Advertisement
E-Paper

সাফল্যেও স্বস্তিতে নেই সুজন-ইব্রাহিম

মাঠে ধান ঝেড়েই উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ পেয়েছে মুর্শিদাবাদের সুজন মাল। ভূগোলে ৯৯। বাড়ি তার সাগরদিঘির গন্ডগ্রাম খৈরটিতে। সে নিজে খেতমজুর, তার বাবাও তা-ই। সে কি আর পড়া চালাতে পারবে?

বিমান হাজরা ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ১৩:০০
ইব্রাহিম শেখ। নিজস্ব চিত্র

ইব্রাহিম শেখ। নিজস্ব চিত্র

হাত দু’টো ধান ঝাড়ে, কোদালে মাটি কোপায়। গার্ডেনরিচের আঁধার গলিতে প্যাকিং বাক্সে ভরে রঙিন জেল্লা দার জামা।

মাথাটা খালি ভেসে থাকে উঁচু হাওয়ায়। খুলি গিজগিজ করে অক্ষর আর গণিতের আঁকিবুঁকি, ভূমধ্যসাগর থেকে চকিতে বাঁক নিয়ে উঠে যাওয়া দ্রাঘিমা। মরিয়া চোখ খোঁজে সুমেরু-ধোয়া আলো।

মাঠে ধান ঝেড়েই উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ পেয়েছে মুর্শিদাবাদের সুজন মাল। ভূগোলে ৯৯। বাড়ি তার সাগরদিঘির গন্ডগ্রাম খৈরটিতে। সে নিজে খেতমজুর, তার বাবাও তা-ই। সে কি আর পড়া চালাতে পারবে?

সুজন জানে না।

মাটির কাঁচা বাড়িতে খড় ও টিনের চাল। বাড়ির কর্তা হাবল মাল বা তাঁর স্ত্রী কাকলি কেউই লেখাপড়া জানেন না। বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবার বলে সস্তার চালটা-গমটা জোটে। তফসিলি জাতির শংসাপত্র থাকলে হয়ত আরও কিছু ছাড় মিলত। কিন্তু সে শংসাপত্র চেয়ে সুজনের আবেদন চার মাস পড়ে রয়েছে জঙ্গিপুরের প্রশাসনিক দফতরে।

মাঠে ধান ঝাড়ছে সুজন মাল। নিজস্ব চিত্র

ভাল ফল করেও পড়তে না পারা সুজনের কাছে নতুন নয়। মাধ্যমিকে বিজ্ঞানের তিন বিষয়ে তার নম্বর ছিল ৮৫ শতাংশ। জীববিজ্ঞানে ৯৫। তবু খরচ জোটাতে পারবে না বলে বিজ্ঞান পড়া হয়নি। সেখদিঘি হাইস্কুলে কলা বিভাগে ভর্তি হয়। খেতমজুরি করতে গিয়ে অর্ধেক দিন স্কুলে যেতে পারত না। সেই ঘাটতি পোষাত রাত জেগে। তার পরেও এই চমকে দেওয়া ফল!

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বিজন মণ্ডল বলেন, ‘‘এত ভাল ফল করেও ও মার্কশিট নিতে চাইছিল না। বারবার বলছিল— স্যার, কী করব এটা নিয়ে? কোথায় ভর্তি হব? বাইরে কোথাও পড়তে গেলে দিনমজুরিটাই বন্ধ হয়ে যাবে। খরচ চালাব কীসে?”

সুজনেরই পায়ে-পায়ে চলছে যেন নদিয়ার ইব্রাহিম শেখ। ৮৪ শতাংশ পেয়ে কালীগঞ্জের বড় কুলবেড়িয়া হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছে সে। পড়তে চায় বিজ্ঞান। কিন্তু পড়বে কী ভাবে? ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতেন বাবা সরিফুল শেখ। ছ’বছর আগে প্যারালিসিসে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। এখন খানিক সামলে টিভি সারানোর কাজ করলেও নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। ভাইটা ছোট, তারই স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ে।

ইব্রাহিমকে তাই বাধ্য হয়ে ঠাঁই নিতে হয়েছে কলকাতার গার্ডেনরিচে। প্যাকেটে জামাকাপড় ভরা আর ব্যাগ বানানো— এই করে বাড়িতে টাকা পাঠায় সে। এখনও মার্কশিট নিতে ফিরতে পারেনি। আজ, বুধবার থেকে একাদশ শ্রেণির ভর্তি শুরু হচ্ছে বিভিন্ন স্কুলে। ‘‘খুব ইচ্ছে ছিল, বিজ্ঞান নিয়ে পড়ব। তা আর হবে না। বাবাকে বলেছি, আমার স্কুলেই কলা বিভাগে ভর্তি করে দিতে’’— বলে ইব্রাহিম।

বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ভূগোল অনার্স ফর্ম তুলেছে সুজন। ‘‘শিক্ষকেরা বললেন, তাই তুললাম। বহরমপুরে মাথা গোঁজার জায়গাটুকুও নেই। খরচই বা তুলব কোথা থেকে?’’ —এটুকু বলেই সুজন থমকে যায়।

পূর্ণগ্রাসের আকাশে মাথা তুলে খুঁজে পাবে তারা হিরের আংটি?

Poor student Education কৃষ্ণনগর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy