Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
পুজোর মুখে নির্দেশিকা

পথ দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কড়া পুলিশ

জেলা পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, চারপাশে এক বার তাকিয়ে দেখুন, কী রকম বেপরোয়া ভাবে ছুটছে মোটর বাইকগুলো! আরোহী তো দূরের কথা, বহু চালকের মাথাতেই হেলমেট নেই। নিট ফল, দুর্ঘটনা-জখম-মৃত্যুর খতিয়ান ক্রমে বেড়েই চলেছে।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:০৪
Share: Save:

আবার সে এসেছে ফিরিয়া! এসেছে বলেই কপালে ভাঁজ পড়েছে পথচারী থেকে পুলিশকর্তা সকলেরই। কেন?

জেলা পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, চারপাশে এক বার তাকিয়ে দেখুন, কী রকম বেপরোয়া ভাবে ছুটছে মোটর বাইকগুলো! আরোহী তো দূরের কথা, বহু চালকের মাথাতেই হেলমেট নেই। নিট ফল, দুর্ঘটনা-জখম-মৃত্যুর খতিয়ান ক্রমে বেড়েই চলেছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, গত বছর রাজ্যে যত দুর্ঘটনা ঘটেছিল তার ২৬ শতাংশই মোটরবাইক দুর্ঘটনা। চলতি বছরেও পাশাপাশি নদিয়া ও মুর্শিদাবাদে মোটর বাইক দুর্ঘটনার সংখ্যা নেহাত কম নয়। উৎসবের সময় সেই দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। আর সেই কারণেই যাঁরা ট্রাফিক আইন না মেনে মোটরবাইক চালাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। দিন কয়েক আগে রাজ্য পুলিশের এডিজি (ট্রাফিক) এ বিষয়ে রাজ্যের সমস্ত জেলার পুলিশ সুপার ও পুলিশ কমিশনারদের এ ব্যাপারে নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত এই বিশেষ অভিযান চলার কথা। সেই নির্দেশিকা হাতে পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ।

হেলমেট না পরা, বেপরোয়া বাইক চালানো, ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা এই উৎসবের সময় বেড়ে যায়। সেই কারণে দুর্ঘটনাও ঘটে। এ বার প্রথম থেকেই এই ব্যাপারটি কড়া হাতে সামাল দেওয়া হচ্ছে বলেই দাবি পুলিশের। রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর সারা রাজ্যে ১৩৫৮০ দুর্ঘটনা ঘটেছিল। মোটরবাইক দুর্ঘটনা ছিল ৩৫৭৩টি। বাইক দুর্ঘটনায় গত বছর রাজ্যে মৃত্যু ১৫২৫ জনের। এ বছরে মোটরবাইক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে বলেও এডিজি ট্রাফিকের চিঠিতে বলা হয়েছে।

নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলছেন, ‘‘আমরা সারা বছর ধরেই এমন অভিযান চালাই। তবে পুজোর সময় বাইকের উপদ্রব বাড়ে। তাই এই সময় অভিযান আরও জোরদার করা হয়।” মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, ‘‘জেলা জুড়ে জোর তল্লাশি চলছে। আইন না মেনে যাঁরা গাড়ি চালাচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হচ্ছে।’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’, হেলমেট নিয়ে গাঁধীগিরি-সহ নানা পদক্ষেপ কি বিফলে গেল?

নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের দাবি, নাগাড়ে প্রচার ও নানা ধরনের কর্মসূচির ফলে হেলমেট পরার প্রবণতা আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। দুর্ঘটনার সংখ্যাও কমেছে। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জুলাই মাস পর্যন্ত জেলায় ৫২৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এ বছর জুলাই মাস পর্যন্ত তা কমে দাড়িয়েছে ৪৩৭টি। গত বছর জেলায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ২৮৩ জনের। এ বারে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২২৫ জন। নদিয়াতে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ৩০ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে।

সেই দাবি যে কতটা ‘বাস্তব’ তারও প্রমাণ মিলছে। বহরমপুরের কান্দি বাসস্ট্যান্ডে এক বাইককে থামায় পুলিশ। মাথায় হেলমেট নেই কেন?— প্রশ্ন করতেই বাইক চালকের উত্তর, ‘‘এই তো সামান্য রাস্তা যাব। তার জন্যও হেলমেট পরতে হবে?’’

কৃষ্ণনগরের চারগেট মোড়ে এক তরুণী স্কুটি চালাচ্ছিলেন হেলমেট না পরেই। তাঁকে থামানোর পরে পুলিশকে এটাও শুনতে হয়েছে, ‘‘হেলমেট পরা না পরাটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ ভাবে থামাতে পারেন না। জানেন, আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি!’’ যা শুনে এক পুলিশকর্মী বলছেন, ‘‘এরা নিজের ভালটা কবে বুঝবে, কে জানে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE