Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩

সংস্কৃত গান শুনে থমকাল ভিড়

এরপর প্রায় সওয়া একঘণ্টা এ ভাবেই কালিদাসের মেঘদূতের ‘পূর্বমেঘ’ অংশ নিয়ে রচিত সংস্কৃত নৃত্যনাট্যের মুগ্ধ সাক্ষী হয়ে থাকলেন কয়েকশো মানুষ। শুক্রবার ছিল নবদ্বীপের শ্রীগুরু করুণা নিকেতন এবং ভারতী চতুষ্পাঠী সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে সাত দিনব্যাপী সংস্কৃত সপ্তাহ পালনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান। সংস্কৃত ভাষার পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে রাখি পূর্ণিমা দিনটিকে সংস্কৃত দিবস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই দিন থেকে গোটা দেশে পালন করা হচ্ছে সংস্কৃত সপ্তাহ। 

উৎসব। নিজস্ব চিত্র

উৎসব। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:২০
Share: Save:

জলভরা মেঘে ভাদ্রের আকাশ তখন ঘনঘোর। অঝোর বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছে চারদিক। ঠিক তখনই সাজানো মঞ্চে বিরহী যক্ষ মেঘকে দূত হিসাবে প্রিয়ার কাছে যাওয়ার পথ নির্দেশিকা জানাচ্ছে। “হে মেঘ, তোমার গতিপথ উত্তর দিকে, কিন্তু সোজা উত্তরে ধেয়ে যাওয়া তো হবে না। একটু ঘোরা পথ হলেও তোমায় একবারটি উজ্জ্বয়িনী দেখে যেতে হবে...”। পাখোয়াজ, ঘুঙুরের বোল, ভরতনাট্যমের ছন্দের সঙ্গে বিশুদ্ধ সংস্কৃত উচ্চারণে যক্ষের সে বর্ণনায় দর্শকের চোখের সামনে একটু একটু করে ফুটে উঠছে মেঘদূতের যাত্রাপথ।

Advertisement

এরপর প্রায় সওয়া একঘণ্টা এ ভাবেই কালিদাসের মেঘদূতের ‘পূর্বমেঘ’ অংশ নিয়ে রচিত সংস্কৃত নৃত্যনাট্যের মুগ্ধ সাক্ষী হয়ে থাকলেন কয়েকশো মানুষ। শুক্রবার ছিল নবদ্বীপের শ্রীগুরু করুণা নিকেতন এবং ভারতী চতুষ্পাঠী সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে সাত দিনব্যাপী সংস্কৃত সপ্তাহ পালনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান। সংস্কৃত ভাষার পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে রাখি পূর্ণিমা দিনটিকে সংস্কৃত দিবস হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই দিন থেকে গোটা দেশে পালন করা হচ্ছে সংস্কৃত সপ্তাহ।

একদা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিত নবদ্বীপে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গত কয়েকদিন ধরেই পালিত হচ্ছে নানা অনুষ্ঠান, পদযাত্রা, নাটক, আলোচনা। কিন্তু আর পাঁচটা অনুষ্ঠানের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানের পার্থক্য হল— এর সবটাই সংস্কৃত ভাষায়। পদযাত্রার পোস্টারের লেখা থেকে শ্লোগানের ভাষা সবই সংস্কৃত। অনুষ্ঠান মঞ্চের ঘোষণা থেকে ভাষণ, গান, নাটক— অন্য কোনও ভাষার ব্যবহার নেই।

ব্যস্ত শহরের পথ দিয়ে চলছে দীর্ঘ এক পদযাত্রা। মেয়েরা শাড়ি, ছেলেরা ধুতি-পাঞ্জাবি। তাদের হাতে ধরা পোস্টার। তাতে দেবনাগরী হরফে লেখা ‘শ্রুতং মে গোপায়’ বা ‘উপসর্প মাতরং ভূমিম্‌’ বা ‘যত্র বিশ্বং ভবত্যেকনীড়ম্‌’ কিংবা ‘আচার্যবান্‌ পুরুষো বেদ’ এর মতো নানা পঙ্‌ক্তি। নবদ্বীপের বৈদিক সংস্কৃত শিক্ষাঙ্গনের পদযাত্রায় সমবেত ধ্বনি উঠছে ‘সংস্কৃতস্য রক্ষণায় বদ্ধপরিকরা বয়ম্‌’। তাদের সংস্কৃত বিজয় পরিক্রমায় গাওয়া হচ্ছে ‘আগ্নে পরশমণি লগায়ে প্রাণেঃ’ বা ‘আনন্দধারা বহতি ভুবনে’। রাস্তার ভিড় থমকে গিয়ে অবাক হয়ে শুনছে সে সব।

Advertisement

তবে, শুক্রবার দুপুরের অনুষ্ঠানটি ছাপিয়ে গিয়েছে বাকি সব অনুষ্ঠানকে। এ দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় শ্রীগুরু করুণা নিকেতনের আশ্রমিকদের মঙ্গলাচরণে। সঞ্চালক শ্যামল দেবনাথ ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। ঝরঝরে সংস্কৃতে তাঁর ঘোষণা— “অস্মাকং মধ্যে বিরাজিতা নবদ্বীপস্য পণ্ডিতমূর্ধণ্যাঃ শ্রীকুমারনাথ ভট্টাচার্য মহাভাগাঃ। তান্‌ অনুরন্ধে তে মঞ্চম্ অগত্য আসনম্‌ অলঙ্কুর্বন্তু।” এ ভাবে ডেকে নেওয়া হল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের।

কথার মাঝে মাঝে সংস্কৃত গান। সাবলীল ভাবে গাইলেন পায়েল ঘোষ, বাণী দেবনাথ। প্রায় তিন ঘণ্টার সংস্কৃতময় অনুষ্ঠান যখন থামল, তখনও ঘোর কাটেনি নবদ্বীপের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.