Advertisement
E-Paper

পানি-কেস দিয়ে দেব, কড়া নেড়ে বলছে পুলিশ

পুর ভোটের আবহে ডোমকলের অলি-গলি খালবিলে ঘুরপাক কাচ্ছে শব্দটা, পানি-কেস। দরজা খুলেও কুলুপ আঁটা মুখে মার্কা মারা বিরোধী ভোটাররা বিড় বিড় করছেন— ‘কে জানে বাবা পানি-কেস না দিয়ে দেয়!’

সুজাউদ্দিন

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ০১:০৭
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পুর ভোটের আবহে ডোমকলের অলি-গলি খালবিলে ঘুরপাক কাচ্ছে শব্দটা, পানি-কেস।

দরজা খুলেও কুলুপ আঁটা মুখে মার্কা মারা বিরোধী ভোটাররা বিড় বিড় করছেন— ‘কে জানে বাবা পানি-কেস না দিয়ে দেয়!’

আসুন সেই, পানি-কেসের গল্পটার খোঁজ করি—

বেশ বয়স হয়েছে, বাঁকানো লাঠিতে ন্যুব্জ পিঠের ভর টেনে থানার বারান্দায় এসে বৃদ্ধা খোঁজ করছিলেন, ‘‘বাবা বড়বাবুর ঘরটা কুথায় গো!’’

ব্যস্ত কনস্টেবল ঘরটা দেখিয়ে দিতে, ভারী পর্দা ঠেলে ঢুকে হাত জোড় করে বড়বাবুর কাছে বৃদ্ধার আর্জি ছিল, ‘‘বাবা ছিলেটাকে হালকা কেস দিও, আমার গাছের কাঁঠাল খুব মিষ্টি, মস্ত একটা পাকা কাঁঠাল পাঠিয়ে দেব।’’ কাঁঠালের প্রস্তাবে বৃদ্ধার মুখোমুখি ঠায় খানিক বসে থেকে শেষতক বড়বাবু বলেছিলেন, ‘‘সে হবেখন, তোমার ছেলেকে না হয় একটা পানিকেসই দেব!’’

বৃদ্ধার বলিরেখা দীর্ণ মুখ কিঞ্চিৎ স্বস্তি নিয়ে ফিরে গিয়েছিল বটে, তবে বছর ঘুরে গেলেও সে ছেলে আর গারদের বাইরে রোদ্দুর দেখেনি।

সীমান্তের গ্রামের সেই বৃদ্ধা এখনও বেঁচে রয়েছেন, বলেন, ‘‘এখন বুঝি বাবা পানি-কেস বড় সাঙ্ঘাতিক!’’

ডোমকলে পুরভোটের দুপুরে শাসক দল আর পুলিশের চমকানির সব চেয়ে বড় অস্ত্র এখন এই পানি- কেস। বিরোধীদের অভিযোগ, জোটে তাঁদের নেতা-কর্মীদের তঠস্থ করে রাখতে পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে আসছে, ‘বেশি বাড়াবাড়ি করলে পানি-কেস দিয়ে দেব কিন্তু!’ আর তৃমূলের নেতারা চোখ মটকে বলছেন, ‘‘কী রে ভোটটা দিবি তো, নাকি পানি-কেস...!’’

পানি-কোস আদতে এনডিপিএস (নারকোটিক্স-ড্রাগস সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যানসেস অ্যাক্ট) ধারায় মামলা রুজু করা। ১৯৮৫ সালে, আন্তর্জাতিক মাদক পাচার রুখতে তৈরি হয়েছিল এ আইন। সীমান্তে দেদার গাঁজা কিংবা কাশির সিরাপের কোডাইন ফসফেট নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি মিললেই এই মামলার জুজু দেখায় পুলিশ।

সীমান্তের জলঙ্গি আর রানিনগর এলাকায় এ মামলার হরবখত ব্যবহার পুলিশের। তবে, ভোটের মুখে শাসক দলের ‘সুবিধা’ করে দিতে তা বিরোধীদের ক্ষেত্রেও ব্যবহারের জুজু দেখাচ্ছে পুলিশ, বলে অভিযোগ।

২০ কেজির বেশি গাঁজা বা কাশির সিরাপে ৬০ মিলিগ্রাম কোডাইন ফসফেট থাকলে জামিন অযোগ্য ধারায় এই মামলা রুজু করে পুলিশ।

বিরোধীদের দাবি, পুরোভোটে পুলিশ তার ‘চেনা চেহারায়’ তৃণমূলের হয়েই কাজ করছে। আর বাম-কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের মিটিং মিছিলে দেখলেই ঝুলিয়ে দিচ্ছে এনডিপিএস-এর ভয়। জোটের পক্ষে থাকা নিরীহ মানুষকে বা অন্য কোনও লঘু অপরাধেও এনডিপিএস ধারায় মামলার হার বেড়েছে হু হু করে, বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জেলা পুলিশের কর্তারা অবশ্য সে অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন, বলছেন, ‘‘এ সব নিছকই রটনা। নিয়ম মেনেই ওই ধারায় মামলা করা হচ্ছে।’’

Narcotics Drugs and Psychotropic Substances Act police Fake Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy