জীর্ণ রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেণী সেতুর উপর দিয়ে চলছে ঝঁুকির যাত্রা। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার গিরীশ পার্কের কাছে নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা গিয়েছে অন্তত ২১ জন। যে ঘটনার পরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে মুর্শিদাাবাদের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা ভগ্ন সেতুগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে।
কান্দি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দ্বারকা নদীর সেতুতে। পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কান্দি মহকুমায় এ রকম দু’টি দুর্বল সেতু রয়েছে। সেগুলি রয়েছে ব্যস্ত সড়কের উপর। ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় দু’টি সেতুই রয়েছে দ্বারকা নদীর উপর। একটি কান্দি বাসস্ট্যান্ডের পাশে। অপরটি কান্দি থানার রণগ্রামের সেতু। ইংরেজ আমলের তৈরি রণগ্রামের ওই সেতুটি বছর তিনেক আগে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পূর্ত দফতর যুদ্ধকালীন তৎপরতাই ওই সেতুটি সংস্কার করে হাল ফেরায়। বর্তমানে ওই সেতুর শুরুতে সাইনবোর্ডে উল্লেখ রয়েছে, ‘সেতুটি দুর্বল।’
পূর্ত দফতরের দাবি, ২০ থেকে ৩০ টন পণ্য বোঝাই ভারী যান যাতায়াত করলেও তাতে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু বিপদ পায়ে পায়ে ঘুরছে কান্দি বাসস্ট্যান্ডের পাশের সেতুটিতে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেপরেই প্রায় ৬৫ মিটারের ওই সেতুটি তৈরি হয়। দিনের পর দিন ওই সেতুর উপর দিয়ে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। কিন্তু ওই সেতুটি সংস্কার করার কোন পদক্ষেপ নেয়নি পূর্ত দফতর।
বছর চারেক আগে ওই সেতুটির মাঝখান বসে যায়। তাতে সেতুটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। সেই সময় পূর্ত দফতরের কর্তাব্যক্তিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। তবে তড়িঘড়ি ওই সেতুটির সংস্কারের পথে না হেঁটে সেতুর দু’প্রান্তে বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দেন পূর্ত দফতরের কর্তারা। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের। তারপর সেতুর দু’পাশে থাকা রেলিং সংস্কার করে নীল সাদা রং করে দেওয়া হয়।
ওই সেতু বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ি সেতু দিয়ে যাতায়াত করে। তারমধ্যে বালি, পাথর ইঁট বোঝাই করা ভারী যানবাহনের সংখ্যাই বেশি। ওই ভারী যানবাহন ছাড়াও ওই রাস্তা দিয়ে কলকাতা, বীরভূম, বর্ধমান, কাটোয়া ,বহরমপুর রুটের প্রায় দেড়শোটি যাত্রীবাহী বাস যাতায়ত করে। ফলে ওই রাস্তার মধ্যে থাকা সেতুটির এমন বিপজ্জনক অবস্থায় যে কোনও সময় বড় বিপদ যে ঘটতে পারে, সে কথা স্বীকার করছেন এলাকার বাসিন্দা থেকে শুরু করে পূর্ত দফতরের কর্তারাও।
এলাকার বাসিন্দা দেবাশিস মণ্ডল বলেন, “সেতুতে উঠলে কম্পন শুরু হয়। আতঙ্কের মধ্যে যাতায়াত করতে হয়। ওই সেতুর পাশে পূর্ত দফতরের অফিস। দফতরের কর্তারা ওই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করলেও সেটা মেরামত করার কোনও উদ্যোগ নেন না।’’ পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, ওই সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করার জন্য সেতুটির নকশা তৈরি করা হয়েছে। তার আগে বিকল্প রাস্তা তৈরি করতে হবে। তার জন্য জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
অন্যদিকে বছর দুয়েক আগে ‘ঝুমঝুমখাল’-এর উপরে কাঠের সেতু ভেঙে পড়ে। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত হন এক সাইকেল আরোহী। ওই দিনের কথা বলতে গিয়ে এখনও শিহরিত হচ্ছেন এলাকার লোকজন। স্থানীয় যুবক মৃণাল মণ্ডল বলেন, ‘‘যাত্রী বোঝাই বাস যাতায়াতের সময়ে ওই বিপত্তি ঘটলে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটত এবং যা কলকাতার উড়ালপুল ভেঙে পড়ার সঙ্গে তুলনা টানা যে তে পারত।’’
২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আচমকা ভেঙে পড়ে ‘ঝুমঝুমখাল’ কাঠের সেতু। বহরমপুর থানার সাহাজাদপুর পঞ্চায়েতের পাঁচকুঠিতে বহরমপুর-রামনগরঘাট রাজ্য সড়কের উপরে কাঠের ওই সেতু ভেঙে পড়ে জখম হন এক সাইকেল আরোহী। সেতুর উপর থেকে নীচে পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে কোনও রকমে কাঠের রেলিং ধরে ওই ব্যক্তি প্রাণে বাঁচেন। ভেঙে পড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে পাথর বোঝাই একটি লরি পার হয়ে যাওয়ার পরেই ওই সেতু ভেঙে পড়ে। অভিযোগ, ওই কাঠের সেতু দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে পূর্ত দফতর। কিন্তু কোনও নজরদারি না থাকায় তার উপর দিয়ে ‘ভারী যানবাহন’ চলাচল করার ফলেই ওই বিপত্তি ঘটে।
তার পরে দীর্ঘ টালবাহানার পরে প্রশাসন সেতু সংস্কারে উদ্যোগী হলেও গত দু’বছরেও সেতু সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয়নি। এতে গ্রামবাসীরা ব্যাপক ক্ষুব্ধ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বহরমপুর ও রামনগরের মধ্যে যান চলাচলের সুবিধার জন্য দীর্ঘ দিন আগে ওই কাঠের সেতু নির্মিত হয়। তার পরে কোনও রকম সংস্কার হয়নি। যদিও ভেঙে পড়ার তিন বছর আগে সংস্কার হয় বলে দাবি পূর্ত দফতরের। সেতু ভেঙে পড়ার পরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী জানান, এক দিকে ভারী যান চলাচলে কোনও নজরদারি ছিল না, অন্য দিকে দীর্ঘ দিন সেতু সংস্কারে উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন। সব মিলিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ায় সেতুটি ভেঙে পড়ে।
পূর্ত দফতরের মুর্শিদাবাদ হাইওয়ে ডিভিশন-২ এর নির্বাহী বাস্তুকার দীপনারায়ণ শীল বলেন, ‘‘বছর খানেক আগে নতুন করে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু বর্ষার পরে জল থাকায় নির্মাণ কাজ থমকে থাকে। এখনও জল থাকায় কাজ করতে অসুবিধে হচ্ছে। তবে আশা করছি আগামী বর্ষার আগে ওই নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy