Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সেই ঢিল-বৃষ্টির কথা ভোলা যায় নাকি!

বিয়ে— দু’অক্ষরের ভারী নিবিড় শব্দটি ফিকে হয়ে না এলেও কোথায় যেন ছিঁড়ে গিয়েছে তার সংস্কার, রীতিনীতি, আদব কায়দা, পুরনো সেই বিয়ের সিপিয়া রঙের পথ ধরে হাঁটল আনন্দবাজার নবগ্রামে তাঁর মামাতো দাদার বিয়ে। জীবনে প্রথম বরযাত্রী যাবেন তিনি। তেরো বছরের বালকের আনন্দের সীমা নেই। টোপর দেওয়া আট-ন’টি গরুর গাড়ির কনভয়ে বরযাত্রীরা চলেছেন ইটর গ্রামে কনের বাড়ি।

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৬
Share: Save:

জীবনের উপান্তে পৌঁছেও শৈশবের প্রথম বরযাত্রী যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা ভুলতে পারেননি প্রায় সত্তর আইনজীবী পীযূষ ঘোষ। সেই অভিজ্ঞতার কথা ভোলারও নয়।

নবগ্রামে তাঁর মামাতো দাদার বিয়ে। জীবনে প্রথম বরযাত্রী যাবেন তিনি। তেরো বছরের বালকের আনন্দের সীমা নেই। টোপর দেওয়া আট-ন’টি গরুর গাড়ির কনভয়ে বরযাত্রীরা চলেছেন ইটর গ্রামে কনের বাড়ি। মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের জন্য মাঝ উঠোনে ছাদনাতলা প্রস্তুত। বর ও বারযাত্রীরা ছাদনতলা ঘিরে সবে গোল বসেছেন। হঠাৎ চার দিক থেকে ঢিল ছুটে আসতে শুরু করল বরযাত্রীদের উপর। কেউ ছুটছে কাঁটাওয়ালা ধুতরোর ফল। মাথার চুল লক্ষ করে কেউ ছুড়ছে পাকা ফল।

যারা ঢিল ছুড়ছে তারা সবাই কনের ভাই ও ভাই স্থানীয়। বযস ১২ বছর থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। বাসরঘরের কপাট খোলার জন্য কনের বোন ও বন্ধু স্থানীয়রা ‘ঘর ধরানি’ নামের সেলামি আদায় করত বরের জুতো চুরি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নেয়। কনের ভাই ও ভাই-এর বন্ধুরা একই ভাবে বরের কাছে সেলামি আদায় করতে ‘ঢেলাই চণ্ডী’র আশ্রয় নেয়। কনের বাড়িতে বরযাত্রী পা দেওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে যায় ‘ঢেলাই চণ্ডী’র উপদ্রব। ইটরের গ্রামের ‘ঢেলাই চণ্ডী’র অত্যাচার এমন পর্যয়ে পৌঁছে যায় যে, বিয়ে না দিয়েই বর নিয়ে বরযাত্রীরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে দিন। পীযূষ বলেন, ‘‘অবশেষে উভয়পক্ষ বসে সেলামির টাকার বিষয়ে মীমাংসা করেন। তার পর বিয়ে হয়।’’

নবগ্রামে আদিবাসী বিয়ের একটা কথাও খুব মনে আছে তাঁর। আদিবাসী বিয়ের কথা। সাঁওতালদের বিয়েতে বর পক্ষ চাল, ডাল- সহ ভোজের যাবতীয় দ্রব্য সঙ্গে করে নিয়ে যায়। কনের গ্রামের প্রান্তে বরপক্ষ ভোজ রান্না করে খায়। দুপুরের মধ্যে খাওয়া শেষ করতে হয়। তার পর সেখানে কনে পক্ষের কয়েক জন মুরব্বি গিয়ে তাঁদের আমন্ত্রণ জানান। এ বার ঢোলবাদ্য ও নৃত্যগীত সহযোগে কনের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বরকে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিটি বাড়িতে বরকে মিষ্টিমুখ করানো হয়। তার পর গোধূলিলগ্নে বিয়ে দেওয়া হয়।

নবগ্রামের জামিন হাঁসদা বলেন, ‘‘দুপুরের মতো বরযাত্রীদের রাতের খাবারের ব্যবস্থাও করে বরপক্ষ। সাম্প্রতিক কালে আমাদের সম্প্রদায়ের বিয়েতে প্রাচীন প্রথার কিছু পরিবর্তন শুরু হয়েছে। বর্তমানে কিছু ক্ষেত্রে বরযাত্রীর খাওয়া দাওয়ার ভার বহন করে কনেপক্ষ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Rituals Dhelai Chandi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE