Advertisement
০৩ মে ২০২৪

গরমে জল নেই, ধুঁকছে হাসপাতাল

বোতলে জল ভরে ওয়ার্ডের দিকে প্রায় রুদ্ধশ্বাসে ছুটছিলেন বছর পঞ্চাশের কৃষ্ণপদ রায়। ছেলে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি। একটু জল খেতে চেয়েছিল সে। কিন্তু ওয়ার্ডের কোথাও জল নেই।

বেহাল নলকূপ। রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

বেহাল নলকূপ। রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০১:৪৪
Share: Save:

বোতলে জল ভরে ওয়ার্ডের দিকে প্রায় রুদ্ধশ্বাসে ছুটছিলেন বছর পঞ্চাশের কৃষ্ণপদ রায়। ছেলে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালে ভর্তি। একটু জল খেতে চেয়েছিল সে। কিন্তু ওয়ার্ডের কোথাও জল নেই।

কেউ ডেকে কিছু বলতে গিয়েছিল। হাঁপাতে হাঁপাতেই কৃষ্ণবাবু বললেন, ‘‘দাদা, দাঁড়ানোর সময় নেই। ছেলেটা জল খেতে চেয়েছে। এখানে তো জল নেই। বাইরে গিয়েছিলাম আনতে। ওখানেও লম্বা লাইন। দেরি হয়ে গেল।’’

ঘটনাস্থল রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল।

গোটা হাসপাতালে একটিমাত্র কল ভাল রয়েছে। বাকিগুলো অকেজো। ফলে সেখানেও রোগীর বাড়ির লোকেদের ঠেলাঠেলি।

একমাত্র ব্যবহারযোগ্য পানীয় জলের কলের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল তাহেরপুর থানার বীরনগর পুরসভার চন্ডীতলার বাসিন্দা অনুপ বিশ্বাসের সঙ্গে। অনুপবাবু বলেন, ‘‘গত তিন দিন ধরে স্ত্রী এখানে ভর্তি রয়েছেন। তাই প্রতিদিনই হাসপাতালে আসতে হচ্ছে। আর রোজই পানীয় জলের চরম সমস্যা। গোটা হাসপাতালে একটা মাত্র কল ভাল। বাকিগুলো খারাপ। কী যে করি!’’

হাসপাতালে কাগজে-কলমে চারটি চাপা কল রয়েছে। এর মধ্যে হাসপাতালের সামনে ডান দিকের কলটি দীর্ঘদিন খারাপ। হ্যান্ডেলটাও ভেঙে নিয়ে গিয়েছে কেউ বা কারা। ভেতরে স্ত্রীরোগ বিভাগের সামনে একটা কল রয়েছে। সেটা থেকেও জল পড়ে না বেশ কিছু দিন।

বাঁ দিকে আইসোলেশন ওয়ার্ডের সামনের কলটা থেকে জল খাওয়া যায় না। ওই ওয়ার্ডের রোগীর পরিবারের লোকজন বললেন, ‘‘ওই কলের জলে বড়জোড় বাসন মাজা অথবা হাত-পা ধোয়ার যেতে পারে। খাওয়া? কখনও না।’’

রইলো বাকি এক। হাসপাতালে সামনে বাঁ দিকে বট গাছের কাছে কলটিতে থেকে এখনও জল পড়ছে। সেই জলই খাচ্ছে রোগী ও তাঁর পরিবারের লোকেরা। তাই ওই কলে অধিকাংশ সময়ই ভিড়ে ঠেলাঠিল দশা। তবে সেটাও মেরামত করে কোনও মতে চালু রাখা হয়েছে।

সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতালের সুপার দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘বিষয়টি বিডিও ও স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানকে জানিয়েছি। কিন্তু, সেখান থেকে সে ভাবে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বাধ্য হয়ে আমরা নিজেদের উদ্যোগে একটা কল মেরামত করেছি। তা-ও, ভাল কল মিস্ত্রী পাওয়া যাচ্ছিল না। স্থানীয় এক জন মিস্ত্রীকে দিয়ে ওটা সারানো হয়েছে।’’

রানাঘাট ১ নম্বরের বিডিও অনুপম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমাকে কেউ জানায়নি। একবারের জন্য ফোন করে জানালেও, ব্যবস্থা নেওয়া যেত। আমার অফিসে কেউ জানিয়েছিল কি না সেটা খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি। খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেব।’’

আনুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান কংগ্রেসের স্বপন ঘোষও একই সুরে জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে কিচ্ছুটি জানতেন না। বললেন, ‘‘এ নিয়ে আমাদের কেউ জানায়নি। জানালেই ব্যবস্থা নিতাম। এ জন্য, লিখিত দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। ফোনে একবার জানালেই ব্যবস্থা নেওয়া হতো।’’

রানাঘাট রেল স্টেশন থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে আনুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আড়াইশো শয্যার মহকুমার হাসপাতাল। অধিকাংশ দিনই সব শয্যা ভর্তি হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে এক শয্যায় দু’জন রোগীকেও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। জরুরী বিভাগ ছাড়াও সপ্তাহে ৬দিন চলে বহির্বিভাগ। শুধু এই বিভাগেই গড়ে প্রতি দিন আড়াইশো নতুন রোগী ভিড় করেন। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের এই দশা? হাসপাতালেরই এক কর্মীর কথায়, ‘‘কী আর বলব দাদা, সবাই শুধু ভোট নিয়েই ব্যস্ত। মানুষের কথা কেউ ভাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

water scarcity Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE