Advertisement
০৫ মে ২০২৪

নিশ্চয়তাহীন নিশ্চয় যান, হতাশ রোগী

নিশ্চয় যান বন্ধ। ছুটি মিললেও সন্তানকে নিয়ে বাড়ি যেতে পারছেন না মা। শুক্রবার কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

নিশ্চয় যান বন্ধ। ছুটি মিললেও সন্তানকে নিয়ে বাড়ি যেতে পারছেন না মা। শুক্রবার কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার 
শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৫৩
Share: Save:

দূরদূরান্তের এলাকা থেকে আসন্নপ্রসবা এবং সদ্যোজাতদের সময়মতো, নিখরচায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া বা নিয়ে আসার জন্য চালু হয়েছিল নিশ্চয় যান। এমন নাম দেওয়ার মধ্যেই এই যানের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করা ছিল। ডাকার পর পাওয়া যাবে না, এমন হবে না এর ক্ষেত্রে। মা ও শিশু স্বাস্থ্য রক্ষায় এই নিশ্চিত যান প্রকল্প নদিয়ায় আপাতত চরম অনিশ্চয়তার সম্মুখীন।

কারণটা পুরোপুরি অর্থনৈতিক। স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রচুর টাকা বাকি পড়েছে নিশ্চয় যানের মালিকদের। ফলে শুক্রবার থেকে জেলা সদর হাসপাতালের জন্য নির্দিষ্ট ৩৮টি নিশ্চয় যান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নদিয়ায় মোট ১৭০টির মতো নিশ্চয় যান চলে। তার মধ্যে জেলা সদরের ৩৮টির পাশাপাশি অন্য নিশ্চয় যানগুলির অধিকাংশ শুক্রবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলি অত্যন্ত অনিয়মিত ভাবে চলছে।

গাড়ির মালিকেরা জানিয়েছেন, ১০ মাস ধরে তাঁরা ভাড়ার টাকা পাননি। গত ৩১ ডিসেম্বর জেলায় নিশ্চয় যানের কল সেন্টারও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দু’দিন তাঁদের রোগী সহায়তাকেন্দ্র থেকে ‘ভাউচার’ নিয়ে কাজ চালাতে হয়েছে। শুক্রবার থেকে নিশ্চয় যান চালানো বন্ধ করে দিয়ে মালিকেরা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানান। সিএমওএইচ পরে বলেন, “আমরা টাকার জন্য একাধিক বার রাজ্যকে জানিয়েছি। টাকা এলেই নিশ্চয় যান মালিকদের বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। ততদিন তাঁদের পরিষেবা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।” তবে সেই অনুরোধ রাখতে পারবেন কিনা গাড়ি মালিকেরা এখনও বুঝতে পারছেন না।

শুধু নদিয়া নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গে নিশ্চয় যানের ক্ষেত্রে অবস্থা যে এক তা জানিয়েছে ‘অল বেঙ্গল নিশ্চয় যান অ্যাম্বুল্যান্স অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর স্টেট কমিটি। গত ৩০ ডিসেম্বর তারা মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে পাঠানো এক চিঠিতে জানিয়েছে, রাজ্যের সর্বত্র নিশ্চয় যানের মালিকেরা ১১ মাস ধরে টাকা পাচ্ছেন না। এই কারণে গত পয়লা জানুয়ারি থেকে মুর্শিদাবাদেও অধিকাংশ নিশ্চয় যান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নিশ্চয় যানের বকেয়া নিয়ে মাঝেমধ্যে সমস্যা হয়। আবার মিটেও যায়। এ বারও মিটে যাবে।’’

জেলা সদর হাসপাতালের নিশ্চয় যানের মালিক দেবব্রত বসু, রাজু পাল-রা বলছেন, “১০ মাসের টাকা বাকি। এক-একটা গাড়ির জন্য প্রায় ৩ লক্ষ টাকা করে বকেয়া রয়েছে। আমাদের দেওায়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। আর পারছি না।” জেলা সদর হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকারের কথায়, “সকাল থেকে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। টাকা না পাওয়ায় কোনও নিশ্চয় যান চলছে না। আর এ দিকে সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে বসে রয়েছেন মায়েরা। গাড়ি নেই বলে যেতে পারছেন না।” নিশ্চয় যানের পাশাপাশি জেলায় ৩০টি ১০২ নম্বরের গাড়ি চলে। এতেও মা ও শিশুদের আনানোওয়া করা হয়। জেলা হাসপাতালে এইরকম ৫টি গাড়ি রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, সেই গাড়িও চালাতে দিচ্ছেন না নিশ্চয় যানের মালিকরা।

শুক্রবার সকালে জেলা হাসপাতালে আট মাসের ছেলেকে কোলে নিয়ে বসেছিলেন মা ষষ্ঠী প্রামাণিক। ডাক্তারবাবু কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে রেফার করে দিয়েছেন ছেলেকে। কিন্তু যাবেন কী করে? নিশ্চয় যান বন্ধ। ১০২ নম্বরের গাড়িও চলছে না। গাড়ি ভাড়া করার ক্ষমতা নেই। একই ভাবে সদ্যোজাতকে নিয়ে দিশেহারা অবস্থা হয়েছে অঞ্জনা বিশ্বাসের। তাঁর বাড়ি প্রায় তিরিশ কিলোমিটার দূরে ভীমপুরের ঢাকুরিয়াপোতা। গাড়ি ভাড়া করার ক্ষমতা নেই। ঠাণ্ডা হাওয়ার মধ্যে সন্তানকে বুকে চেপে নিয়ে অসহায় ভাবে বসেছিলেন হাসপাতাল চত্বরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Patient Ambulance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE