Advertisement
E-Paper

মেয়েকে ফোন করে বললেন, দেরি হবে

সে দিন সন্ধ্যায় পঞ্চায়েত অফিস থেকে দলের সভায় যাবেন বলে সবে বেরিয়েছিলেন। পরপর গুলির শব্দ।

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫২
সমীর নাগ।

সমীর নাগ।

এলাকায় তিনি একাই ঘুরতেন। দলের কিছু তরুণ কর্মী বলেছিল, ‘দাদা এ ভাবে একা ঘোরেন কেন? আমরা সঙ্গে থাকব আপনার।’ তিনি রাজি হননি।

সে দিন সন্ধ্যায় পঞ্চায়েত অফিস থেকে দলের সভায় যাবেন বলে সবে বেরিয়েছিলেন। পরপর গুলির শব্দ। ছোটাছুটি, আতঙ্ক। খানিক পরে সকলে ছুটে এসে দেখেন, রক্তে মাখামাখি হয়ে পড়ে রয়েছেন চাকদহের দুবড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সমীর নাগ। আততায়ীরা বেপাত্তা।

২০০৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর।

পঞ্চায়েত অফিসের সামনে দিয়ে গিয়েছে চাকদহ-বনগাঁ রাজ্য সড়ক। মাস দুই হল ওই পঞ্চায়েতের দায়িত্ব নিয়েছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মী সমীর। তাঁর চুয়াডাঙার বাড়ি থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে বিষ্ণুপুর বাজার। সেখানেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে নিচ্ছিলেন তিনি। সন্ধে ৭টা ২০। তিনি জানতেনও না যে তাঁকে খুন করার জন্য তিন জায়গায় ওত পেতে রয়েছে আততায়ীরা। ভযঙ্কর মরিয়া তারা। যদি কোনও ভাবে পঞ্চায়েত অফিসের সামনে শিকার ফস্কেও যায়, অন্য জায়গায় গিয়েও তাঁকে খুন করতে হবে। তখন ভরা বাম আমল। কিন্তু দক্ষ সংগঠক সমীরের কারণে দুবড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বামেরা কার্যত দাঁড়ানোর জায়গা পাচ্ছিল না। প্রভাব পড়ছিল আশপাশের পঞ্চায়েতেও। সেই কারণেই খুনের ছক কষা হয়েছিল বলে আজও মনে করেন তাঁর স্ত্রী, তাঁর আগে দুবড়া পঞ্চায়েতের প্রধান এবং বর্তমানে হরিণঘাটার বিধায়ক নীলিমা নাগ। মনে করেন আত্মীয়বন্ধুরাও।

যে রাস্তায় খুন হন সমীর। নিজস্ব চিত্র

সে দিন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিশ্বাসপাড়ার কাটুপাড়ায় দলের সভা ছিল। সেখানে যাওয়ার জন্য পঞ্চায়েত অফিস থেকে বেরোনোর আগে এক মাত্র মেয়ে মৌসুমীকে ফোন করে তার মায়ের খবর নিয়েছিলেন সমীর। সভা থাকায় বাড়ি ফিরতে দেরি হবে বলেও জানিয়েছিলেন। মিনিট কয়েকের মধ্যে তাঁরা দেখেন, রাস্তা দিয়ে অনেকে কাঁদতে-কাঁদতে ছুটছেন। কিছুক্ষণ পরে শুরু হয় রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ।

চুয়াডাঙার বাড়িতে বসে নীলিমা বলেন, “রাস্তা দিয়ে অনেকে যখন কাঁদতে-কাঁদতে যাচ্ছে, তখনও প্রথমে বুঝতে পারিনি, কী হয়েছে। কেউ কিছু বলছিলেন না। বিষ্ণুপুর বাজারে পরিচিত অনেককে ফোন করেছিলাম। কেউ আমার ফোন ধরছিল না। পরে ঘটনার কথা জানতে পারি।’’

এখন চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির শিশু ও নারী কল্যাণ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ মৌসুমী নাগ বিশ্বাস বলেন, “বাবা মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে তাঁর দেহরক্ষী তুলে নেওয়া হয়েছিল। আমার মনে হয়, সেই কারণেই খুনিরা সুবিধা পেয়ে যায়। বাবার সে দিনের কথাগুলো আজও কানে ভাসে। বাবা আমার সঙ্গেই শেষ কথা বলেছিল।’’

সে দিনের আনন্দবাজার।

পুলিশের কাছে ন’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। এক জন জামিনে ছাড়া রয়েছে। বাকি সকলেই বেকসুর খালাস। নীলিমা বলেন, ‘‘কী বিচার পেলাম বলুন! কেউ তো সেই অর্থে সাজাই পেল না।’’

Chakdaha Murder Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy