দ্বাদশীতেই সে ফিরে এসেছে! পুজোর চার দিন যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা ফলে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের সদর শহর কৃষ্ণনগর ও বহরমপুরের বিভিন্ন রাস্তায় জট ছিল না বললেই চলে। পুজোর চার দিন অতিরিক্ত ভিড় সামাল দিতে পুলিশ কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করার ফলে যানজটের ভোগান্তি থেকে রেহাই পান দর্শনার্থীরা। কিন্তু পুজো শেষ হতেই ফের শহরের বিভিন্ন রাস্তায় সেই চেনা যানজট।
কিন্তু পুজোর চার দিন যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বাকি দিনগুলিতে পুলিশ প্রশাসন কেন শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে পারে না? প্রশ্ন পুরবাসীদের। মুর্শিদাবাদের ডেপুটি পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) বিকাশ ভাণ্ডরি জানান, বহরমপুরের বুকের উপর দিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক চলে গিয়েছে। দেখা গিয়েছে, জাতীয় সড়ক যানজট মুক্ত থাকলে শহরের বিভিন্ন রাস্তাও যানজট মুক্ত থাকে। পুজোর চার দিন অতিরিক্ত ভিড় সামাল দিতে এডিজি (ট্র্যাফিক)-র নির্দেশে অত্যাবশ্যক পণ্যবাহী লরি ছাড়া বাকি লরিগুলিকে জাতীয় সড়কের ধারে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
ফলে জাতীয় সড়ক যানজট মুক্ত থাকার কারণে জাতীয় সড়কের যানজটের প্রভাব থেকেও মুক্ত ছিল শহরের বিভিন্ন রাস্তা। কিন্তু বাকি দিনগুলি জাতীয় সড়ক ফাঁকা রাখা সম্ভব হয় না বলেও দীপকবাবু জানান। সেই সঙ্গে পুজোর কয়েকটা দিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে শহরের বিভিন্ন ব্যস্ততম ও জনবহুল রাস্তা যানজট মুক্ত রাখার চেষ্টা হয়, যাতে প্রতিমা দর্শনে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি পোহাতে না হয়। তবে পুজো মিটে গেলেই সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে যানজট রুখতে স্থায়ী পরিকল্পনার কখা ভাবা হয়েছে বলেও ডিএসপি (ট্র্যাফিক) জানান।
নদিয়ার কৃষ্ণনগর শহরে পোস্টঅফিস মোড়, পুরসভার মোড়, সদর মোড়, ফোয়ারার মোড়, বেলডাঙা, নেদারপাড়া মোড়, বাসস্ট্যান্ড চত্বরে যানজট নিত্য দিনের ঘটনা। গত চার দিন যানজট থেকে রেহাই মিললেও পুজো মিটতেই শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ফের যানজট শুরু হয়েছে বলে জানান কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা মিলন সরকার। তিনি বলেন, ‘‘কৃষ্ণনাগরিকদের যানজট নিত্যসঙ্গী। পুজোর চারটে দিন অবস্য যানজট থেকে রেহাই মিলেছিল। সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ছিল। তবে পুজো শেষ হতে না হতেই যানজট একই অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। তবে এটা প্রমাণিত যে পুলিশ ও প্রশাসন চেষ্টা করলে যানজট মুক্ত শহর সাধারণ মানুষকে উপহার দিতে পারে।’’
কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা নাসিমা খাতুন বলেন, ‘‘পুজো মিটে যেতেই চেনা যানজট ফিরতে শুরু করেছে। স্কুল-কলেজ না খুললেও অফিস-কাছারি খুলে যাওয়ায় যানজটের চেনা ছন্দে ফিরছে। ফের যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হবে সাধারণ মানুষকে।’’
যানজট প্রসঙ্গে নদিয়া জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে বিভিন্ন রাস্তা নো-এন্ট্রি করে বড় গাড়ি ষহরে ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাসগুলিকে শহরের বাইরে বিভিন্ন রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখার পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে যানজট মুক্ত করা হয়। তবে পুজোর সময়ের বিশেষ ব্যবস্থা সারা বছর ধরে রাখা সম্ভব হয় না।
একই অবস্থা করিমপুরেও। টোটো বেড়ে যাওয়ার কারণে রাস্তায় যানজট বেড়েছে। বিশেষ করে করিমপুর নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির ১ নম্বর গেট থেকে হাসপাতালের গেট পর্যন্ত যানজট নিত্য দিনের ঘটনা। তার মধ্যে রাস্তা দখল করে বাসগুলি রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যানজট পাকিয়ে যায়।
করিমপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুবোধ রায় বলেন, ‘‘স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড না থাকার কারণেই যানজটে প্রতি দিন ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।’’
এ দিকে, বহরমপুরের বিভিন্ন রাস্তায় যানজট রুখতে পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের চিঠি পাঠিয়ে স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বহরমপুরের পুরপ্রধান তৃণমূলের নীলরতন আঢ্য। তিনি বলেন, ‘‘বহরমপুরের বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে যাতায়ত অসম্ভব হয়ে উঠেছে। গোটা বিষয়টি জানিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি পুজোর পরেই বৈঠক ডেকে গোটা যানজট মুক্ত করতে স্থায়ী পরিকল্পনা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy