Advertisement
E-Paper

পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু থাকার জায়গা কই

গত কয়েক বছরের ইতিহাস বলছে, শীত যত গড়ায় ভিড়টা ক্রমশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বড়দিন, ইংরেজি নতুন বছর, ২৩ বা ২৬ জানুয়ারিতে মানুষের ঢেউয়ে ভেসে যায়  মায়াপুরের ইস্কন মন্দির, যোগপিঠ বা চৈতন্যমঠ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২৫
 নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হতে যা দেরি। শীতের মিঠে রোদ পিঠে নিয়ে ওরা দল বেঁধে বেড়িয়ে পড়েন, কাছে-দূরে। জেলার পর্যটন মানচিত্রে মায়াপুর-নবদ্বীপের নাম বরাবরই তালিকার উপর দিকেই থাকে। অঘ্রানের শিশির পড়তেই ভিড়টা জমতে শুরু করে গঙ্গা-জলঙ্গীর ঘেরাটোপে থাকা মায়াপুর কিংবা গঙ্গার পশ্চিমপাড়ের প্রাচীন জনপদ চৈতন্যধাম নবদ্বীপে। আর এ বার তো শুরু থেকেই জাঁকিয়ে শীত শীত পড়েছে। ফলে, পর্যটকের সংখ্যা যে বেশি হবে, সেই আশায় রয়েছে নবদ্বীপ-মায়াপুর।

গত কয়েক বছরের ইতিহাস বলছে, শীত যত গড়ায় ভিড়টা ক্রমশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বড়দিন, ইংরেজি নতুন বছর, ২৩ বা ২৬ জানুয়ারিতে মানুষের ঢেউয়ে ভেসে যায় মায়াপুরের ইস্কন মন্দির, যোগপিঠ বা চৈতন্যমঠ। নদীর অপর পারে নবদ্বীপে চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রম কিংবা ষাট ফুট উঁচু মহাপ্রভু মূর্তির পায়ের নিচে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তোলার লাইনের ল্যাজা-মুড়ো খুঁজে পাওয়া যায় না। গোটা শীতকাল জুড়ে ওরা প্রতিদিন হাজারে হাজারে আসেন। শীতকাল জুড়ে এ ছবি নবদ্বীপের দুই পাড়ের চেনা ছবি। শনি-রবি ছুটির দিনে তো কথাই নেই।

তবে এত কিছুর মধ্যে অস্বস্তির কাঁটা একটা রয়েছে। এত পর্যটকদের যাতায়াত, কিন্তু এত পর্যটকদের থাকাম মতো জায়গা নেই এই দুই পর্যটনক্ষেত্রে। এ বারে ইতিমধ্যেই মন্দিরের অতিথি আবাস থেকে ছোট-বড় হোটেলে ঠাঁই নাই রব। অ্যাডভান্স বুকিংয়ের কোটা ডিসেম্বর ছাড়িয়ে জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তি। অথচ ফোন অনর্গল বেজেই চলেছে— “দাদা, একটা ঘর হবে? টাকার জন্য চিন্তা করবেন না।” কিন্তু ঘরই যে বাড়ন্ত। টাকা দিয়ে হবে কি? আসলে গত দশ বছরে নবদ্বীপ মায়াপুরে পর্যটক আসা যে পরিমাণে বেড়েছে সেই তুলনায় হোটেল বা অতিথিশালা সামান্যই বেড়েছে। ফলে যত মানুষ এখানে আসেন, তার বেশিরভাগ মানুষই রাত্রিবাস না করে ফিরে যেতে বাধ্য হন। রাতের মায়াপুরে সব মিলিয়ে হাজার দশেক পর্যটকের মাথা গোঁজার ব্যবস্থা আছে। নবদ্বীপেও অবস্থা তথৈবচ। ফলে দু’পাড়ের ব্যবসায়ীদের গলায় আক্ষেপ ‘এই বিপুল ভিড়টা কিছুতেই এক বেলার বেশি আটকে রাখা যাচ্ছে না।’

মায়াপুর হোটেল ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপ দেবনাথের কথায়, ‘‘ডিসেম্বর পড়ার আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় পর্যটকদের আনাগোনা। প্রথম দিকে শুধু শনি রবিবারে ভিড় হয়। তারপর দিন যত গড়ায়, পর্যটকদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। প্রদীপ বাবু বলেন, “এখন মায়াপুরে পঁয়তাল্লিশটা ছোটবড় হোটেল রয়েছে। তাঁদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা তিন থেকে সওয়া তিন হাজার লোক রাখার। ইস্কন ও অনান্য মন্দির মিলিয়ে আরও হাজার সাতেক। মেরেকেটে দশ এগারো হাজার লোকের বন্দোবস্ত করা যায়। কিন্তু যত মানুষ আসেন তার তুলনায় এই সংখ্যা কিছুই নয়।”

ইস্কনের জনসংযোগ আধিকারিক রমেশ দাস বলেন, “আমাদের মন্দিরে সাড়ে তিন হাজার লোকের থাকার বন্দোবস্ত আছে। ইতিমধ্যে সামনের জানুয়ারি পর্যন্ত আমাদের বুকিং হয়ে রয়েছে। এর পরেও প্রতিদিন কয়েকশো ফোন আসছে অনুরোধ জানিয়ে। তাঁদের বিনয়ের সঙ্গে ‘না’ বলতে হচ্ছে।”

নবদ্বীপের বিভিন্ন মঠ-মন্দিরের অতিথি আবাস বা হোটেলও একই ছবি। প্রাচীন মায়াপুরে মহাপ্রভুর জন্মস্থান আশ্রমের প্রধান অদ্বৈত দাস জানান, “নবদ্বীপের আসার আগ্রহ মানুষের মধ্যে দিন দিন বাড়ছে। সেই তুলনায় ঘরের সংখ্যা কম। আমাদের মন্দিরে এক হাজার লোকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আগামী মরসুমের জন্য সব ঘর ভর্তি হয়ে গিয়েছে।” প্রবীর বলেন, “কুড়ি হাজারের মতো মানুষের থাকার বন্দোবস্ত আছে নবদ্বীপে। কিন্তু যে ভাবে লোকের যাতায়াত বাড়ছে, তাতে কুলোচ্ছে কই।”

তাই আপাতত পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করতে শীতেও ঘাম ছুটছে হোটেল মালিক থেকে মন্দির প্রধানদের।

Mayapur Nabadwip School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy