E-Paper

গ্রেস কটেজে সৃষ্টিমগ্ন ছিলেন নজরুল

দেনার দায়ে জর্জরিত এবং অসুস্থ নজরুলকে কৃষ্ণনগরে নিয়ে আসেন বন্ধু হেমন্তকুমার সরকার। ১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথমে গোলাপট্টির একটি বাড়িতে ঠাই হয় তাঁর।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৪ ১০:২০
রবীন্দ্র ভবনে পালিত হচ্ছে নজরুল জন্ম জয়ন্তী, নদিয়ার কৃষ্ণনগর।

রবীন্দ্র ভবনে পালিত হচ্ছে নজরুল জন্ম জয়ন্তী, নদিয়ার কৃষ্ণনগর। ছবি: প্রণব দেবনাথ।

সারা জীবনে প্রায় ৪০ বার বাসা বদল করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। বলা ভাল, বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সেই পঙ্‌ক্তির মতো ‘আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি একি উন্মাদ...’ আসলে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি ‘ধূমকেতু’ নজরুলকে আজীবন থিতু হতে দেয়নি। তাঁর ওই অসংখ্য বাসা বদলের কয়েকটির সাক্ষী কৃষ্ণনগর। নজরুল গবেষকদের মতে, কৃষ্ণনগরে নজরুলের বাসা বদল শেষপর্যন্ত তাঁর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বদল হয়ে ওঠে। বলা হয়, বিদ্রোহী থেকে নজরুলকে প্রেমিকে বদলে দিয়েছিল চৈতন্যের নদিয়া।

দেনার দায়ে জর্জরিত এবং অসুস্থ নজরুলকে কৃষ্ণনগরে নিয়ে আসেন বন্ধু হেমন্তকুমার সরকার। ১৯২৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথমে গোলাপট্টির একটি বাড়িতে ঠাই হয় তাঁর। এই পর্বে নজরুলের রাজনৈতিক কর্মব্যস্ততা ছিল চূড়ান্ত। ছাত্র-যুব সম্মেলন, কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলন নানা গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। নজরুল লিখলেন, ‘আমরা শক্তি আমরা বল, আমরা ছাত্রদল’ কবিতাটি। জাতীয় কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলনের উদ্বোধনী সঙ্গীত হিসাবে ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’ রচনা করলেন। উপস্থিত নেতৃবৃন্দকে হুঁশিয়ার করে গাইলেন— ‘‘হিন্দু না ওঁরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কাণ্ডারি বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।’’ বিপ্লবী নেতা অনন্তহরি মিত্র ধরা পড়তেই কৃষ্ণনগরের পরিস্থিতি বদলে গেল। চূড়ান্ত অভাব, হতাশাগ্রস্ত কবি ফের বাধ্য হলেন বাসা বদলাতে। এবারে তাঁর ঠাঁই হল কৃষ্ণনগর চাঁদসড়কের গ্রেস কটেজে।

শহরের বনেদি এলাকা ছেড়ে এলেন এমন একপ্রান্তে, যেখানে রোমান ক‍্যাথলিক ও দরিদ্র মুসলিমের বাস। ততদিনে ফিরেছে নিঃসঙ্গতা এবং অর্থকষ্ট। নিরালা-নির্জন এই এলাকায় এসে নজরুল আমূল বদলে গেলেন। দারিদ্র তাঁকে নির্মাণ করল প্রেমিক নজরুল রূপে। তিনি মেতে উঠলেন সৃষ্টিসুখের উল্লাসে। গবেষক, অধ্যাপক দেবনারায়ণ মোদক মনে করেন, “কৃষ্ণনগর নজরুলের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ মোড়। কৃষ্ণনগর বাসের প্রথম পর্বটি নজরুলের রাজনৈতিক জীবনের সব চেয়ে ব্যস্ত সময়কাল। দ্বিতীয় পর্বে তিনি যখন চাঁদসড়কের বাসিন্দা, তখন তিনি প্রকৃতই সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন। তাঁর সাহিত্য এবং সঙ্গীতজীবন উৎকর্ষতার দিকে যাত্রা শুরু করেছিল এখান থেকেই।’’ তাঁর মতে, চাঁদসড়কের সবুজ গাছগাছালিতে ঘেরা গ্রেস কটেজে প্রাকৃতিক আবহে নজরুল ডুবে যেতে পেরেছিলেন সৃষ্টি-কর্মে।

গবেষকেরা মনে করেন, সঙ্গীতকার নজরুলের জন্ম এখানেই। বাংলা ভাষায় তার আগে গজল গান সেই অর্থে ছিল না। নজরুল বাংলা গানের নতুন ধারা নির্মাণ করলেন। এক দিকে ‘মৃত্যু ক্ষুধা’ উপন্যাস যেমন লেখা হল, তেমনই ‘বাগিচায় বুলবুলি তুই’ বা ‘বসিয়া বিজনে কেন একা মনে’-এর মতো জনপ্রিয় গানের জন্ম হল গ্রেস কটেজে। শনিবার সেই গ্রেস কটেজে নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nadia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy