নতুন রেশন কার্ড চেয়ে আবেদন করেছেন সাড়ে ৩২ হাজারেরও বেশি মানুষ। ব্লক অফিসে সাড়ে চার হাজার কার্ড এসে পড়েও রয়েছে। কিন্তু আবেদনকারীরা তা পাচ্ছেন না। যা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। সুতি-২ ব্লকের ঘটনা।
খাদ্য দফতরের কর্মীদের একাংশ জানান, ব্লক অফিসে প্রায় সাড়ে চার হাজার কার্ড এসে পড়ে রয়েছে। নতুন কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন ৩২ হাজার ৬০০ জন মানুষ। বিডিওর অনুমতি না পাওয়ায় সে সব কার্ড বিলি করা যাচ্ছে না।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আনিকুল ইসলামও কার্ড বিলি না হওয়ার জন্য বিডিও দীপঙ্কর রায় ও খাদ্য দফতরের সহকারী পরিদর্শকের বিরুদ্ধের উপর দায় চাপিয়েছেন। তাঁর দাবি, মানুষের সুবিধার জন্য ব্লক অফিস থেকে প্রতি সপ্তাহে বুধ ও বৃহস্পতিবার খাদ্য দফতরের এক সহকারী পরিদর্শকের রেশন কার্ড বিলি করার কথা। ২০১৩ সাল থেকে হাজার হাজার মানুষ আবেদন করে আসছেন। আট মাস হল ব্লক অফিসে দফায় দফায় সাড়ে ৪ হাজার রেশন কার্ড এসে পৌঁচেছে। কিন্তু কার্ড বিলি করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এ বার পথে নেমে মানুষকে বলব রেশন কার্ড থাকা সত্ত্বেও তা দেওয়া হচ্ছে না।’’
হরিপুরের আদরি বিবি এদিন এসেছিলেন ব্লক অফিসে রেশন কার্ডের জন্য। ঘুরে যেতে হয়েছে তাঁকেও। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় দু’বছর হল দরখাস্ত জমা দিয়েছি। কার্ড এসেছে শুনে অফিসে এসেছিলাম। কিন্তু অফিসের লোকেরা বলল বিডিও নির্দেশ না দিলে কার্ড দেওয়া হবে না।’’
একই কথা জানান জগতাই গ্রামের উজ্জ্বল বিশ্বাস, অরঙ্গাবাদের মেঘনাথ সিংহ, জগতাইয়ের চন্দন মণ্ডলেরা। অরঙ্গাবাদের এক বৃদ্ধ ব্লক অফিসেই বসেই বলে ফেললেন, ‘‘আরে মশাই, ভোটের মুখে কার্ড দেওয়া হবে বলেই এখন আটকে রাখা হয়েছে। আমরা কী সে সব বুঝি না।’’
খাদ্য দফতরের সহকারী পরিদর্শক ভাস্কর রায়কে মোবাইলে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘‘কার্ডের সরবরাহ কম। তাই সমস্যা আছে। মোবাইলে সব বলা যাবে না।’’ আর সুতি-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এ নিয়ে কোথাও কোনও অভিযোগ করেছেন বলে তাঁর জানা নেই বলে তিনি জানান।
খাদ্য দফতরের জেলা আধিকারিক দেবমাল্য বসু জানান, আবেদনের ভিত্তিতে সব জায়গায় নতুন রেশন কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এটা একটি ধারাবাহিক ব্যবস্থা। আবেদন করলেই নতুন রেশন কার্ড মেলে না। নথিপত্র দেখে যাচাই করার পরই সে আবেদন মঞ্জুর করা হয়। সাধারণ ভাবে খাদ্য দফতরের মহকুমা আধিকারিকেরা তাঁদের প্রয়োজন মতো ‘রিকুইজিশন’ পাঠালে জেলা দফতর রেশন কার্ড পাঠানোর ব্যবস্থা করে। তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে কোনও মহকুমা আধিকারিকই আমার দফতরে রিকুইজিশন দিয়ে রেশন কার্ড চেয়ে পাঠাননি।’’
খাদ্য দফতরের জঙ্গিপুর মহকুমার আধিকারিক প্রসেনজিৎ সাহা বলেন, ‘‘ওই ব্লকে কিছু সমস্যা হয়েছে। তাই রেশন কার্ড বিলির কাজ আটকে রয়েছে। তবে কার্ড লেখার কাজ চলছে। যে যেমন আবেদন করেছেন সেই মতোই কার্ড বিলি করতে বলা হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘আসলে কোনও কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তি চাইছেন কার্ড বিলি হোক তাঁদের হাত দিয়ে। কিন্তু সরকারি গাইড লাইনের বাইরে তো যাওয়া যাবে না। সমস্ত বিষয়টিই ব্লকের বিডিও দেখছেন।’’
বিডিও দীপঙ্কর রায় অবশ্য জানান, ব্লক অফিস থেকে রেশন কার্ড দেওয়া হলেও তবে তা দেন খাদ্য দফতরের অফিসারেরা। এ ব্যাপারে সব দায়িত্ব তাঁদের। তাই এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে বলতে পারব রেশন কার্ড বিলির বিষয়টি কী অবস্থায় রয়েছে।’’
এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক কারসাজি দেখছেন ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘বহুবার বিডিওকে বলা হয়েছে। প্রতিবারই তিনি বলছেন ঠিক সময়ে দেওয়া হবে। আসলে বিধানসভা ভোটের সময় কার্ড বিলি করে ভোট কেনার জন্যই বিডিও অফিসগুলিকে ব্যবহার করা হবে। সে জন্য রেশন কার্ড বিলির কাজ এ ভাবে আটকে রাখা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy