উপহারে হাসি ফুটল মুখে। নিজস্ব চিত্র
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে টাকা আসবে ধরে নিয়ে করা বাজেট আর উন্নয়ন তহবিলের প্রায় লাখ পাঁচেক টাকায় সদস্যদের ট্রলিব্যাগ বিলি— এই দুই নিয়েই সাঙ্গ হল এবারকার মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের শেষ বাজেট। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, তার পরে ফের নতুন জেলা পরিষদ গড়া হবে।
বৃহস্পতিবার বহরমপুরে জেলা পরিষদের হলে ২০১৮-’১৯ আর্থিক বছরের বাজেট পাশ হয়। যথারীতি শেষ বাজেটে কোনও চমক নেই। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত টাকা এবং জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিল ধরে ১১০৩ কোটি ২১ লক্ষ টাকার আয় ও সমপরিমাণ খরচ দেখানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৬২৬ কোটি টাকার খরচ ধরা হয়েছে পঞ্চায়েত দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পে। এর পরেই রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রায় ২০৪ কোটি টাকা।
জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের ইনসার মণ্ডলের বক্তব্য, “এটা লোক দেখানো বাজেট। আগের বছরেও কেন্দ্র ও রাজ্য থেকে টাকা আসবে ধরে বাজেট করা হয়েছিল। অধিকাংশ টাকাই আসেনি। তবে জেলার উন্নয়নের কথা ভেবে আমরা বাজেটের বিরোধিতা করিনি।’’ একই যুক্তিতে বিরোধিতা করেননি তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত পরিষদের কংগ্রেস সদস্য, স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ মর্তুজা হোসেনও।
বাজেটের চেয়ে বেশি চমক ছিল বরং বিদায়ী সদস্যদের উপহারে— এক-এক জনের জন্য প্রায় চার হাজার টাকা দামের ট্রলিব্যাগ। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় মেয়াদ শেষে সদস্যদের উপহার দেওয়া নতুন কিছু নয়। তবে এ বার খরচের বহরটা কিঞ্চিৎ বেশি, বলছেন প্রবীণেরাই। জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিধায়ক ও সাংসদ সদস্য মিলিয়ে মোট ১১৯ জন সাধারণ সভার সদস্য। তাঁদের জন্য মোট ১৩০টি ট্রলিব্যাগ কেনা হয়েছে। এ দিন বাজেট সভায় ৯৩ জন সদস্য এসেছিলেন। দল নির্বিশেষে সকলকেই দেওয়া হয়েছে ব্যাগ। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বৈদ্যনাথ দাসের ব্যাখ্যা, “সদস্যেরা গত পাঁচ বছর ধরে এক সঙ্গে কাজ করেছেন। আগামী পঞ্চায়েত ভোটের পরে একে অপরের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ সকলে না-ও পেতে পারেন। তাই সৌজন্য হিসেবেই সামান্য উপহার দেওয়া হয়েছে।”
সিপিএমের ইনসার আলি মণ্ডল বলছেন, “জেলা পরিষদের টাকা খরচ সদস্যদের এ ভাবে ট্রলিব্যাগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না-করেই ওরা এই কাজ করেছে।” কংগ্রেসের মুর্তজা হোসেন বলেন, “আমাদের আমলে ডায়েরি-কলম দেওয়া হত। এ বারে হঠাৎ কেন ট্রলিব্যাগ দিতে গেল, তা জেলা পরিষদ যাঁরা চালাচ্ছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন।’’ ইনসার ও মুর্তজা দু’জনেই অবশ্য ট্রলিব্যাগ নিয়েছেন। তবে এ নিয়ে কথা উঠতে পারে বুঝে ইনসার পরে দাবি করেন, তাঁরা ওই ট্রলিব্যাগ ফেরত দেবেন।
জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, ব্যাগ দিতে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি অবশ্য বলেন, “কত খরচ হয়েছে, তা দেখতে হবে। এখনই বলতে পারছি না।” জেলাশাসক পি উলাগানাথনও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy