Advertisement
০২ মে ২০২৪

নিত্য অশান্তি এড়াতে বাম প্রার্থী কৃষ্ণগঞ্জে

কিছুতেই ঘর গোছাতে না পেরে শেষে ঘরটাই বোধহয় ছেড়ে দিচ্ছে কংগ্রেস।যে জেলায় বাম-কংগ্রেসের সার্বিক জোট হয়েছে, সেখানে কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করল সিপিএম।

টর্চ জ্বেলে রাতেই চলছে নতুন করে দেওয়াল লিখন। —নিজস্ব চিত্র

টর্চ জ্বেলে রাতেই চলছে নতুন করে দেওয়াল লিখন। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণগঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৯
Share: Save:

কিছুতেই ঘর গোছাতে না পেরে শেষে ঘরটাই বোধহয় ছেড়ে দিচ্ছে কংগ্রেস।

যে জেলায় বাম-কংগ্রেসের সার্বিক জোট হয়েছে, সেখানে কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করল সিপিএম। জেলা কংগ্রেস নেতাদের একটা বড় অংশের মতে, যা আসলে ‘গভীর ইঙ্গিতবাহী’। ফলে, কৃষ্ণগঞ্জে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হয় না কি কংগ্রেস শেষমেশ প্রার্থী তুলে নেয়, তা সময়ই বলবে।

এই জল্পনার কারণও আছে। গোড়ায় কৃষ্ণগঞ্জ কেন্দ্রটি কংগ্রেস বা বাম কেউই নিতে তেমন আগ্রহী ছিল না। পরে কংগ্রেস প্রার্থী ঘোষণা করে। কিন্তু অন্তর্কলহের জেরে দু’বার প্রার্থী বদলের সত্ত্বেও শান্তি আসেনি। তৃতীয় প্রার্থী নিত্যগোপাল মণ্ডল প্রচারে বেরিয়ে দলের কর্মীদের পাশে পাচ্ছেন না। যে বামেরা সর্বত্র কংগ্রেসের সঙ্গে পথে নামছে, তারাও এই হাল দেখে বিরক্ত। শেষে কংগ্রেস নেতাদের একাংশের উপস্থিতিতেই ওই কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএম। বৃহস্পতিবার দলের বগুলা লোকাল সম্পাদক তথা ডিওয়াইএফ-এর জেলা সভাপতি মৃণাল বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করা হয়। তাঁর হয়েই প্রচারে নামবেন বলে স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা জানিয়েও দিয়েছেন।

এই মোক্ষম চালের আগে সুতো পাকানোর পর্বটা অবশ্য বেশ লম্বা।

গত কয়েক দিন ধরেই কংগ্রেসের অন্দরে ক্ষোভ ধোঁয়াচ্ছিল। কৃষ্ণগঞ্জের নেতাকর্মীদের একাংশের দাবি ছিল, যে কোনও ভাবে নিত্যগোপালকে সরাতে হবে। এক বছর আগেই উপনির্বাচনে যাঁর জামানত জব্দ হয়েছে, তাঁকে প্রার্থী করলে লড়াই অসম্ভব বলেও তাঁরা জানিয়ে দেন। নিত্যগোপাল মনোনয়ন জমা দিলে তাঁরা পদ থেকে ইস্তফা দেবেন বলে হুমকি দেওয়া হয়। নিত্যগোপালের আগে যিনি প্রার্থী হয়েছিলেন, সেই প্রতাপ রায়ের হয়ে কথা বলার বিশেষ লোক নেই। কিন্তু প্রথমে যাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই বিশ্বনাথ বিশ্বাসকে প্রার্থিপদ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠতে থাকে। কিন্তু এক বার বাতিল করে ফের তাঁকে ফিরিয়ে আনাও জেলা তথা প্রদেশ নেতাদের পক্ষে সহজ নয়।

বাম শিবিরের খবর, এরই মধ্যে কংগ্রেসের একটি গোষ্ঠী গত দু’দিন ধরে সিপিএমের নেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। জট খুলতে প্রয়োজনে সিপিএমের প্রার্থী দেওয়া উচিত, এমন মতও দুই দলে উঠে আসতে থাকে। বুধবার রাতে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেন। এর পরে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাঁসখালির দলীয় কার্যালয়ে কংগ্রেসের ব্লক ও জেলা নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন সিপিএমের জেলা ও জোনাল নেতারা। ব্লক কংগ্রেস নেতৃত্ব জানান, বারবার প্রার্থী বদলে তাঁরা বিরক্ত। তার চেয়ে সিপিএম প্রার্থী দিলেও তাঁরা প্রচারে যেতে রাজি। এর পরেই সর্বসম্মতিক্রমে মৃণাল বিশ্বাসকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাত থেকে প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে।

সিপিএমের সঙ্গে বৈঠকে হাজির ছিলেন কংগ্রেসের হাঁসখালি ব্লক সভাপতি দিনেশ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা জেলা নেতৃত্বকে আগেই জানিয়েছিলাম, নিত্যগোপাল মণ্ডলকে কর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। তাই সিপিএমের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত। আমাদের কর্মীরা এ বার তৃণমূলকে হারাতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়বেন।’’ সিপিএমের সুমিত দে-ও বলেন,‘‘কংগ্রেস প্রার্থী চুড়ান্ত করতে না পারায় ওদের কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছিল। যদিও সকলেই চান তৃণমূলকে হারাতে।’’

প্রশ্ন হল, কংগ্রেসের সকলেই কি সিপিএম প্রার্থীর হয়ে প্রচারে যাবেন?

প্রথমে যাঁর নাম ঘোষণা হয়েছিল, সেই বিশ্বনাথ বিশ্বাস বলছেন, ‘‘অবশ্যই। মানুষের এখন একটাই লক্ষ্য, সেটা হল তৃণমূলকে হারানো। প্রার্থী সিপিএমের না কংগ্রেসের, সেটা বড় কথা নয়। তা ছাড়া আমি প্রার্থী হলে যদি সিপিএম সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে পারে, তা হলে আমি পারব না কেন?’’

প্রায় একই কথা বলেছেন দ্বিতীয় প্রার্থী প্রতাপ রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘আমার বাড়ি দূরে। তার পরেও যদি ওঁরা আমাকে প্রচারে ডাকেন, আমার এলাকার প্রচার সামলে নিশ্চয়ই আসব। কে প্রার্থী দিল, সেটা তো বড় কথা নয়। আসল কথা হল, তৃণমূলকে হারাতে হবে।’’

কী বলছেন নিত্যগোপাল?

কংগ্রেসের তৃতীয় প্রার্থীর বক্তব্য, ‘‘দল আমাকে লড়াই করতে বলেছে। আমি তৈরি। এর বাইরে আমি কিছুই জানি না।’’ কিন্তু দল যদি আপনার প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করে নেয়? সিপিএম প্রার্থীর হয়ে আপনিও প্রচারে বেরোবেন? খানিক হতাশ গলায় নিত্যগোপাল বলেন, ‘‘হাইকম্যান্ড যদি বলে, সেটাই হবে। প্রচারে বেরোব। তৃণমূলকে এক ইঞ্চি জমি ছেড়ে দেওয়া যাবে না।’’ দুই দলেরই একটা বড় অংশের বক্তব্য, তৃণমূলকে মাঠ ছেড়ে দেওয়া রুখতে এ ছাড়া উপায় নেই। তবে কি কংগ্রেস প্রার্থী তুলেই নিচ্ছে? জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহা শুধু বলেন,‘‘ এই বিষয়ে যা বলার, প্রদেশ নেতৃত্ব বলবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC left krisnagaj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE