Advertisement
০১ মে ২০২৪

পুলিশের ছাড়পত্রেই ‘সবল’ হচ্ছে সেতু

সেতুর শুরুতেই গোটা গোটা অক্ষরে লেখা রয়েছে: ‘‘দুর্বল সেতু। আট টনের বেশি মালবাহী গাড়ির যাতায়াত নিষিদ্ধ।’’ কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে খাতায়-কলমে। বাস্তবের চিত্রটা বিলকুল ভিন্ন।

বিরাম নেই ভারি গাড়ি যাতায়াতের। — নিজস্ব চিত্র

বিরাম নেই ভারি গাড়ি যাতায়াতের। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৬ ০১:২৪
Share: Save:

সেতুর শুরুতেই গোটা গোটা অক্ষরে লেখা রয়েছে: ‘‘দুর্বল সেতু। আট টনের বেশি মালবাহী গাড়ির যাতায়াত নিষিদ্ধ।’’ কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে খাতায়-কলমে। বাস্তবের চিত্রটা বিলকুল ভিন্ন।

কী রকম? সকাল থেকে মাঝ রাত পর্যন্ত হামেশাই ওই নড়বড়ে সেতুতে উঠে পড়ছে দশ চাকার মালবোঝাই গাড়ি। লোকজনের অভিযোগ সেতুর গোড়াতেই দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকর্মীর হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিলেই কেল্লা ফতে। তাহলেই যে কোনও মালবাহী গাড়ি সেতুতে উঠতে পারবে। আর দুর্বল সেতুও হয়ে পড়ে ‘মজবুত’। অন্তত পুলিশের হিসেবে। এ ভাবেই পুলিশের কোঁচ়ড়ে টাকা দিয়ে দিনের পর দিন কান্দি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন কানাময়ূরাক্ষী নদীর উপরের সেতু দিয়ে মালভর্তি গাড়ি যাতায়াত করছে। এছা়ড়াও কান্দির রণগ্রাম মোড় সংলগ্ন দ্বারকা নদীর সেতুটিও দুর্বল। পূর্ত দফতরের বক্তব্য, ‘‘এই সেতু দিয়ে ভারী মালবাহী গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ। কারণ সেতুটি দুর্বল।’’ কিন্তু অভিযোগ, পুলিশের কেরামতিতে এই দুর্বল সেতুতে এন্তার মালবাহী গাড়ি উঠছে।

পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাত দশক আগে ওই সেতু দু’টি তৈরি হয়। বছর আটেক আগে সেতু দু’টির স্তম্ভ দূর্বল হয়ে যায়। তারপর পূর্ত দফতর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেতু দু’টি সংস্কার করে। কিন্তু সংস্কার করেও সেতু দুটির হাল পুরোপুরি ফেরানো সম্ভব হয়নি। পূর্ত দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানাচ্ছেন, সেতু দু’টি বহু দিনের পুরনো। ফলে সারিয়ে সে ভাবে লাভ হচ্ছে না। নতুন করে সেতু বানাতে হবে। সে ব্যাপারে চিঠি-চাপাটিও করা হচ্ছে। এখন ওই সেতু দিয়ে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মালভর্তি লরি সেতুর উপর উঠলেই সমস্যা। ঘন ঘন লরি চলাচল করলে সেতুটি দুর্বলতর হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি জেলার পুলিশ প্রশাসনকে জানান‌ো হয়েছে।

কিন্তু অভিযোগ, এখানে রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় রয়েছে। ময়ূরাক্ষী নদী থেকে বালি বোঝাই অথবা বীরভূমের পাহাড় থেকে পাথর ভর্তি ট্রাক বা ডাম্পার বড়ঞার কুলি মোড় থেকে বহরমপুরে যাওয়ার দু’টি রাস্তা রয়েছে। খড়গ্রাম হয়ে বহরমপুরে যেতে পাক্কা ৫৫ কিলোমিটার পথ পেরোতে হয়। আর কান্দি হয়ে বহরমপুরে যেতে মাত্র ৩০ কিলোমিটার পথ পেরোতে হয়। ফলে পাথর ও বালির লরি চালকেরা কান্দির দুর্বল সেতু পেরিয়ে বহরমপুরে যান। কী ভাবে?

পুলিশের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘গাড়ি যেমন তেমন টাকা। ছয় চাকা থেকে দশ চাকার বালি বোঝাই ট্রাকের ক্ষেত্রে দেড়শো থেকে দু’শো টাকা নেওয়া হয়। আর পাথর বোঝাই ট্রাক চালকেরা সেতু পেরোতে দু’শো থেকে তিনশো টাকা দেয়।’’ লরি চালক জাফর আলি বা সঞ্জয় দলুই বলেন, “এমনিতে সেতুটি দুর্বল। কিন্তু পুলিশকে টাকা দিলেই সেতু সবল হয়ে যাচ্ছে। আর টাকা না দিলেই কুড়ি কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে। আর ঘুরপথে গেলে পুলিশ হেনস্থা করছে। পুলিশ চাইছে চালকেরা এই দুর্বল সেতু দিয়েই গাড়ি নিয়ে যান। তাই আমরা বাধ্য হয়ে ওই দুর্বল সেতু দিয়ে যাচ্ছি।”

দূর্বল সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের খবর পেয়েছেন বলে জানান কান্দির মহকুমাশাসক বিজিন কৃষ্ণ। বিজিনবাবু বলেন, “এমনটা মেনে নেওয়া যায় না। আমি পুলিশকে বলে ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে নিজে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।” জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “ওই সেতু দু’টি দিয়ে ভারী যানবাহন যাতায়াত করা নিষেধ। তারপরেও এমন কাজ হচ্ছে বলে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

মারধরে ধৃত। পঞ্চায়েতেরই এক কর্মীকে মারধরের অভিযোগে সোমবার রাতে পুলিশ সমশেরগঞ্জের তিনপাকুড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান মহম্মদ গোলাব হোসেনকে গ্রেফতার করল। সেই সঙ্গে ওই পঞ্চায়েতের এক সিপিএম সদস্যকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

পুলিশ জানায়, ৩১ মে বিকেলে পঞ্চায়েতেরই এক অস্থায়ী কর্মী মোবাশ্বের হককে মারধর করার অভিযোগ ওঠে ধৃতদের বিরুদ্ধে। তিনি তৃণমূল সমর্থক। এ বিষয়ে তিনি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bridge Police driver
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE