গঙ্গা-সাফাই অভিযান। ফরাক্কায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
বর্ষবরণ বলে কথা!
চাট্টি খানাপিনা হবে, ডিজের দাপটে এলাকা কাঁপবে। তারপর চারদিকে প্লাস্টিকের থালা, গেলাস, উচ্ছিষ্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে শেষ হবে পিকনিক। বছরের প্রথম দিনে বেশির ভাগ পিকনিক দলগুলির সৌজন্যে এত দিন এমন ছবিই দেখে এসেছে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ। এ বার অবশ্য সেই চেনা ছক থেকে বেরিয়ে এল ফরাক্কা ও হোগলবেড়িয়া।
বছরের প্রথম দিন রবিবার হওয়াতে পিকনিক স্পটগুলোতে ভিড় ভালই ছিল। ফরাক্কায় গঙ্গা পাড় ও বনাঞ্চলে এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মালদহ থেকে ১২ জন ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে পিকনিক করতে এসেছিলেন পেশায় স্কুল শিক্ষক এমদাদুল হক।
কিন্তু পিকনিক স্পটে ঢোকার মুখেই গাড়ি থামাতে হল এমদাদুলকে। গাড়ির কাছে এগিয়ে এসে ব্যরাজের এক কর্মী অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাইলেন, ‘‘স্যার নিশ্চয় পিকনিক করতেই এসেছেন। আপনাদের সঙ্গে প্লাস্টিকের কোনও থালা-বাটি কিংবা গেলাস নেই তো?’’
এমদাদুল অবাক। এ সব সঙ্গে না আনলে আর পিকনিক হবে কী করে? তারপরে ফের ওই কর্মীর আবেদন, ‘‘এগুলো রেখে যান। যাওয়ার সময় ফিরিয়ে দেব। আপাতত শালপাতা ব্যবহার করুন। দূষণ যাতে না হয় সে দিকটাও তো খেয়াল রাখতে হবে।’’
ওই শিক্ষক কিন্তু মোটেই রাগ করেননি। বরং বলছেন, ‘‘ফের বাজার থেকে শালপাতা, গেলাসের ব্যবস্থা করতে একটু সময় লেগে গেল ঠিকই। কিন্তু এই ব্যবস্থার প্রশংসা না করে পারছি না।’’
সীমান্তের হোগলবেড়িয়া কাছারিপাড়ায় পদ্মার পাড়ে বছর কয়েক আগে পিকনিক স্পট গড়ে তুলেছে কাছারিপাড়া সীমান্ত ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। এ দিন সেখানেও ভিড় ভেঙে পড়েছিল। সবে লোকজন এসে পিকনিকের আয়োজন শুরু করেছেন, সেই সময় সংস্থার সদস্যেরা এসে সবাইকে অনুরোধ করেন, ‘‘প্লাস্টিক ব্যবহার করবেন না। দয়া করে সাউন্ড বক্সের আওয়াজও নিয়ন্ত্রণে রাখুন।’’
কাছারিপাড়ায় পিকনিক করতে এসেছিল ডোমকলের কুপিলা ইয়ং স্টার ক্লাব। ক্লাবের কর্মকর্তা সাবুল হোসেন মণ্ডল বলছেন, ‘‘প্রথমে একটু অবাক হয়েছিলাম। পরে ভেবে দেখলাম, সঠিক সিদ্ধান্ত। আমরাও এ দিন প্লাস্টিক নয়, শালপাতার থালা ব্যবহার করেছি। আমাদের গ্রামের আরও যাঁরা এখানে আসবেন, তাঁদেরও সতর্ক করব।’’
কাছারিপাড়ার ওই সোসাইটির সভাপতি শঙ্কর মণ্ডল জানান, দূষণ রুখতে বছরের প্রথম দিন থেকে তাঁরা প্রচার চালাচ্ছেন। আর ফরাক্কার জেনারেল ম্যানেজার অমরেন্দ্রকুমার সিংহ বলছেন, ‘‘প্রতি বছরই পিকনিকের সময় গঙ্গার পাড় জুড়ে আবর্জনার স্তূপ জমে ওঠে। দুর্গন্ধ ছড়ায়। নদী দূষিত হয়। সে সব রুখতে এই পদক্ষেপ। ফরাক্কা সাফাই অভিযান সমিতি গড়ে ব্যারাজের কর্মীরাই এই দিকটা দেখছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy