রাত পোহালেই দেশ জুড়ে চালু হতে চলেছে পণ্য পরিষেবা কর বা জিএসটি। তাতে মাথায় হাত পড়েছে বস্ত্র শিল্পীদের। বড় ধাক্কা খাওয়ার ভয়ে রয়েছেন গরিব তাঁতশিল্পীরা। কী ভাবে কর বসবে, তার ধাক্কা কী রকম হবে, তা আন্দাজ করতে না পেরে আপাতত কেনাবেচা বন্ধ রেখেছে রাজ্য সরকারি সংস্থা মঞ্জুষা।
ইতিমধ্যে দেশ জুড়ে বস্ত্রশিল্পে ধর্মঘট চলছে। বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎচালিত তাঁতে ধর্মঘট করছেন কল মালিকরা। তাদের বক্তব্য, কর দেওয়ার এই পদ্ধতি মেনে চলা সম্ভব নয়। তাতে যে পরিমাণ কাগজপত্র রাখতে হবে, যত বার রিটার্ন দিতে হবে তা মেনে চলতে গেলে বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীদের কারবার লাটে উঠে যাবে। যাঁরা এখনও ধর্মঘটে নামেননি, তাঁদেরও একটা বড় অংশ আজ, শুক্রবার থেকে সামিল হচ্ছেন। জেলা জুড়ে সার্বিক ব্যবসা বনধেরও ডাক দিয়েছে নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।
বাংলার তাঁতের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ফুলিয়া-শান্তিপুরে সঙ্কটের ছায়া ঘনিয়েছে। শান্তিপুর তাঁতবস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারক দাস বলেন, “জিএসটি চালু হলে স্বাভাবিক ভাবেই কাপড়ের দাম বাড়বে। সেটা যে শুধু ৫ শতাংশ বাড়বে তা তো নয়, সেই সঙ্গে বেড়ে যাবে অন্য খরচও।”
যে কোনও কারবারির বছরে ২০ লাখ টাকা লেনদেন হলেই জিএসটি-র আওতায় চলে আসবেন তিনি। কিন্তু জিএসটি চালু হলে কম্পিউটারে হিসেব রাখতে হবে, তার জন্য বেতন দিয়ে রাখতে হবে কর্মী, যা ছোট তাঁতির পক্ষে কার্যত অসম্ভব। তারক দাসের আশঙ্কা, ‘‘এর ফলে তাঁতের কাপড়ের দাম লাফিয়ে বাড়বে, চাহিদা কমে যাবে। এমনিতেই সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলছে তাঁত শিল্প, তা আরও ঘোরতর সঙ্কটে পড়ে যাবে।’’ শর্ত অনুযায়ী, চেকের মাধ্যমে হাটে ব্যবসা করতে গেলেও জটিলতা তৈরি হবে। কেননা নানা জায়গা থেকে অচেনা ব্যবসায়ীরা আসেন। তাঁদের দেওয়া চেক যদি বাউন্স করে, তাঁতি পড়বেন অথৈ জলে। বস্ত্র ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, আগে শুধু রেডিমেড কাপড়ের উপরে কর ছিল। কিন্তু শাড়ি থেকে শুরু করে থান কাপড়ের উপরে কর ছিল না। এ বার তার বেশির ভাগটাই করের আওতায় চলে আসছে। মুর্শিদাবাদ চেম্বার অব কমার্স-এর যুগ্ম সম্পাদক তথা সিটি মুর্শিদাবাদ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য জানান, তাঁরাও বন্ধ সমর্থন করছেন।
রানাঘাটে বিদ্যুৎচালিত তাঁতশিল্পে হাজার পঞ্চাশেক মানুষ যুক্ত। মালিক পক্ষের সংগঠন পাওয়ারলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল-এর সাধারণ সম্পাদক অরূপ পোদ্দারের আক্ষেপ, “আগে যখন ভ্যাট চালু হয়, তাঁতশিল্পকে বাঁচাতে তার আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এখন উল্টো হচ্ছে।” ওই সংগঠনেরই অসীম দেবনাথ বলেন, “এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কারখানা মালিকদের অধিকাংশ দুঃস্থ। অনেকেই নিজে তাঁতের কাজ করেন। তাঁদের পক্ষে মাসে তিন বার হিসেব দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁদের অনেকেই কারখানা বন্ধ করে দেবেন। বহু মানুষকে কাজ হারাতে হবে।”
নবদ্বীপের বস্ত্র ব্যবসায়ী নিরঞ্জন দাসের প্রশ্ন, “এত হিসেব রাখার হাঙ্গামা হলে ব্যবসাটা করব কখন?” বহরমপুরের ব্যবসায়ী শেখর মারুঠির আক্ষেপ, ‘মাসে তিন বার রিটার্ন দিতে হবে। ব্যবসার থেকে কাগজপত্রে নজর বেশি দিতে হবে। কী করে তা সম্ভব?’’ চক ইসলামপুরে মুর্শিদাবাদ সিল্কের উৎপাদক নিত্য দে বলেন, ‘‘আমাদের আগে কর দিতে হত না। এখন কর বসানো হচ্ছে। মহাজনেরা বলেছেন, জিএসটি নম্বর না থাকলে কাপড় নেবেন না। দুশ্চিন্তায় আছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy