অভিজিৎ পুণ্ডারির বাড়িতে তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
এখনও ক্ষোভের আঁচ ধোঁয়াচ্ছে গ্রামে। খুনের চার দিন পরেও অভিযুক্তেরা সকলে কেন ধরা পড়ল না, বিশেষ করে মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ পুণ্ডারী, তার উত্তর চাইছেন ফুলবাড়ি গ্রামের মানুষ। সেই ক্ষোভের আঁচ পড়ছে অভিযুক্তদের পরিবারের উপরেও।
বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনের মামলায় ধৃত সুজিত মণ্ডলের বাড়িতে এ দিন ভাঙচুর চালান এলাকার বেশ কিছু লোকজন। এঁদের বেশির ভাগই তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত। তাঁদের দাবি, সুজিতের বাড়ি থেকে বেশ কিছু আরএসএস-এর কাগজপত্র, মোবাইলের সিম এবং একটি জং ধরা ভোজালি পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি পুলিশের কাছে জমাও করা হয়েছে। গোটা সময়টা পুলিশ কার্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সুজিতের মা ভানু মণ্ডল।
গত শনিবার সত্যজিৎ খুনের পরে রাতেই অভিজিৎ পুণ্ডারীর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। পরিবারের অভিযোগ, অভিজিতের নাগাল পেতে ব্যর্থ হলেও তার মা-বাবাকে পুলিশ চার দিন ধরে আটকে রেখেছে। আর এক অধরা অভিযুক্ত কালিদাস মণ্ডলের মেজো ভাই রামপদকেও থানায় আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। কালিদাসের মা মঞ্জু মণ্ডল বলছেন, “ঘটনার রাতে কালিদাসকে না পেয়ে আমার মেজো ছেলে রামপদকে তুলে নিয়ে গেল পুলিশ। চার দিন হয়ে গেল। এখনও ছাড়ল না।” থানায় যাননি? তিনি বলেন, “পুলিশের ধারে-কাছে ঘেঁষার সাহসই পাচ্ছি না!”
অভিজিতের জেঠা রঞ্জিত পুণ্ডারীর অভিযোগ, শনিবার রাতেই পুলিশ বাড়িতে এসেছিল। অভিজিৎকে না পেয়ে তার মা, বছর আটচল্লিশের ঝর্না পুণ্ডারীকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই থেকে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। অভিজিতের বাবা অজিত পুণ্ডারী ঘটনার পর থেকে বাড়িছাড়া ছিলেন। রঞ্জিতের দাবি, “অজিত কাল সকালে নিজেই থানায় গিয়েছে। ওরা দু’জনেই এখনও থানায়। দু’জনেই অসুস্থ। কিন্তু পুলিশ ওদের ছাড়েনি।”
অভিজিৎ গ্রেফতার না হওয়ায় সোমবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামেন ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন এলাকার বহু মানুষ। অনেকেরই প্রশ্ন, “অভিজিৎ কি পেশাদার অপরাধী যে পুলিশ তাকে ধরতে পারছে না?” কেউ কেউ টিপ্পনী কাটছেন, “অভিজিতের মতো সামান্য অভিযুক্তকে পুলিশ ধরতে পারছে না, অথচ তার বাবা-মা আটকে রেখেছে।”
গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি তাপস চক্রবর্তীর দাবি, “এ ভাবে কাউকে থানায় আটকে রাখা বেআইনি। ডেকে পাঠিয়ে জেরা করতে গেলেও টেলিগ্রাফিক মেসেজ দিতে হয়। অন্তত থানার স্ট্যাম্প মেরে চিঠি দিতে হয়।” জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার অবশ্য কোনও বিষয়ে একটিও কথা বলতে রাজি হননি।
গত শনিবার রাতে বাড়ির কাছে নিজেরই ক্লাবের সরস্বতী পুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলার সময়ে ওয়ানশটারের গুলিতে খুন হন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। এই ঘটনায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাওয়া মুকুল রায়-সহ মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন বিধায়কের সর্বক্ষণের সঙ্গে মিলন সাহা। এতে বিপদ হতে পারে এই আশঙ্কায় মিলন এবং আরও দু’জনের জনের জন্য নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করা হচ্ছে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy