিছু না বুঝে মারতে যাচ্ছেন মাঝিদের। সব চেয়ে বড় কথা একের পর এক নৌকা অকেজো হয়ে যাচ্ছে।

নবদ্বীপে গঙ্গা এবং জলঙ্গি নদী দিয়ে মোট তিনটি রুটে ছ’টি জেটি দিয়ে ফেরি চলাচল করে। নবদ্বীপ ঘাটের দু’টি জেটি থেকে নবদ্বীপ-মায়াপুর এবং নবদ্বীপ-স্বরূপগঞ্জ রুটে নৌকা চলাচল করে। অন্য দিকে মায়াপুরের হুলোর ঘাট থেকে জলঙ্গি নদীপথে মায়াপুর-স্বরূপগঞ্জ রুটে নৌকা চলাচল করে। কিন্তু পানার জন্য শনিবার মায়াপুর থেকে নবদ্বীপে আসতে জলঙ্গির বদলে গঙ্গার উপর একটি অস্থায়ী জেটি করা হয়েছে। নৌকার মাঝিরা জানাচ্ছেন, জলঙ্গি এখন খেয়া চলাচলের উপযুক্ত নয়। নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির তরফেও পরিস্থিতি সামাল দিতে মায়াপুরের দিকে একটা বিকল্প জেটির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আপাতত পানা যতক্ষণ না সরছে, ভরসা গঙ্গাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

moss ferry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE