প্রতীকী ছবি।
ভোরের মোরগ নয়, দিন চারেক ধরে সে গ্রামে ঘুম ভাঙছিল বোমার গর্জনে, ভরা সন্ধেয় শব্দবাজির মতো বোমার লড়াই। দুপুরে-বিকেলেও থেকে থেকেই গভীর বিস্ফোরণ। দিন কয়েকের নিবিড় বোমাবাজির ফলে, ফরাক্কার বটতলা গ্রামে বাজার উঠে গিয়েছে দিন কয়েক আগেই। বুধবার থেকে তালা পড়ল, গ্রামের স্কুল-মাদ্রাসাতেও।
বোমাবাজির নেপথ্যে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। তা নিয়ে অবশ্য পুলিশের তেমন হেলদোল নেই। নিয়মরক্ষার পুলিশি টহল অবশ্য হচ্ছে। জঙ্গিপুরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কেন গ্রামে পুলিশি টহল তো চলছে। ধরপাকড়ও চলছে।’’ মজার কথা এ সবই কথার কথা। বুধবার, পুলিশি টহলের মধ্যেই তুমুল বোমা-বর্ষণ শুরু হতেই গ্রাম ছেড়ে নিশব্দে ফিরে যেতে দেখা গিয়েছে পুলিশের জিপ। স্থানীয় বাসিন্দারা অকপটে বলছেন, ‘‘রাজায়-রাজায় যুদ্ধ উলুখাগড়া পুলিশ এগিয়ে এসে প্রাণ খোয়ায়!’’
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, লড়াই স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্য আজাদ আলির দলবলের সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের পরাজিত প্রার্থী সুকতারা বিবির স্বামী হাকিম শেখ। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই কমবেশি দুই গোষ্ঠীর বিবাদ চলছিল। চার দিন ধরে তা তুমুল চেহারা নিয়েছে।
বটতলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিস রজক বলছেন, “স্কুলে ৫৫৪ জন ছাত্রছাত্রী, ৫ জন শিক্ষক। কিন্তু বোমার ভয়ে কে স্কুলে আসবে বলুন তো! পরীক্ষা চলছে বলে যে ক’জন আসছিল, তাদের বাড়ি ফেরানোর দায়িত্বও নিতে হয়েছে। এখন আর কেউ আসছে না।’’
পড়শি গ্রামের এক ছাত্রী বলছে, ‘‘সে দিন পরীক্ষা দিচ্ছি বোমা পড়তে শুরু করল। পরীক্ষা দেব কি আমরা তো তখন ভয়ে কাঁদছি!’’
স্কুলের পাশেই হাইমাদ্রাসা। প্রধান শিক্ষক জানে আলম বলছেন, “বোমার আতঙ্কের মধ্যে ছাত্র ছাত্রীদের স্কুলে হাজিরা তলানিতে ঠেকেছিল, এখন আর কেউ আসছে না। কোন অভিভাবক বোমাবাজির মধ্যে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠাবেন বলুন তো!’’
বটতলার বাসিন্দা গেন্দু বিবি বলছেন, “চার দিন ধরে রান্না করতে পারছি না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে দোকানে কিছু কিনতে যাওয়ারও সাহস হয় না। ঘরে খিল এঁটে বসে আছি। কোনোরকমে চাল সেদ্ধ করে ফ্যান ভাত খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।’’
সানিয়ারা বিবি বলছেন, “মুড়ি মুড়কির মতো বাড়ির দেওয়ালে, টিনের চালে বোমা পড়ছে। ভয়ে সেঁধিয়ে আছি ঘরের মধ্যে চার
দিন ধরে।’’
যা শুনে আমজাদ আলি বলছেন, “তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী হেরে গেছেন বলে তার স্বামী হাকিম শেখের নেতৃত্বে আমাকে খুনের চেষ্টা হচ্ছে। হাকিম কংগ্রেস ও সিপিএমের সঙ্গে মিলে এই বোমার সন্ত্রাস চালাচ্ছে।” আর, হাকিম বলছেন, ‘‘আজাদ এ কথা বলতে পারল? কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বোমাবাজিটা কে করাচ্ছে গ্রামের সবাই জানে।’’
তৃণমূলের ফরাক্কা ব্লকের সভাপতি এজারত আলি অবশ্য অকপট, “দলনেত্রী তো বলেছেন, দল দেখার দরকার নেই, পুলিশ দু’পক্ষকেই ধরুক। আমিও তাই বলছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy