নিজস্ব চিত্র।
শনিবার সাতসকালেই নবদ্বীপের শ্রীবাসঅঙ্গন বা ফাঁসিতলা ঘাটে নরক গুলজার। মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ থেকে আসা রাসযাত্রীদের ভিড় থিক থিক করছে।
কেউ এসেছেন কাকভোরে। কেউ আবার মাঝরাতেই পৌঁছে গিয়েছেন রাসের নবদ্বীপে। সকাল সকাল গঙ্গায় স্নান সেরে দলের মহিলারা তিন ইটের উনানে ফুটিয়ে নিচ্ছেন ভাত। দু’টো মুখে দিয়েই যাতে বেরিয়ে পড়তে পারেন। যার জন্য এত কষ্ট করে আসা গৌরধামে।
এরপর তো সারাদিন কেবল পথচলা। শহরের আনাচ-কানাচ ঘুরে প্রতিমা দর্শন। চলতি পথে সামনে কোনও মন্দির দেখলে তার নাটমন্দিরে দু’দণ্ড জিরিয়ে নিয়ে ফের চরৈবেতি। এ ভাবেই বছরের পর নবদ্বীপের রাস দেখতে ওরা ঝাঁপিয়ে পড়েন। রাসের যাত্রী অমৃত মণ্ডলের ঠিকানা যদি মুর্শিদাবাদের বাসুদেবখালি তো অনিমা হাজরার বাড়ি বৈদ্যবাটী। আবার রঘু রায় এসেছেন বীরভূমের সাঁইথিয়া থেকে।
দু’বার ট্রেন বদলে অমৃত মণ্ডল নবদ্বীপে এসেছেন শনিবার সকালে। ততক্ষনে শহরের ধর্মশালা, মঠ মন্দিরের অতিথি আবাসে মানুষ উপচে পড়ছে। ঠাঁই নাই রব। একবার সাহস করে সস্তার হোটেলে খোঁজ নিয়ে ছিলেন। ভাড়া শুনে চক্ষু চড়কগাছ। ছয় বাই দশের খুপরি ঘর তিনশো টাকা। অমৃত বলেন, “বারো জন লোক ওইটুকু ঘরে আঁটে নাকি? তা ছাড়া ওতগুলো টাকা!” তাহলে উপায়? “কেন গঙ্গার ঘাটের চাতালে চাদরমুড়ি দিয়ে নামগান করতে করতেই রাত কেটে যাবে।’’
ঘাটের ভিড়ে মিশে ছিলেন নবদ্বীপের বাসিন্দা প্রবীণ অভিনেতা শঙ্কর মুখোপাধ্যায়। নাটকের প্রয়োজনে এখন পাকাপাকি ভাবে কলকাতার থাকলেও রাসের সময় প্রতিবার নবদ্বীপে আসেন শুধু ওই যাত্রীদের টানে। তাঁর কথায় “কিসের টানে যে ওই মানুষগুলো প্রতিবার এত কষ্ট করে নবদ্বীপে আসেন! পায়ে হেঁটে, রাস্তায় রাত কাটিয়ে রাস দেখে কী আনন্দ পান ওঁরা সেটাই আমার বিস্ময়।’’
উৎসব-নগরীর প্রতি পদে ওঁদের জন্যও অপেক্ষা করে থাকে বিস্ময়। কতরকমের চেনা-অচেনা দেবী প্রতিমা। তাঁদের বিশালত্ব চমকে দেয় প্রত্যন্ত গ্রামের দিনআনা, দিনখাওয়া মানুষগুলোকে।
পুজোর পর থেকেই তাঁদের বেরনোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বলছিলেন বাসুদেবখালির হরেন মণ্ডল। পাটের বাজার ভালো হলে সেবার দলটা ভারি হয়। প্রতিদলে এমন একজন থাকেন পথঘাট থেকে উৎসবের খুঁটিনাটি সব তার নখদর্পণে থাকে। মাথাপিছু দু-একশো টাকা, খোরাকি বাবদ জনপিছু দশ কেজি চাল বা পাঁচ কেজি ডাল নিয়ে বেড়িয়েছেন ওঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy