Advertisement
E-Paper

আদালতে কর্মবিরতি, বিপাকে বিচারপ্রার্থীরা

হাজিরার তারিখ বলে কি না কথা। সকাল সকাল রানাঘাট আদালতে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাহেরপুর থানার বাদকুল্লার গাংনীর বাসিন্দা সুখেন দেবনাথ। জমি-বিবাদ নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মামলা চলছে। কিন্তু আদালতে গিয়ে জানতে পারেন, আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলছে। ফলে কাজ হবে না।

সৌমিত্র সিকদার

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৬ ০২:০৫
সুনসান রানাঘাট আদালত চত্বর। — নিজস্ব চিত্র।

সুনসান রানাঘাট আদালত চত্বর। — নিজস্ব চিত্র।

হাজিরার তারিখ বলে কি না কথা। সকাল সকাল রানাঘাট আদালতে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাহেরপুর থানার বাদকুল্লার গাংনীর বাসিন্দা সুখেন দেবনাথ। জমি-বিবাদ নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে মামলা চলছে। কিন্তু আদালতে গিয়ে জানতে পারেন, আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলছে। ফলে কাজ হবে না।

এতটা পথ উজিয়ে এসে ফিরে যাবেন? কী করবেন বুঝে উঠতে না পেরে খানিক ক্ষণ আদালত চত্বরেই বসেছিলেন বছর পঞ্চাশের সুখেনবাবু। শেষে বাড়ি ফিরে যান। পেশায় কৃষক সুখেনবাবু বললেন, “এর আগে ৫ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়েছিলাম। এ দিন আবার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। একেই সাড়ে পাঁচ মাস পরে হাজিরার দিন পড়েছে। তার পরেও যদি এ ভাবে হয়রানি হয়ে ফিরে যেতে হয়, তা হলে কবে কি হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।”

আদালতের নির্দেশে প্রতি মাসে স্বামীর কাছ থেকে ভরনপোষণের টাকা পান রানাঘাট থানার বেগোপাড়ার বাসিন্দা সারিকা অধিকারী। এ দিন সেই টাকা পাওয়ার কথা ছিল। সেই মতো সকালে আদালতে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু খালি হাতেই ফিরতে হল তাঁকেও।

রানাঘাট আদালতে কর্মবিরতি চলার জন্য সুখেন বা সারিকার মতো অনেকেই ফিরে যেতে হচ্ছে। বিভিন্ন দাবিতে গত ১৬ মে থেকে এই কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে রানাঘাট বার এ্যাসোসিয়েশন। চলবে আগামি ৪ জুন পর্যন্ত। রানাঘাট মহকুমারের গাংনাপুর, তাহেরপুর, ধানতলা, রানাঘাট, শান্তিপুর এবং হাঁসখালি থানার সব কাজ এখানে হয়।

এ ছাড়াও, রেল পুলিশের মামলা এখানে হয়।

সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, রানাঘাট আদালতে সব মিলিয়ে ৯টি কোর্ট রয়েছে। আর তাতে সমস্যার তালিকাটা দীর্ঘ। কোথাও শীততাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। ফলে প্রচণ্ড গরমে নাজেহাল হতে হয় সকলকে। আইনজীবীদের দাবি, সব কোর্টে এসি মেশিন বসানো দরকার। এতে বিচার প্রার্থীদেরও উপকার হবে। দ্বিতীয়ত, প্রতি আদালতে কমবেশি এক হাজার মামলা ঝুলে রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাঁচ-ছ’মাস পরে হাজিরার দিন ধার্য হচ্ছে। এর ফলে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে কোর্টের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। কোর্টগুলিতে জায়গারও সঙ্কুলান। বিভিন্ন মামলায় সাক্ষীরা বসার জায়গাই পায় না। একই অবস্থা হয় বিচারপ্রার্থীদেরও। তাঁদের এ দিক-ও দিকে ঘুরে বেড়াতে হয়। পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। নেই শৌচাগার। বিশেষ করে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে মহিলাদের।

এমনই এক ভুক্তভোগী ধানতলার বাসিন্দা ইসরাফিল মণ্ডল।

বললেন, “আমার ভাইকে একটা মারামারির ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ওকে আদালতে তোলা হলে আমরাও সেখানে যাই। চরম অব্যবস্থা। খাবার জল নেই। দাঁড়ানোর জায়গা নেই। বাড়ির মেয়েরাও গিয়েছিল। ওদের আরও সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সত্যিই এ বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার।”

রানাঘাট বার এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মিলন সরকার বলেন, “কয়েক দিন আগে আদালতের ৭৪ জন আইনজীবী আমাদের কাছে আবেদন জানান। তাঁদের বক্তব্য, এখানকার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করার প্রয়োজন। তাঁদের চিঠি পাওয়ার পরই গত ১২ মে সাধারণসভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। সেখানেই এই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।”

মিলনবাবু আরও বলেন, ‘‘এখানে একটি করে এডিজে, ফাস্ট ট্রাক কোট, অ্যাসিটেন্ট সেশন জর্জের কোর্ট রয়েছে। এই কোর্টে মামলার সংখ্যা প্রচুর। দীর্ঘদিনের ব্যবধানে শুনানির দিন ধার্য হয়। সেই জন্য আরও একটা করে ওই কোর্ট করা দরকার। তিনটি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট রয়েছে। আরও তিনটি হলে ভাল হয়।’’

তাঁর কথায়, ‘‘কোর্টগুলোতে আইনজীবীদের বসার জায়গা নেই। তাদের দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। মামলার সার্টিফাই কপি তুলতে গেলে অনেক সময় লেগে যায়। ওই কপিগুলো ৪-৫ দিনের মধ্যে পাওয়ার কথা। কিন্তু, তা পেতে ২-৩ মাস সময় লেগে যায়।” তিনি বলেন, “আমাদের আন্দোলনের জন্য অনেক বিচারপ্রার্থীর সমস্যা হবে, কিন্তু বৃহৎ স্বার্থের কথা ভেবে আন্দোলন করা ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই।”

একই কথা শুনিয়ে বার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “হাইকোর্টের মতো নিম্ন আদালতগুলোতেও গ্রীষ্মকালীন অবকাশের ব্যবস্থা করলে আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থী সকলেই উপকৃত হবেন।” তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন দাবির কথা রাজ্য বার অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে কলকাতা হাইকোর্টকে জানিয়েছি।” গোটা পরিস্থিতির কথাই জানেন রানাঘাটের মহকুমার শাসক প্রসেনজিত চক্রবর্তী।

Ranaghat Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy