ক্লাস হলেও উপস্থিতি কম।— নিজস্ব চিত্র
টিচার্স রুমে বসেও মাঝেমধ্যে চমকে উঠছিলেন অমরজিৎ কুণ্ডু।
অঙ্কের ওই শিক্ষকের কাছে, ‘‘গতকালের দুপুরটা কী অত সহজে ভোলা যায়!’’ সোমবার তাঁর মাথাতেই দিশি পিস্তল ঠেকিয়ে এক যুবক (যে আদৌ ওই কলেজের ছাত্র কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে) শাসিয়েছিল, ‘কলেজের পরিচালন সমিতির গঠন নিয়ে মাথা ঘামাবি না কিন্তু, ভোটের দিন কলেজে এলে দানা পুরে দেব।’
বলছেন, ‘‘ছেলেটির কথায় সায় দিয়েছিল অন্যরাও। ওরা প্রায় জনা দশেক ছিল।’’
সোরগোলটা শুরু হয়েছিল তার পরেই। শান্তিপুর থেকে মুখে মুখে কথা ছুটেছিল নবান্নেও। রাতে ঘটনাটা ঠিক কী, শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জানতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
গত রাতে না জেনেই ‘পুরনো ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন অবশ্য বলেছেন, ‘‘শান্তিপুর কলেজে যে গুন্ডামি হয়েছে তা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না। যারাই এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’’
ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পুলিশ সুদীপ বিশ্বাস ও সাহাবুদ্দিন শেখ নামে দু’জনকে গ্রেফতারও করেছে। কিন্তু তাতেও যে আতঙ্ক মুছে গিয়েছে, কলেজ চত্বরে পা রেখে তা মনে হচ্ছে না।
ছাত্রদের ক্যান্টিন থেকে কলেজের স্টাফ রুম, সোমবারের ছায়াটা ছড়িয়ে রয়েছে এ দিনও। এ দিন কলেজে এসে অমররজিৎ যেমন বলেছেন, ‘‘বাড়িতে অসুস্থ বাবা, বাচ্চা মেয়ে। সোমবারের ঘটনার কথা তো তারাও জেনেছে। বাড়ি থেকে তাই বারহ বার পোন আসছে।’’
সেই উদ্বেগ যে অমূলক নয় তা মানছেন তাঁর সহকর্মীরাও। কারণ, শান্তিপুর কলেজে এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও কলেজে বোমাবাজি আর দু’দল ছাত্রের মধ্যে গুলি চালাচালি দেখেছেন তাঁরা।
মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বার বার বলে এসেছেন—শিক্ষাঙ্গণে অশান্তি কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। অথচ সেই বার্তা নদিয়ার কলেজগুলিতে পৌঁছয়ইনি? শান্তিপুর কিংবা মাজগিয়ার সুধীরঞ্জন লাহিড়ি কলেজে একের পর এক ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে সে কথাই।
সম্প্রতি মাজদিয়ার কলেজে পরীক্ষার নম্বর কেন সাঙ্কেতিক ভাবে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে এক শিক্ষককে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। কলেজ থেকে ফেরার পথে স্টেশনের সামনেই তাঁকে মারধর করা হয়েছিল।
তার পরেই এই দিশি পিস্তলের সামনে পড়লেন শিক্ষক।
এ দিন কলেজে ছেলেমেয়েরা তেমন আসেনি। যারা এসেছে তারাও দায়ে পড়েই । কলেজের তপশিলি ছাত্রদের জন্য স্টাইপেন্ডের জন্য এ দিনও ভিড় করেছিলেন জনা কয়েক ছাত্র। জামনতেনই না তারা, ‘কাল কী হয়েছে!’ তেমনই এক ছাত্র কৌশিক দাসমহান্ত। বলছেন, ‘‘কলেজে যে পিস্তল নিয়ে ছুটোছুটি হতে পারে কে জানত। কলেজে আসিনি বলেই জানতে পারিনি।’’ তার পরে শঙ্কিত গলায় যোগ করেছেন, ‘‘পড়ার জায়গায় একমাত্র পড়াশোনাটাই জরুরি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy