সরকারি জলপ্রকল্পের জল মুখে তোলা যায় না। ফলে পানীয় জলের সঙ্কট চলছেই। বাসিন্দারা বাধ্য হচ্ছেন জল কিনে খেতে। এ ভাবে জলসংকটে ভুগছে জঙ্গিপুরের সেকেন্দ্রা-সহ ১২টি গ্রাম।
ওই এলাকায় ভূগর্ভস্থ জলে বিপজ্জনক মাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে। তাই সেকেন্দ্রায় একটি আর্সেনিকমুক্ত জল প্রকল্প খোলা হয়। সেকেন্দ্রা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কংগ্রেসের প্রকাশ সাহা জানান, সেকেন্দ্রায় ২০০৪ সালে ওই প্রকল্পটি চালু হয়। প্রায় এক একর জমিতে ১.৪০ লক্ষ লিটারের জলাধার তৈরি করা হয়। সেই জল সরবরাহ করা হত সেকেন্দ্রা, ইমামনগর, দস্তামারা, রামেশ্বরপুর, ভোলাপাড়া, নবকান্তপুর-সহ ১২টি গ্রামে। ভূগর্ভস্থ জল তোলার জন্য ৩টি পাম্প বসে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি সেই জলও আর্সেনিকমুক্ত নয়। প্রকাশও বলেন, ‘‘ফলে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সেই জল সরবরাহ ব্যবস্থা কাজেই আসেনি।”
মুর্শিদাবাদের জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সমীক্ষা অনুসারে, ওই এলাকার ১৪৬টি নলকূপের জল পরীক্ষা করে .০৫ মিলিগ্রামের বেশি আর্সেনিকের মাত্রা ধরা পড়েছে ওই এলাকার নলকূপগুলোতে।
সেকেন্দ্রায় কাজ দেখাশুনোর জন্য জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের জনা চারেক শ্রমিক রয়েছেন। তাদের একজন ইসমাইল শেখ জানান, ২১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসানো পাইপলাইনে ১০৮টি ট্যাপ বসানো ছিল। এখন সেই সব ট্যাপের বেশির ভাগই চুরি হয়ে গিয়েছে। তিনটি পাম্পের মধ্যে ইমামনগরের পাম্পটি বহুদিন থেকেই অচল। বাকি দু’টো চালালেও সে জলের রঙ দেখলেই আঁতকে ওঠেন মানুষ। আর্সেনিকের বিপদে কাপড় কাচতেও সে জল ব্যবহার করতে ভয় পান। স্থানীয় গ্রামবাসী মহাতাব হোসেন বলছেন, “কোনও উপায় না দেখে জঙ্গিপুর থেকে জল কিনে এসে খাচ্ছি।” আরও বাসিন্দা আব্দুল হামিদ বলেন, “শুরুতে জল এতটা খারাপ ছিল না। কিন্তু বছর খানেক যেতে না যেতেই অনেকের শরীরে ঘা দেখা দিতে শুরু করে। সেই থেকে ভয়ে জল আর কেউ ব্যবহার করেন না।”
গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য নুরুল হক বলেন, “সেকেন্দ্রার পাশ দিয়ে বইছে পদ্মা-ভাগীরথী। নদী থেকে জল শোধন করে যদি সরবরাহ করা হত তা হলে সমস্যা মিটত। আমরা সেই দাবি জানিয়েছি। কিন্তু তা হচ্ছে না।”
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরী দফতরের সহকারী বাস্তুকার বিশ্বজিৎ দে সেকেন্দ্রায় পানীয় জলের সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ওই প্রকল্পটিকে আর্সেনিকমুক্ত জল সরবরাহ হিসেবে নতুন করে গড়ে তুলতে ৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি হয়েছে। ওই প্রকল্পটি প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য রাজ্য দফতরে জমা দিয়েছে। যতদিন না আর্থিক অনুমোদন মিলছে ততদিন পর্যন্ত সেকেন্দ্রার পানীয় জলের সমস্যা মিটবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy