Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ইদের বাজার জমল কই, আক্ষেপ ব্যবসায়ীদের

সপ্তাহ দুয়েকের টানা বৃষ্টির পরে আকাশের মুখে হাসি ফুটলেও মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ীদের কিন্তু মুখ ভার! তাঁদের আক্ষেপ, জেলার কোথাও ইদের বাজার সে ভাবে জমল না। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত বছরের তুলনায় এ বারের ইদের কেনাবেচা প্রায় ৩০ ভাগ কম হয়েছে।

শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৩
Share: Save:

সপ্তাহ দুয়েকের টানা বৃষ্টির পরে আকাশের মুখে হাসি ফুটলেও মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ীদের কিন্তু মুখ ভার! তাঁদের আক্ষেপ, জেলার কোথাও ইদের বাজার সে ভাবে জমল না। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত বছরের তুলনায় এ বারের ইদের কেনাবেচা প্রায় ৩০ ভাগ কম হয়েছে। তাঁদের মতে, এক দিকে চিটফান্ডের প্রতারণা ও অন্য দিকে কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম না মেলার ফলেই এমনটা ঘটেছে। বহরমপুর ক্লথ মার্চেন্ট অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই দুইয়ের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে ইদের বাজারে। ফলে এ বারের বাজারে মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী ও ভিন্‌রাজ্য থেকে বাড়ি ফেরা শ্রমিকদের নিয়েই তুষ্ট থাকতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।’’

মুর্শিদাবাদ জেলায় কোনও বড় শিল্প নেই। একদা কাশিমবাজারের ছিল বস্ত্র ও সুতোর মিল। নাম ছিল মণীন্দ্র মিল ও বিটি মিল। সেই মিলের চিমনি দিয়ে আর ধোঁয়া বের হয় না। কবেই তার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বেলডাঙার প্রাচীন চিনি কলও বন্ধ সেই কবে থেকে। ফলে মুর্শিদাবাদ জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। এ ছাড়া আরও দু’টি বিষয়ের উপর এ জেলার অর্থনীতি নির্ভরশীল। পুরুষরা রাজ্যের বাইরে গিয়ে মূলত নির্মাণ শিল্পের দিনমজুরি করেন আর মহিলারা বাড়িতে বসে বিড়ি বাঁধেন। এই শ্রেণির পরিবারের ইদের বাজার হয় ঠিক উৎসবের আগের দিন। কারণ দিনমজুরি করে জমানো অর্থ নিয়ে রাজ্যের বাইরে থেকে তাঁরা বাড়ি ফেরেন ইদের ঠিক আগে। ফলে এই শ্রেণির ক্রেতারা ভিড় করেছেন একেবারে শেষ মুহূর্তে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘‘এইটুকুই যা রক্ষে!’’

লালগোলার অধিকাংশ বাসিন্দাই হয় বিড়ি শ্রমিক, নয়তো রাজমিস্ত্রি। লালগোলার মল্লিকপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী সারজেমান শেখের অধীনে রয়েছেন ৬ জন হকার। লালগোলা ও ভগবানগোলার গ্রামে তাঁরা জামা-কাপড় ফেরি করেন। তাঁদের ক্রেতা মূলত বিড়ি শ্রমিক ও রাজমিস্ত্রি পরিবার। সারজেমান শেখ বলেন, ‘‘টানা বৃষ্টিতে রাজমিস্ত্রি থেকে শুরু করে দিনমজুর কারও কাজ জোটেনি। বৃষ্টিতে সব্জি খেতে জল জমে গিয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। ফলে ক্রেতা নেই গ্রামে। সাইকেলে করে হকাররা দিনভর গ্রাম ঘুরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।’’

বহরমপুর শহরের স্বর্ণময়ী এলাকার বিশিষ্ট বস্ত্র ব্যবয়াসায়ী সুমন মুখোপাধ্যায়ের আফশোস, ‘‘টানা বৃষ্টিতে সপ্তাহ খানেক ধরে বাজারে মাছি তাড়াতে হয়েছে। মেঘ কাটার পরেও সেভাবে ক্রেতার দেখা মিলল না।’’ অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘বিভিন্ন চিটফান্ডে টাকা রেখে প্রতারিত হয়ে মফস্‌সল ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড়সড় আঘাত নেমেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধান, আম ও লিচুর দাম না পাওয়া।’’ এক কুইন্টাল ধানের দাম সরকারি মতে ১৪২০ টাকা হলেও খোলা বাজারে ১০৫০ টাকার বেশি দাম মিলছে না। কৃষকদের অভি়যোগ, সরকারি দরে ধান বিক্রি করতে গিয়ে নানা হ্যাপার মুখে পড়তে হয় বলে সরকারি পথ মাড়ান না অধিকাংশ চাষি। কান্দির ধানচাষি আমিরুল হক বলেন, ‘‘সরকার ধানের দাম বেঁধে দিয়েই দায় সেরেছে। সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার কোনও ব্যবস্থা নেই। ফলে খোলা বাজারে কম দামে ধান বেচতে বাধ্য হচ্ছি। তাই এ বারের ইদ খুশির ইদ নয়।’’

ভাগীরথী নদীর পশ্চিম দিক অর্থাৎ রাঢ অঞ্চলের প্রধান ফসল ধান। আর নদীর পূর্ব দিক, অর্থাৎ বাগড়ি এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল পাট ও আম-লিচু। প্রথমে অনাবৃষ্টি ও গরমে লিচু নষ্ট হয়েছে, পরে অতি বৃষ্টিতে আমও নষ্ট হয়েছে। লালবাগের আমচাষি লিয়াকৎ মোল্লা বলেন, ‘‘অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি সত্ত্বেও আমের ফলন এ বার খুব ভাল হয়েছে। আর তার ফলেই এ বার আমাদের কপাল পুড়েছে। গত বছরের থেকে অর্ধেকেরও কম দামে এ বার আম বিকোয়নি। ১০ টাকা কেজি দরেও আম বেচতে হয়েছে।’’ ইসলামপুর এলাকার চাষি আবুল কায়ুম বলেন, ‘‘পাট এখনও মাস খানেক জমিতেই থাকবে। তারপর কেটে জলে ডুবিয়ে সেই পাট ঘরে উঠতে উঠতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে।’’ ফলে পাটের বিক্রির টাকাও এ বার সে ভাবে ইদের বাজারে আসেনি।

বেহাল কৃষি অথর্নীতির সঙ্গে চিটফান্ডের ধাক্কা মিলেমিশে এ বারের ইদের বাজারে খরার দশা চলছে। মুর্শিদাবাদ জেলা চেম্বার অব কমার্সের যুগ্ম ব্যবসায়ী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ বারের বাজেটে পণ্যকর বেড়ে যাওয়ায় জামা-কাপড়, জুতো- সহ সব কিছুর দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে এ বার ইদের বাজার তেমন জমল না।’’ একই মত ডোমকল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আফাজুদ্দিন বিশ্বাস অপুরও। তিনি বলেন, ‘‘চিটফান্ড গ্রামীণ অর্থনীতির কোমর ভেঙে দিয়েছে। আর তারই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাজারগুলিতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eid marketing Shop owners murshidabad Baharampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE