Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Dattapukur Blast

জিরাটেরও প্রাণ গেল, আতঙ্ক

বিরুদ্ধে তার ছেলেদের দত্তপুকুরে কাজে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন জিরাটের স্ত্রী আসনা এদিন সেই মোহন শেখকে ধরা হয় তার বাড়িতেই।

জেরাত শেখের স্ত্রী আসনা বিবি।

জেরাত শেখের স্ত্রী আসনা বিবি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
অরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৩ ০৮:০২
Share: Save:

পিংলা কাণ্ডের ক্ষত নিরাময়ের আগেই ফের পাঁচ জনের মৃত্যুর খবরে ভেঙে পড়েছে সুতির নতুন চাঁদরা গ্রাম। গ্রামে কবর খোঁড়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। ময়না তদন্তের পরে হয়তো সোমবার রাতেই মৃতদেহগুলিকে গ্রামে এনে কবর দেওয়া হবে। একটি দেহ নিয়ে যাওয়া হবে ফরাক্কা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের গুমানিতে।

জিরাট আলি ঘটনায় মারা গিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী আসনা বিবি ফোনে শোনেন তাঁর পরিবারের লোকজনের মৃত্যু সংবাদ। সোমবার সেই সব মৃতদেহ শনাক্ত করে গ্রামে আনতে রওনা দিয়েছেন বাড়ির পুরুষেরা সকালেই।

জিরাটের স্ত্রী বলেন, ‘‘রাজমিস্ত্রির কাজ দেব বলে গ্রামেরই মোহন শেখ সকলকে নিয়ে গিয়েছিল দত্তপুকুরের ওই এলাকায়। বাইরে গেলে বেশি টাকা মিলবে এই লোভেই গেছিল তারা সবাই। দিন ১৫ আগে গিয়েছে ছেলেরা। ফোনে পয়সা পাঠাতে বলেছিলাম। কিন্তু সে জানিয়েছিল এতদিন কাজ করেও পয়সা পায়নি। রবিবার বেলা ১২ নাগাদ খবর পাই বিস্ফোরণের। জানতে পারি ছেলেরা মারা গেছে।” সেই থেকে শোকাচ্ছন্ন বাড়িতে কান্নার রোল। প্রতিবেশীরাও খুব ভয়ে ভয়ে আছেন। তাই কিছুটা এড়িয়ে চলছেন তাদের। মাঝে মধ্যেই বাড়ির পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে টহলদারি পুলিশের গাড়ি।

যাঁর বিরুদ্ধে তার ছেলেদের দত্তপুকুরে কাজে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন জিরাটের স্ত্রী আসনা এদিন সেই মোহন শেখকে ধরা হয় তার বাড়িতেই। তিনি বলেন, ‘‘জিরাটের স্ত্রীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে। প্রতিহিংসায় এ কথা বলছে তারা। কারণ তার দেওর অর্থাৎ জিরাটের ভাই ইশা শেখ জাকির হোসেনকে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টায় এনআইয়ের হাতে এখনও জেল বন্দি। আমি ওই মামলায় সাক্ষী রয়েছি। আমাকেও এনআইএ ডেকেছিল। গিয়ে যা বলার বলে এসেছি। ওই রাগেই আমাকে ফাঁসাতে আমার নামে দোষারোপ করছে। আমার যে মোবাইল রয়েছে তাতে সেই সিমই রয়েছে। এনআইএ সব দেখেছে। দীর্ঘদিন ধরে বাজি ব্যবসা করে ওরা। ওরাই নিয়ে গেছে ওদের বাজির কারখানাতে কাজ করাবার জন্যই। আমি আপনাদের কাছে সব বলছি না।’’

গ্রামেরই এক প্রবীণ মানুষ বলছেন, ‘‘খেয়ে পড়ে থাকার মতো অরঙ্গাবাদে কাজের অভাব নেই। বিড়ির সঙ্গে জড়িয়ে এলাকার ৬ লক্ষ মানুষ। আসলে বেশি পয়সার লোভেই এই কাজে গেছে তারা। যারা কাজে গেছে তারা জেনে শুনেই গেছে বাজি বানাতে হবে তাদের। সব জেনেশুনেও পিংলা কান্ডের পরেও পরিবারের লোকজন তাদের সে কাজে যেতে দিয়েছেন।তারই পরিণতি এ ভাবে মৃত্যু।”

কিন্তু বার বার নতুন চাঁদরা কেন বাজি কারখানার নজরে ? আসলে বহু আগে থেকেই বাজির সঙ্গে সম্পর্ক নতুন চাঁদরার। তাই এক সময় এই গ্রামকে বাজিগ্রাম বলেই ডাকা হত।

বাড়ির শিশু, কিশোর,মেয়েরাও সমানে হাত লাগাত বাজি তৈরিতে। উঠোন ছিল না কোনও বাড়িতেই। তাই বাইরের রাস্তা জুড়ে রৌদ্রে দিনভর শুকোনো হত সে বাজি খেজুর বা তালের পাটিতে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত লেবেল সেঁটে তা প্যাকেটে ভরত মেয়েরা। গ্রামের ছেলে বুড়ো সবাই জানে বাজি তৈরির কাজ। আর এই অভিজ্ঞতার জন্যই বাজি তৈরির জন্য মাঝে মধ্যেই ডাক আসত গ্রামের কিশোর ও যুবকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pingla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE