Advertisement
E-Paper

ধর্ষণের নালিশ, জরিমানায় পার সালিশি সভায়

ফের ধর্ষণের অভিযোগ। ফের ‘পুলিশি ঝামেলায়’ না গিয়ে সালিশিতে মিটমাটের চেষ্টা। এ বার মুর্শিদাবাদের সুতি থানার ডিহিগ্রামে। সম্প্রতি রাজ্যের বেশ ক’টি ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে থানা-পুলিশ না করে সালিশি সভাতেই মিটমাট করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেই সব সভায় উপস্থিত থেকেছেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও। যদিও এই ধরনের সালিশি সভার আইনি বৈধতা নেই।

বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৬

ফের ধর্ষণের অভিযোগ। ফের ‘পুলিশি ঝামেলায়’ না গিয়ে সালিশিতে মিটমাটের চেষ্টা। এ বার মুর্শিদাবাদের সুতি থানার ডিহিগ্রামে।

সম্প্রতি রাজ্যের বেশ ক’টি ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে থানা-পুলিশ না করে সালিশি সভাতেই মিটমাট করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেই সব সভায় উপস্থিত থেকেছেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরাও। যদিও এই ধরনের সালিশি সভার আইনি বৈধতা নেই। কিছু দিন আগেই জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে এমনই এক সালিশি সভা ঘিরে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য-রাজনীতি।

ওই সালিশি সভায় বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করেছিল মেয়ে। তার পরেই সেই সভা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় ওই কিশোরী। পর দিন তার দেহ উদ্ধার হয়। ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ধূপগুড়ির সালিশি সভায় সক্রিয় হয়েছিলেন দলের কাউন্সিলরের স্বামী-সহ স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা। সুতি থানা থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে ডিহিগ্রামে সেই একই ভূমিকা পালন করতে দেখা গেল সিপিএমের এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যকে। সেখানে মাত্র ১০ বার কান ধরে ওঠবোস এবং ৩৫ হাজার টাকা জরিমানার নিদান দিয়েই অভিযুক্তকে ‘খালাস’ দেন মাতব্বরেরা। অভিযুক্তর তরফে দশ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এবং তা রয়েছে সংশ্লিষ্ট জগতাই ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই সিপিএম সদস্যের জিম্মায়।

ধূপগুড়ির সালিশি সভা নিয়ে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নিলেও এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। বৃহস্পতিবারের ওই সালিশি সভার কথা জানতে পেরে ক্ষুব্ধ মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, “ধর্ষণের মতো ঘটনায় সালিশি কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। এ সবই হল অভিযুক্তকে বাঁচানোর চেষ্টা! পুলিশকে ঘটনার তদন্ত করে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে সালিশিতে যাঁরা বিচার করেছেন, ধর্ষণে অভিযুক্তের সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা রুজু করা হবে।” পুলিশ সুপারের নির্দেশে রবিবার গ্রামে পুলিশ গিয়ে ওই কিশোরীর পরিবার, ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবক ও সালিশি সভায় উপস্থিত সকলকেই থানায় দেখা করার কথা বলে এসেছে। যদিও ওই কিশোরীর পরিবার রাত পর্যন্ত থানায় ধর্ষণের অভিযোগ করেনি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই কিশোরী তার মায়ের সঙ্গে ডিহিগ্রামে মামার বাড়িতে থাকে। অভিযোগ, বুধবার সন্ধ্যায় ‘মা ডাকছে’ বলে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় পড়শি যুবক। রাতে মেয়েটি আর ফেরেনি। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে অভিযুক্ত যুবকের বাড়ির সামনে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই কিশোরীর মা বলেন, “বৃহস্পতিবারই আমি মেয়েকে নিয়ে থানায় যাচ্ছিলাম। কিন্তু গ্রামের সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য আশরাফুল শেখ এবং কিছু মাতব্বর (যাঁরা এলাকায় সিপিএম সমর্থক বলেই পরিচিত) থানার কাছ থেকে আমাদের ‘গ্রামেই মিটমাট করে দেব’ বলে জোর করে গ্রামে ফিরিয়ে আনে। রাতেই বসে সালিশি সভা।”

ওই সভার কথা কবুল করে নিয়ে স্থানীয় মাতব্বরদের অন্যতম ফিটু শেখ জানান, ওই সভায় ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে অভিযুক্তের। থানায় না গিয়ে সালিশি কেন, এ প্রশ্নের জবাবে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়া ফিটুর দাবি, ‘‘আমাকে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে ডাকা হয়েছিল বলেই গিয়েছিলাম। আমি কোনও বিচার করিনি বা রায় দিইনি।” ওই কিশোরীর মামা বলেন, “বিচার মেনে ওঠবোস করে ১০ হাজার টাকা মিটিয়ে দেয় অভিযুক্ত ওই যুবক। সে টাকাও রাখা আছে সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে। এই সালিশিতে আমাদের মত ছিল না। কিন্তু, গ্রামের মাতব্বরদের কথা না মেনে তো উপায়ও নেই! তাই মুখ বুজে থাকতে বাধ্য হয়েছি।”

এ দিন গ্রামে গিয়ে আশরাফুল শেখের দেখা মেলেনি। বহুবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।

biman hazra rape suti dihigram rape case complaint relief state news online state news fine mursidabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy