তখনও তল্লাশি চলছে। বৃহস্পতিবার দৌলতাবাদে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
তিনি ছিলেন বাসেই, কিন্তু দুর্ঘটনার পরে আর কেউ তাঁর নাগাল পায়নি।
অত উঁচু সেতু থেকে পড়ে চোটও পেয়েছিলেন সামান্য, কিন্তু প্রথমে আহতদের তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। দুর্ঘটনার পরের দিন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে তিনি ভর্তি হন। এবং তখনই জানা যায়, বালির ঘাটের সেতুর উপর থেকে ভাণ্ডারদহ বিলে পড়ে যাওয়া বাসের ‘হেল্পার’, বছর পঁচিশের সৌমেন ঘোষ বেঁচে আছেন। তখনও জল তোলপাড় করে দেহ তল্লাশি চলছে।
জলঙ্গির সাগরপাড়া এলাকার দেবীপুরের সৌমেন ওই বাসে ডিউটি নিয়েছিলেন দিন সাতেক আগে। তার আগে অন্য বাসে কাজ করতেন তিনি। রবিবার রাতে তিনি বাসেই ছিলেন। সোমবার সকাল পৌনে ছ’টা নাগাদ করিমপুর থেকে বাস ছাড়ে। সৌমেন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বাঁ দিকটা নজর রাখছিলেন। কিন্তু সিঁড়ির নীচের ধাপে দাঁড়িয়ে থাকায় সামনে কোনও গাড়ি ছিল কি না তা তাঁর নজরে পড়েনি।
সৌমেন বলেন, “হঠাৎ বাসটা এক ঝাঁকুনি দিয়ে ডান দিকে ফুটপাথে উঠে রেলিংয়ে ধাক্কা মারে। আমার ধারণা ছিল, রেলিংয়ে আটকে যাবে। কিন্তু তা হল না। রেলিং ভেঙে জলে পড়ে গেল। হু-হু করে জল ঢুকতে শুরু করল।’’ চেষ্টা করেও তিনি দরজা খুলে বেরোতে পারেননি। শেষমেশ ভাঙা জানলা দিয়ে বেরোন। ততক্ষণে নৌকা নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন জেলেরা। তাঁরাই তাঁকে তুলে নেন।
পাড়ে উঠে কিন্তু সৌমেন আর দাঁড়াননি। সৌমেনের কথায়, “আমি যে বাসের হেল্পার, তা জেনে লোকে আমার উপরে চড়াও হতে পারে, এই ভয়ে পালিয়েছিলাম।’’ চুনাখালিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে তিনি আশ্রয় নেন। পরের দিন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে মেডিক্যাল কলেজে এসে ভর্তি হন।
দুর্ঘটনার দিনই মুখ্যমন্ত্রী আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। সেই জন্যই কি হাসপাতালে যাওয়া? সৌমেন বলেন, “আমার হাতে আর কানে চোট লেগেছিল। যন্ত্রণা হচ্ছিল। তাই আত্মীয়দের পরামর্শে পরের দিন হাসপাতালে ভর্তি হই।” বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণের টাকা তিনি পাননি। জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, ‘‘বাকি সব আহতদেরই পঞ্চাশ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। শুধু এই ছেলেটি ছাড়া। ও বাসে ছিল কি না, কতটা আহত হয়েছিল, খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy