চরের গ্রামের বাসিন্দা আমরুল হক পাননি ভাতা। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
শুখা মরশুমে ধুধু বালুচর, বর্ষায় দাওয়া পর্যন্ত হানা দেয় পদ্মার জল। কিন্তু সরকারি পরিষেবা জলঙ্গির উদয়নগর খণ্ড, চর পরাশপুরের মানুষের দুয়ারে পৌঁছয় না। কাছাকাছি কোনও এলাকায় দুয়ারে সরকারের শিবির হলে, নদী বা বালির চর ঠেলে তাঁদেরই যেতে হয় সেখানে। কিন্তু সেই রাস্তা পার হওয়া বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের কাছে এক রকম অসম্ভব। তাই উদয়নগর খণ্ডের বিশেষ ভাবে সক্ষম বৃদ্ধ আমরুল হক সরকারি ভাতা পাচ্ছেন না, চর পরাশপুরের জৈনব বেওয়ার নথিপত্র সংশোধন হচ্ছে না দীর্ঘ দিন ধরে।
কিন্তু দুয়ারে সরকার-এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে একেবারে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে যাওয়া। তবু চর এলাকায় কোনও ক্যাম্প হচ্ছে না কেন? জলঙ্গির বিডিও শোভন দাস বলেন, ‘‘আগের বছরও আমরা চর এলাকায় মোবাইল পরিষেবার মাধ্যমে দুয়ারে সরকারের কাজ চালিয়েছিলাম। এ বছরও সেই ভাবেই হবে। যারা দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে পৌঁছতে পারবেন না, তাদের কাছে আমাদের প্রতিনিধিরা পৌঁছে যাবে। ফলে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ ওই দুই চরই মূল ভূখণ্ডে ঘোষপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। পঞ্চায়েতের প্রধান বেবি নাজনিনও বলছেন, ‘‘এ বছর আমাদের দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প শেষ হওয়ার পারে বিডিও-র কাছে আবেদন জানাব চর এলাকায় একটা ক্যাম্প করার জন্য।’’
তবে চরের বাসিন্দাদের দাবি, বছরে এক বার মোবাইল ক্যাম্প করলে সমস্যা মিটবে না। তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, এক বারে সবার সব সমস্যা মেটে না। বারবার তাগাদা দিতে হয়। সেটা করতে যাওয়াটাই তো সমস্যা।
যেমন, প্রায় বছর ১৫ আগে শরীরের অসুস্থ হয়ে পড়ে হাঁটাচলা এক রকম বন্ধ আমরুল হকের। তিনি বলছেন, ‘‘গত বছর বিডিও অফিসের তরফে এক জন এসেছিলেন বাড়িতে। কাগজপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরে আর কোনও খোঁজ খবর মেলেনি। আমার প্রতিবন্ধী ভাতাটাও হয়নি। আমি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।’’ তাঁর প্রতিবেশী দুলুজান বেওয়ার দাবি, ‘‘আট মাস আগে স্বামী মারা গিয়েছেন। বিধবা ভাতার জন্য আবেদনই করতে পারিনি। কিন্তু বার্ধক্য ভাতার জন্য আবেদন করেও লাভ হয়নি। আমার পক্ষে ওই রাস্তা পার করে নিয়মিত খোঁজ নিতে যাওয়া অসম্ভব।’’ পাশের চর পরাশপুরের জৈনব বেওয়ার দাবি, ‘‘আমার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রে ভুল রয়েছে। গ্রামে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প হলে অসুবিধের কথাটা বলতে পারতাম। কিন্তু নদী পেরিয়ে ঘোষপাড়া স্কুলে গিয়ে আমার পক্ষে ওই কাজ করা সম্ভব নয়।’’ এলাকার সাংসদ তৃণমূলের আবু তাহের খান বলেন, ‘‘মোবাইল ক্যাম্প নয়, দুয়ারে সরকারের শিবির করার জন্যই আমি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুত কথা বলব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy