Advertisement
E-Paper

পায়েলের মেয়েটার খোঁজ নেই

পঞ্চমীতে পায়েল, দশমীতে মিতা। কিন্তু উলুবেড়িয়ার মিতা মণ্ডলের জন্য পুলিশ-প্রশাসন যতটা তৎপর হয়েছে, রিষড়ার পায়েল পালের মৃত্যু নিয়ে ততটাই নির্বিকার— অভিযোগ আত্মীয়বন্ধুদের।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস ও প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২১
পায়েলের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে ধুবুলিয়ায় মৌনী মিছিল। — নিজস্ব চিত্র

পায়েলের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে ধুবুলিয়ায় মৌনী মিছিল। — নিজস্ব চিত্র

পঞ্চমীতে পায়েল, দশমীতে মিতা।

কিন্তু উলুবেড়িয়ার মিতা মণ্ডলের জন্য পুলিশ-প্রশাসন যতটা তৎপর হয়েছে, রিষড়ার পায়েল পালের মৃত্যু নিয়ে ততটাই নির্বিকার— অভিযোগ আত্মীয়বন্ধুদের।

পায়েলের ছ’মাসের মেয়েটির এখনও খোঁজ নেই। শিশুটি নিরাপদে আছে কি না, তাকে নিয়ে তার ঠাকুমা রঞ্জনা পাল ও পিসি মৌসুমী কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, তা সোমবার রাত পর্যন্ত হদিস করতে পারেনি পুলিশ।

বিকেলে হুগলির রিষড়া থানায় গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন পায়েলের শ্বশুরবাড়ির পাড়ার মহিলারা। এতেও কাজ না হলে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন বলে তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। একই সময়ে, নদিয়ার ধুবুলিয়ায় পায়েলের বাপের বাড়ির কাছে মৌনী মিছিল করেন বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজন, এলাকার লোকজন। বন্ধুরা ফেসবুকে ‘জাস্টিস ফর পায়েল’ নামে ‘পেজ’ খুলে প্রচারও শুরু করেছেন।

গত ৬ অক্টোবর রিষড়া রেলপার্কে শৌচাগারে শাওয়ারের পাইপ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মেলে বছর পঁচিশের পায়েলের দেহ। শ্বশুরবাড়ি থেকে বলা হয়েছিল, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু পায়েলের বাড়ির লোকজন তা বিশ্বাস করেননি। তাঁরা খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। স্বামী-শ্বশুর গ্রেফতার হয়ে আপাতত জেলে। কিন্তু শিশুটিকে নিয়ে শাশুড়ি আর ননদ বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন।

পায়েলরা চার বোন। তাঁর বাবা অমলকৃষ্ণ হাজরা মারা গিয়েছেন মাস ছয় হল। বড়দির শ্বশুরবাড়ি রিষড়ার কাছে, হুগলির হিন্দমোটরে। মেজদির বিয়ে হয়েছে ধুবুলিয়াতেই। পায়েল সেজো। ছোট বোন পূজা হাজরা বেথুয়াডহরিতে জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার। তিনিই ধুবুলিয়ায় থাকেন মায়ের সঙ্গে।

মা-বোনেরা কেন মনে করছেন যে পায়েলকে খুন করা হয়েছে?

মা আর দিদিদের দাবি, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বিনা পণে বিয়ে হলেও ছ’মাস বাদেই জামাই কৃষ্ণেন্দু পাল তিন লক্ষ টাকা চেয়ে বসে। মেজদি শুভ্রা রায়ের আক্ষেপ, ‘‘আমরা সেই টাকা দিতে পারিনি।’’ বড়দি দোলা চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘কেন তাড়াতাড়ি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ল, সে কথা তুলে খোঁটা দেওয়া হত বোনকে। ওর মেয়ে হওয়ার পরে অত্যাচার শুরু হয়।’’ শুভ্রার অভিযোগ, ‘‘নিউটাউনের যে ব্যাঙ্কে কৃষ্ণেন্দু কাজ করত, সেখানে এক সহকর্মিনীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল সে। বোন তা জেনে যাওয়ার পরে নির্যাতন চরমে ওঠে।’’ পূডার দাবি, “কেউ পাঁচ ফুট উঁচু শাওয়ারের পাইপে গলায় দড়ি দিতে পারে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।’’

পাড়ার লোকজনেরও বিশেষ ভাল ধারণা নয় পরিবারটি সম্পর্কে। বাড়ির কর্তা দীপক পাল সরকারি চাকুরে ছিলেন, গিন্নি অবসরপ্রাপ্ত নার্স। কিন্তু প্রায় কারও সঙ্গে তাঁরা মিশতেন না, বরং তফাত রেখে চলতেন বলে দাবি পাড়ার অনেকেরই। এ দিন পায়েলের মা নমিতা হাজরা, বড়দি দোলা ও মেজো জামাইবাবু অমিত রায় রিষড়ায় গেলে পাড়ার লোকজন ভিড় করে আসেন। পরে এঁদেরই একটা বড় অংশ থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। ঘটনার পরে কয়েক দিন শাশুড়ি-ননদ বাড়িতে থাকলেও পুলিশ কার্যত তাদের পালিয়ে যেতে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

পায়েলের মা-বোনেরা সবাই এত দিনু হিন্দমোটরে ছিলেন। এ দিন শুভ্রা আর পূজা ধুবুলিয়ায় ফিরতেই পাড়ার লোকেরা বাড়িতে এসে জড়ো হন। পূজা বলেন, ‘‘আমরা কেউ দিদিকে শাওয়ারের পাইপে ঝুলতে দেখিনি। শ্রীরামপুরের ওয়ালশ হাসপাতালে গিয়ে দিদির মৃতদেহ দেখেছি।” পরে পাড়াপড়শি-বন্ধুরা সুবিচারের দাবিতে মৌনী মিছিল বের করেন। ছোট থেকে যিনি পায়েলকে পড়িয়ে এসেছেন সেই স্নে‌হাশিস চৌধুরী থেকে শুরু করে পাড়ার পম্পি ভাদুড়ি বলেন, ‘‘পুলিশ যদি এখনও পদক্ষেপ না করে, আমরা মূখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হব।’’

রাতে হুগলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) গৌরব লাল অবশ্য বলেন, ‘‘মা-মেয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। তবে কোথায় গিয়েছে, তা আমরা জেনেছি। ওদের ধরতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।’’

Payel Pal Murder missing Daughter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy