Advertisement
১৯ মে ২০২৪
জনরোষে আক্রান্ত সুতি থানা

লরির ধাক্কা, ছিটকে গেল ছেলে দু’টো

গ্রামের সুড়কি পথ থেকে ভেঙে পাকা রাস্তায় উঠেই মোটরবাইক নিয়ে তারা পড়ে গিয়েছিল মালবোঝাই লরির মুখোমুখি। নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি মোটরবাইকটি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সুতি শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৬ ০২:১০
Share: Save:

গ্রামের সুড়কি পথ থেকে ভেঙে পাকা রাস্তায় উঠেই মোটরবাইক নিয়ে তারা পড়ে গিয়েছিল মালবোঝাই লরির মুখোমুখি। নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি মোটরবাইকটি। ট্রাকের ধাক্কায় রাস্তার উপরেই ছিটকে পড়েন আমির হামজা (২৩) ও শিস মহম্মদ (২৩)। মিনিট কয়েকের মধ্যেই মারা যান শিস মহম্মদ। রাস্তায় পড়ে ছটফট করতে তাকা হামজাকে একটা ভ্যান রিকশা ডেকে তোলার আগেই মারা যান ওই যুবকও।

কিন্তু গ্রামে রটে যায় ঘাতক লরিটিকে পাশ কাটিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে উপস্থিত দুই সিভিক ভলান্টিয়ার। আর তাতেই চড়তে তাকে উত্তেজনার পারদ। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সেই উত্তেজনাই ক্রমে গড়িয়ে যায় স্থানীয় সাগরদিঘি থানার সামনে। শুধু হয় থানা ঘেরাও করে ইট-পাথর ছোড়া। পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দেকে পুলিশ মৃদু লাঠি চালায়। আর তাতে ফল হয় উল্টো। এ বার রটে যায়— গুলি চালিয়েছে পুলিশ।

ফলে এ বার থানা চত্বরে ঢুকে মারমুখী হয়ে ওঠে জনতা। বাধ্য হয়ে এ বার নামাতে হয় নির্বাচনের জন্য আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। লাঠি উঁচিয়ে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দেয় তারাই। খবর পেয়ে বড়সড় পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন জঙ্গিপুরের এসডিপিও। পুলিশ জানায়, প্রায় ঘণ্টা তিনেক পরে উত্তেজনার পারদ থিতিয়ে গেলেও সাগরদিঘি থানায় প্রহরায় রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।

হামজা এবং শিস মহম্মদ, সাগরদিঘির জগদ্দল গ্রামের দুই যুবক, স্থানীয় পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজ করেন। এ দিন সেই কাজ সেরেই তারা ফিরছিল সমসাবাদ থেকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, গোপালদিঘির মোড়ে সুতি-সাগরদিঘি রাজ্য সড়কে ওঠার সময়ে আচমকাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তারা ওই লরির সামনে পড়ে গিয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরেই পুলিশ তড়িঘড়ি লরিটিকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষুব্ধ জনতাকে হটাতে লাঠি উঁচিয়ে তৎপর হয়ে ওঠে বলেও গ্রামবাসীদের দাবি। পরিস্থিতি তপ্ত হয়ে ওঠার পক্ষে যা যথেষ্ট ছিল। তার জেরেই পুলিশের উপরে বাড়তে থাকে ক্ষোভ। সাগরদিঘি থানাতে যার রেশ ড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি।

তবে, দুর্ঘটনার পরে, ওই পথেই ফিরছিলেন এক পুলিশ কর্মী। তিনি জানান, ‘‘গ্রামবাসীদের ডেকে আমিই আহত ওই যুবককে ভ্য়ানরিকশায় তোলার চেষ্টা করি। তবে তাতে কাজ হয়নি ছেলেটি কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়।’’ তিনি জানান, লরিটিকে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে পুলিশের অন্য কোনও অভিসন্ধি ছিল না। তাঁর যুক্তি, ‘‘নিছক ভাঙচুর এবং লরি চালককে গণ প্রহারের হাত থেকে বাঁচাতেই লরিটিকে থানায় নিয়ে গিয়ে রাখা হয়।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে কানন সন্ধ্যায় এসেছিলেন সাগরদিঘি থানায়। তিনিও বলেন, “উত্তেজনা যাতে না বাড়ে সে জন্যই লরিটিকে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছিল। না হলে বড় বিপদ ঘটার আশঙ্কা ছিল।’’ তবে এ দিন রাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে বলেই দাবি করেছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ দিন কাজ সেরে বাড়িই ফিরছিল ওই দুই যুবক। দুর্ঘটনাটা হয় সেই সময়েই। তবে তাঁদের কথায়, ‘‘পুলিশ প্রায় আগলে রেখেই লরিটি পার করে দিল। মনে হচ্ছিল, দুর্ঘটনায় আহতদের হাসপাতালে পাঠানোর চেয়ে লরিটিকে বাঁচানো বেশি জরুরি।’’

আশপাশের গ্রাম ঘুরে এই ক্ষোভের কথাই শোনা গিয়েছে। সেই আবহে পুলিশের লাঠি চালানো গৃতাহূতির কাজ করে।

ওই রাস্তায় যানবাহনের ছোটাছুটি কম নয়। তবে, তুলনায় পুলিশি টহলদারি কম। দুর্ঘটনা তার জেরেই। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, প্রতি দিন সিভিক ভলান্টিয়াররা গোপালদিঘি মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করলেও এ য় সেখানে কেউ ছিল না। এমনকী প্রতি দিন যে ডিভাইডার রাস্তার উপর রাখা থাকে, এ দিন তাও ছিল না।

এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও মনে করছেন, পুলিশ বাড়াবাড়ি না করলে পরিস্থিতি এমন উত্তপ্ত হয়ে উঠত না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raod accident death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE