ক্লাসরুমে জায়গা হয়নি। তাই বারান্দায় বসেছে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।
বসার জায়গা হয়নি। তাই স্কুলে এসেও পাঠ না নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হল পড়ুয়াদের!
মঙ্গলবার এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে চাপড়ার শিমুলিয়া হাইস্কুলে। স্কুলে বসার জায়গা না পেয়ে এ দিন কমবেশি ১২০ জন পড়ুয়াকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, এমনিতেই পর্যাপ্ত ঘর নেই। তার উপরে বেঞ্চের অভাব। স্কুলে গড়ে ৭০-৭৫ শতাংশ পড়ুয়া আসে। তাই কোনও ভাবে ‘ম্যানেজ’ করা যাচ্ছিল। কিন্তু এ দিন ৯০-৯৫ শতাংশ পড়ুয়া স্কুলে চলে আসে। তাতেই বিপত্তি ঘটে। প্রধান শিক্ষক জ্যোতির্ময় ঘোষ বলেন, ‘‘এত পড়ুয়াকে বসতে দেওয়ার মতো বেঞ্চ স্কুলে নেই। নিজের ঘর থেকে চেয়ার নিয়ে এসে অষ্টম শ্রেণির কিছু পড়ুয়াকে বারান্দায় বসার ব্যবস্থা করে ছিলাম। বাকিদের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।’’ এ ছাড়া কোনও বিকল্প রাস্তা ছিল না বলে জানান তিনি।
সীমান্ত লাগোয়া ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৮৯০ জন। এই বিরাট সংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস করার মতো উপযুক্ত ঘর নেই। স্কুলেরই এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘স্কুলের চারটে ঘর বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে সেখানে ক্লাস করতে হয়। পর্যাপ্ত সংখ্যক বেঞ্চও নেই। এক একটা বেঞ্চে পাঁচজন করে বসে। তাতেও জায়গা হয় না।’’
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘প্রতি বছর কিছু কিছু করে বেঞ্চ তৈরি করতাম। কিন্তু দাম অনেক বেড়ে যাওয়া এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। গ্রাম পঞ্চায়েত দেড় লক্ষ টাকার বেঞ্চ কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এখনও তা পাইনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সমস্যার কথা বিডিও থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েছি। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’
স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি অজয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত বেঞ্চ দেবে বলে দেয়নি। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এখন এমন অবস্থা যে এরপরে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে আসতে বারণ করতে বাধ্য হব।’’
স্কুলের ওই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সুমনা বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘এমন কোনও প্রতিশ্রুতির কথা আমার জানা নেই। স্কুলের তো টাকা আসে। তা হলে কেন সেই টাকায় প্রয়োজনীয় বেঞ্চ বানিয়ে নেয় না? পঞ্চায়েতের টাকা কই যে বেঞ্চ বানিয়ে দেব?’’
চাপড়ার বিডিও রিনা ঘোষ জানান, ঘরের সমস্যার কথা স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়েছে। তিনি নিজেও গিয়েও তা দেখে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘তবে বেঞ্চের সমস্যার কথা আমাকে জানানো হয়নি। বিষয়টি যখন জানতে পারলাম তখন নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা করা হবে।’’
বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র দেড় থেকে দু’কিলোমিটার দূরে এই স্কুল। এমনিতেই এই এলাকার ছেলেমেয়েদের নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে পড়াশুনো চালাতে হয়। তার উপরে যদি এ ভাবে তাদের স্কুলে দিয়েও বসার জায়গা না থাকার জন্য বাড়ি ফিরে আসতে হয় তাহলে সেটা আরও প্রতিকূল পরিবেশের সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষকই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy