Advertisement
০৬ মে ২০২৪

গাফিলতিতে মৃত্যু পড়ুয়ার, হস্তক্ষেপ স্বাস্থ্য ভবনের

ব্যবস্থা নেয়নি জেলা প্রশাসন। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যভবনে অভিযোগ করে সুফল মিলল। অভিযোগ ছিল গাফিলতিতে কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু। স্বাস্থ্যকর্তার তদন্ত রিপোর্টে দুই চিকিৎসক এবং একজন নার্সকে দোষী চিহ্নিতও করা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৭ ০১:৫১
Share: Save:

ব্যবস্থা নেয়নি জেলা প্রশাসন। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্যভবনে অভিযোগ করে সুফল মিলল।

অভিযোগ ছিল গাফিলতিতে কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু। স্বাস্থ্যকর্তার তদন্ত রিপোর্টে দুই চিকিৎসক এবং একজন নার্সকে দোষী চিহ্নিতও করা হয়েছে।

তার পরে সাত মাস পার। জেলা স্বাস্থ্য দফতর দোষীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। মৌমিতা কর্মকার নামে গাংনাপুরের ওই কলেজ পড়ুয়ার বাবা মনোরঞ্জন কর্মকার ‘বিচার’ চেয়ে প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরেছেন। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে তৎপরতা শুরু করতে, দিন কয়েক আগে সরাসরি স্বাস্থ্যভবনে পুরো ঘটনা জানিয়ে অভিয়োগ জানান তিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই শেষ পর্যন্ত ‘শো-কজ’ করা হল অভিযুক্ত চিকিৎসক-নার্সদের।

বছর সতেরোর মৌমিতা রানাঘাট কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল। বাড়ি গাংনাপুরের মিঠাপুর গ্রামে। গত ২৪ অগস্টও কলেজ থেকে ফেরার সময় বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ গাংনাপুর স্টেশনে ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে পড়ে যায় সে।

মাথায় চোট নিয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। মৌমিতার বাবা মনোরঞ্জনবাবুর অভিযোগ, শুধুমাত্র স্যালাইন ও ইনজেকশন দিয়ে তিন ঘণ্টা ফেলে রাখা হয় তাকে। রাত সওয়া আটটা নাগাদ এক চিকিৎসক সিটি স্ক্যান করানোর পরামর্শ দেন। স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে, মাথায় রক্ত জমে রয়েছে। রাত ১১টা নাগাদ তাঁকে রেফার করা হয় কলকাতা এনআরএস হাসপাতালে। ভোরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। কার্যত তার কোনও চিকিৎসাই হয়নি।

আরও পড়ুন

আড়াইশোয় ডজন, বাজার ছেয়েছে ভড়ুই

তাঁর রিপোর্টে রয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি করার পরে চিকিৎসক ইরানি রায় শুধুমাত্র স্যালাইন এবং ইঞ্জেকশন দিয়ে ফেলে রাখেন মৌমিতাকে। রোগীর রক্তচাপ, বা অন্যান্য তথ্য নেওয়াই হয়নি। এই সময়ে হাসপাতালের ‘অন-কল’ ডিউটিতে থাকা চিকিৎসককে না ডাকা কিংবা মোমিতার মস্তিষ্কের সিটি স্ক্যান না করানো প্রথম ভুল।

মেয়েকে নিস্তেজ হয়ে যেতে দেখে মনোরঞ্জনবাবু নার্স কেয়া রায়চৌধুরীকে বারবার বলেন ডাক্তারকে ডাকতে। কিন্তু, তিনি কোনও ডাক্তারকে ডাকেননি। রিপোর্টে এটিকে দ্বিতীয় ভুল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রাত সওয়া আটটা নাগাদ চিকিৎসক মাধব দাস মৌমিতাকে দেখেন। সেদিন তার জরুরী অন-কল ডিউটি ছিল। ফলে তাঁর আরও আগে আসা উচিৎ ছিল। এটি তৃতীয় ভুল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, সময়ে চিকিৎসা হলে ওই কলেজছাত্রীকে বাঁচানো যেত। মনোরঞ্জনবাবু হাসপাল কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ঘটনার সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ চেয়েও পাননি। ৮ মার্চ স্বাস্থ্যভবনে অভিযোগ জানান মনোরঞ্জনবাবু। দিন তিনেক আগে তাঁকে এবং অভিযুক্ত চিকিৎসক-নার্সদের স্বাস্থ্যভবনে ডেকে কথা বলেন স্বাস্থ্যকর্তারা। রাজ্য স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথি জানান, দুই অভিযুক্ত চিকিৎসক ও এক নার্সকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে হাসপাতালের সুপারকেও।

এতদিন ধরে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কেন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি? মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, ‘‘পুরো রিপোর্টই স্বাস্থ্যভবনে পাঠানো হয়ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Department Allegation Against Hospital Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE