Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আঁধার পথে উড়ে আসে শিস

পুরসভা চত্বরে সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন বেলডাঙার পুরপ্রধান ভরত ঝাওর। নাগরিকদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।পুরসভা চত্বরে সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন বেলডাঙার পুরপ্রধান ভরত ঝাওর। নাগরিকদের নানা দাবি-দাওয়া, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।

চেনা যানজট। বেলডাঙার পাঁচরাহা রেলগেটে তোলা নিজস্ব চিত্র।

চেনা যানজট। বেলডাঙার পাঁচরাহা রেলগেটে তোলা নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০২:০১
Share: Save:

•শহরে প্রায়ই ব্যবসায়ীরা নানা ভাবে ক্রেতাদের দামের দিক থেকে ঠকান। তা নিয়ে অভিযোগেরও শেষ নেই। পুরসভা কি এ বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কিংবা ন্যায্য মূল্যের দোকান খোলার কথা ভাবছে? কোনও সমবায় সমিতি যদি ন্যায্য মূল্যের দোকান খোলে তাহলে কি পুরসভা তাদের সাহায্য করবে?

শঙ্কর চৌধুরী, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড

আমাদের এই শহর মহকুমা কিংবা জেলা সদর নয়। পুরসভায় এলাকায় জায়গার অভাব রয়েছে। সমস্যা রয়েছের অর্থেরও। তবুও আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। তবে কোনও সমবায় সমিতি যদি ন্যায্য মূল্যের দোকান তৈরি করে তাহলে আমরা সবদিক থেকে তাদের সহযোগিতা করব। শহরের মানুষও উপকৃত হবেন।

•বেলডাঙা শহরে রাস্তার উপরে থাকা বিদ্যুতের তার বহু দিন ধরে বদলানো হয়নি। উঁচুও করা হয়নি। বেলডাঙার কার্তিক লড়াই একটা বড় অনুষ্ঠান। ওই তারের কারণে বড় বড় প্রতিমা নিয়ে যেতে খুব সমস্যা হয়। পুরসভা এ ব্যাপারে উদ্যোগী হলে ভাল হয়।

অমিত রায়, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড

আমরা এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েছি। ২০১৮ সালে মধ্যে শহরের বেশির ভাগ বিদ্যুতের তার মাটির তলা নিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন এই সমস্যা আর থাকবে না। তবে কার্তিক লড়াইয়ের সময় প্রতিমার উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ না করলে বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। সে ব্যাপারে পুজো উদ্যোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে।

•আমাদের শহর থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে গঙ্গা থাকলেও সেখানে কোনও স্নানের ঘাট নেই। শবদাহ করতে হয় খোলা আকাশের নীচে। ঘাট ও ইলেকট্রিক চুল্লির ব্যবস্থা করলে শহরের বাসিন্দাদের ২০ কিলোমিটার দূরে বহরমপুর যেতে হয় না। এ ব্যাপারে পুরসভা কী ভাবছে?

শিবশঙ্কর দাস, ১১ নম্বর ওয়ার্ড

বিষয়টি নিয়ে আমরা বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে চুল্লি চালুর কাজ শুরু করা হবে। সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলে স্নানের ঘাটও তৈরি করা হবে।

• স্টেশনের কাছে রেলবাজারের রাস্তায় একটি সব্জি বাজার বসে। ফলে প্রতিদিন সকালে রাস্তায় যানজট হয়। পুরসভার ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়া, অফিস যাত্রী, পথচারীদের ওই রাস্তা দিয়ে যেতে সমস্যা হয়। কী ব্যবস্থা নিয়েছে পুরসভা?

রেবতীকুমার দে ২ নম্বর ওয়ার্ড


এমনই হাল বেলডাঙার রাস্তার।

আগের আউটডোরের মাঠ এলাকায় একটা স্থায়ী বাজার নির্মাণ করা হচ্ছে। সেটা হয়ে গেলেই ওই রাস্তার বাজারকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন এই যানজট আর থাকবে না।

•বেলডাঙা ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল। সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। মাঝে একবার ড্রেনের কাজ শুরুও হয়েছিল। তারপর বন্ধও হয়ে যায়।

আরফাত শেখ, ৬ নম্বর ওয়ার্ড

জল জমার সমস্যা ওই এলাকায় আছে। আমরা সাধ্য মতো নিকাশির ব্যবস্থাও করছি। কিন্তু ড্রেনের কাজ শুরু হলেও তা শেষ হল না কেন তা আমার জানা নেই। তবে ওই অসম্পূর্ণ কাজ আমরা শেষ করব।

•গোবিন্দসুন্দরী বিদ্যাপীঠ ও নতুন হাসপাতাল যাওয়ার রাস্তার মুখে জুগিবাড়ি এলাকায় সারা বছর ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা চলে। রাস্তা আটকে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যানজট তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে পুরসভা কোনও পদক্ষেপ করলে ভাল হয়।

গোলা‌‌ম সৌকত বিশ্বাস, ৬ নম্বর ওয়ার্ড

বিষয়টি আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। কথা বলব ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গেও।

• বেলডাঙা ছাপাখানা মোড় ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ লাগোয়া এলাকার রাস্তা বেশ চওড়া। কিন্তু সেখানে প্রচুর লরি দাঁড়িয়ে থাকে। ওই এলাকায় তিনটি স্কুল রয়েছে। ফলে সেখানেও যানজট তৈরি হয়। শিশু ও অভিভাবকেরা তো বটেই, সমস্যার অন্ত থাকে না পথচারীদেরও।

সৌমেন পাণ্ডে, ৪ নম্বর ওয়ার্ড

না, এ ভাবে তো লড়ি দাঁড়িয়ে থাকার কথায় নয়। ব্যবসায়ী সংগঠন ও প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে এটা অবিলম্বে বন্ধ করব।

•শহরে অনেকগুলি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র আছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে প্রাচীর নেই। রাতে সেখানে আলোও জ্বলে না। তারই সুবিধা নিয়ে সেখানে অসামাজিক কাজকর্ম চলে। রাতে টিউশন নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে খুবই সমস্যা হয়। উড়ে আসে কুরুচিকর মন্তব্য। পুরসভার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ করলে আমরা নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারি।

তামান্না আফরোজ, ৮ নম্বর ওয়ার্ড

শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে অবিলম্বে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হবে। আলোরও ব্যবস্থা করা হবে। তবে ওই এলাকায় কারা অসামাজিক কাজকর্ম ও কুরুচিকর মন্তব্য করে সে ব্যাপারে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলব। এটা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না।

•আমাদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড দিয়ে পাশের ওয়ার্ডগুলির জল ও আবজর্না বের হয়। কিন্তু ঠিকমতো নালাগুলির সংস্কার না হওয়ায় আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এই ওয়ার্ডে একটি মাত্র ইদগাহ রয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।

মজিবর রহমান, ৯ নম্বর ওয়ার্ড

এই সমস্যার কথা শুনেছি। অবিলম্বে নালাগুলি সংস্কার করা হবে। ওই এলাকায় আলো ও পানীয় জলের সমস্যা যাতে মিটে যায় সে ব্যপারেও নজর দেওয়া হবে।

•পুরসভার অন্তর্গত একটি দুগ্ধ প্রকল্প- সহ বেশ কিছু সম্পত্তি বেদখ‌ল হয়ে যাচ্ছে। সেটা রুখতে পুরসভা কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?

সন্তোষ দাস, ২ নম্বর ওয়ার্ড

পুরসভা এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে। পুলিশকে বিষয়টি জানানোর ফলে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকেও বেআইনি দখল রুখতে কড়া নজর রাখা হচ্ছে।

• বেলডাঙা শহরের ছাপাখানা, হাসপাতাল রোড, হাটপাড়া এলাকায় মোটরবাইকের দৌরাত্ম্যে মানুষ অতিষ্ঠ। বেপরোয়া ভাবে বাইক চালানোর ফলে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় লাগে। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পুরসভা এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করছে?

শেফালি দে, ৩ নম্বর ওয়ার্ড

এই বিষয়ে আমাদের কাছেও বেশ কিছু অভিযোগ এসেছিল। পুরসভার পক্ষ থেকে বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হয়েছে। এখন বাইক দৌরাত্ম্য আগের থেকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে।

• এই এলাকায় দু’হাজারেরও বেশি টোটো চলে। তার কোনও নিয়ন্ত্রণ আছে বলে তো মনে হয় না। ১৮ বছরের কম বয়সের ছেলেরাও টোটো চালাচ্ছে। প্রায়ই দুর্ঘটনাও ঘটছে। বহু গাড়িতে সন্ধ্যার পরে আলোও জ্বলে না। এই বিষয়ে পুরসভা কী ব্যবস্থা নিয়েছে?

রেহেনা বেগম, ৮ নম্বর ওয়ার্ড

সত্যিই এটা শহরের একটা বড় সমস্যা। টোটোর ব্যাপারে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ করছিলাম। কিন্তু আরটিও আমাদের জানিয়েছে, রিকশা ও ভ্যান ছাড়া বাকি সব গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। তবে আমরা রাস্তায় নেমে নাবালক কোনও চালক দেখলে পুলিশকে খবর দিই।

•শহরে কোনও সাংস্কৃতিক মঞ্চ নেই। নাটক দেখার মতো কোনও প্রেক্ষাগৃহও নেই।

বিশু দাস, ২ নম্বর ওয়ার্ড

পুরভবনের পাশে মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতেই পারে। আর প্রেক্ষাগৃহের ব্যাপারেও আমাদের ভাবনাচিন্তা রয়েছে।

•এই শহরে কোনও বড় শিল্প নেই। অথচ সুগার মিলটি বহু দিন বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। সেটা চালু হলে তো অনেকের কর্মসংস্থান হয়। বিষয়টি নিয়ে কি পুরসভা কিছু ভাবছে?

অসিত সাহা, ৩ নম্বর ওয়ার্ড

শহরে কর্মসংস্থান বাড়লে তো খুবই ভাল হয়। কিন্তু সুগার মিলের ব্যাপারে পুরসভার কিছু করার নেই। সরকার উদ্যোগী হয়ে মিলটি চালু করলে তো ভালই হয়।

•বেলডাঙায় কোনও খেলার মাঠ নেই। গোবিন্দ সুন্দরীর মাঠ, কলেজ মাঠ, শ্রীশচন্দ্র স্কুলের মাঠ খেলার উপযোগী নয়। তার উপরে পিওয়াইসি-র মাঠ দখল হয়ে গিয়েছে। এলাকার ছেলেমেয়েরা কোথায় খেলবে?

রাজা ঘোষ, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড

স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মাঠগুলি সংস্কার করার কথা ভাবা হচ্ছে।

•আমাদের এলাকায় বড় জলাশয় ভরাট করে বেশ কিছু বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এটা তো বেআইনি। পুরসভা কি এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করছে?

হাসিবুর রহমান, ৪ নম্বর ওয়ার্ড

আমরা ওই ব্যাপারে নোটিশ পাঠিয়েছি। ওই এলাকায় যাতে আর কোনও জলাশয় ভরাট না হয় সে ব্যাপারে আমরা কড়া নজর রাখছি।

•বেলডাঙা শহরের ১, ২, ৩, ৯ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে পানীয় জল ঠিক মতো মেলে না। গ্রীষ্মকালে সেই সমস্যা আরও বেড়ে যায়।

মৌমিতা সরকার, ২ নম্বর ওয়ার্ড

১৩ নম্বর ওয়ার্ড লাগোয়া এলাকায় একটা রিজার্ভার তৈরি করা হয়েছে। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আরও একটি আন্ডার গ্রাউন্ড রির্জাভার তৈরির কাজ শুরু হবে। সেটা হয়ে গেলেই এই সমস্যা কিছুটা হলেও মিটবে।

• প্লাস্টিক বন্ধ করার কথা বার বার বলা হলেও শহরে রমরমিয়ে চলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। পুরসভা এটা একেবারেই বন্ধ করতে পারছে না কেন?

পায়েল মণ্ডল, ২ নম্বর ওয়ার্ড

আমরা শহরে প্লাস্টিক বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। কাউন্সিলররাও এলাকায় ঘুরে ঘুরে লোকজনকে সচেতন করছেন। পুরনাগরিকদেরও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করছি। সবাই মিলে চেষ্টা করলেই শহরকে প্লাস্টিকমুক্ত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

state news question answer problems
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE