Advertisement
E-Paper

চাঁদা তুলে শ্মশানবন্ধু হলেন লতিফরা

ধর্মের নামে হনন-হানাহানির এই তপ্ত সময়েও নতিডাঙায় হিন্দু মহিলা মারা গেলে তাঁর জন্য বুক পেতে দেয় পড়শি মুসলিমরা। গ্রামের পুরনো মুসলিম মানুষটা মারা গেলে কবরে মাটি দেন পাড়ার হিন্দুরা।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৭ ০১:৫৬
নজির: নতিডাঙায় ছবিটি তুলেছেন কল্লোল প্রামাণিক

নজির: নতিডাঙায় ছবিটি তুলেছেন কল্লোল প্রামাণিক

পাঁচটা গ্রামীণ জনপদের সঙ্গে আলাদা করা খুব মুশকিল। আম-জামরুল-অশ্বত্থ গাছ, বর্ষাভাসি পুকুর, ভিজে মেঠো রাস্তা— নতিডাঙা অবিকল যেন অন্য গ্রামের মতো। তবে, নদিয়ার সেই প্রান্তিক গ্রামে পা দিলে, ভিন্ন স্বাদটা টের পাওয়া যায় দু-পাঁচ জনের সঙ্গে কথা বললেই।

ধর্মের নামে হনন-হানাহানির এই তপ্ত সময়েও নতিডাঙায় হিন্দু মহিলা মারা গেলে তাঁর জন্য বুক পেতে দেয় পড়শি মুসলিমরা। গ্রামের পুরনো মুসলিম মানুষটা মারা গেলে কবরে মাটি দেন পাড়ার হিন্দুরা।

সেই ছবিটা ফের এক বার জ্যান্ত হয়ে উঠল রবিবার। থানারপাড়ার এলাকার ওই গ্রামে মারা গিয়েছেন মধ্য চল্লিশের সুলেখা শীল। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, অভাবী সংসার, তেমন ভাবে চিকিৎসাই করানো যায়নি সুলেখার। তাই মারা যাওয়ার পরে তাঁর সৎকারের ব্যবস্থা করতেও কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল শীল পরিবারের।

খবরটা পাঁচ কান হতেই গ্রামের উজ্জ্বল ভট্টাচার্য, প্রভাস মণ্ডলের সঙ্গে হাত মিলিয়েই টাকা তুলতে রাস্তায় নেমেছিলেন প্রতিবেশী মহিরুদ্দিন মল্লিক, লতিফ মণ্ডল, সম্রাট শেখরা। লতিফ বলছেন, ‘‘এটা কোনও কথা হল, সুলেখা বৌদিকে কত দিন ধরে চিনি। মানুষটা চলে গেল, আর আমরা অন্য ধর্মের বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকব!’’ সাড়ে এগারো হাজার টাকা তুলে বহরমপুর শ্মশানে গিয়ে শুধু মহিলার দাহ করাই নয়, যা বেঁচেছিল সেই হাজার তিনেক টাকাও তাঁরা তুলে দেন মহিলার পরিবারের হাতে। মৃতার প্রতিবেশী লতিফ মণ্ডল বলেন, “ব্যবসায়ীদের কাছে হাত পেতেছি, বাজারে ঘুরে কিছু চাঁদা তুলেছি, এটা না করলে আর কী করলাম।’’

এটা অবশ্য নতুন কোনও ঘটনা নয়। নতিডাঙা এ ছবির সঙ্গে বেশ পরিচিত। উজ্জ্বল বলছেন, “বাপ ঠাকুর্দার সময় থেকে এই সম্প্রীতি দেখে আসছি আমরা। বিপদে আপদে মানুষের পাশে জাঁড়ানোই আমাদের ধর্ম।’’ স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, দুই সম্প্রদায়ের মানুষ এ গ্রামে বরাবরই পাশাপাশি বাস করেন। খুব ছোট থেকেই সবাই খেলাধুলো করে এক মাঠে। এমনকী নানা পুজো-আচ্চা, পরবও করা হয় মিলেমিশে।

হিন্দুরাও মুসলিমদের কবরে মাটি দিয়ে মৃতের আত্মার শান্তি কামনা যেমন নতুন নয়, তেমনই গ্রামের দুর্গাপুজো কমিটিতে থাকেন মুসলিমরা। সুলেখার স্বামী পেশায় ক্ষৌরকার ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী মিড ডে মিলের রান্না করতেন, প্রায় দুই ধরে অসুস্থ। গ্রামের সব ধর্মের মানুষ পাশাপাশি না দাঁড়ালে হয়তো দাহ করাই যেত না!’’

নতিডাঙা সেই নজির রেখেছে, অন্য গাঁ-গঞ্জ কি সে গ্রামের দিকে একটু চোখ ফেরাবে!

Dead Body Natidanga Communal Harmony থানারপাড়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy