ভুয়ো মেডিক্যাল চক্রের পিছনে কি আরও বড় কোনও মাথা আছে?
ধৃত শ্যামল দত্তের কারবারের বহর দেখে প্রশ্নটা তুলছেন সিআইডির তদন্তকারী আধিকারিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন কলেজ কর্তপক্ষও। ভুয়ো ডাক্তারি ডিগ্রির কারবার, জাল অশোকস্তম্ভ ব্যবহার, সরকারি নথি জাল করা ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনগর থেকে শ্যামলকে গ্রেফতার করে সিআইডি। শ্যামলের গ্রামের বাসিন্দারাও বলছেন, ‘‘যে ভাবে গোটা বিষয়টি সাজানো হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে এ একা শ্যামলের কর্ম নয়। এর পিছনে বড় কোনও মাথা না থাকলে কোনও ভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের গেজেটে শ্যামলের সংস্থার নাম ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।’’
সিআইডি-র দাবি, ২০১৫ সালে ‘বায়োকেমিক এডুকেশন গ্র্যান্ট কমিশন’ নামে সংস্থাটি খুলেছিলেন প্রধান অভিযুক্ত শ্যামল দত্ত। একটি ভুয়ো মেডিক্যাল বোর্ডও খোলা হয়। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও সারা দেশে এই বোর্ডের অধীনে ৭৮টি কলেজ খোলা হয়েছে। ওই সংস্থা থেকে অনুমোদন নিয়ে কল্যাণীতে একটি কলেজ খুলেছিলেন কলকাতার বাসিন্দা অতীশ আইচ। অতীশবাবু জানান, গেজেটে নাম দেখেই তিনি কলেজের অনুমোদন নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু দিন পরে শ্যামল দত্তর সঙ্গে কথাবার্তা বলে ও চিঠিপত্রের বয়ান দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। বিষয়টি ভাল করে বোঝার জন্য তিনি কমিশনের কাছে ভুয়ো সার্টিফিকেট দেখিয়ে চিকিৎসা করছেন এমন চিকিৎসকের নামে অভিযোগ করেন। কিন্তু তাঁদের কাউকে ডেকে বিচার না করায় বাধ্য হয়েই তিনি জেলাশাসকের কাছে আরটিআই করে জানতে চান। মোট তিন বার তিনি আরটিআই করেছেন। কিন্তু একবারও শ্যামল দত্ত জেলাশাসককে উত্তর দেননি।
অতীশবাবু বলেন, ‘‘দু’বারের মাথায় শ্যামল দত্ত আমাকে কৃষ্ণনগরের মেডিক্যাল বোর্ডে ডেকে পাঠান। কিন্তু সে দিন কেউই উপস্থিত ছিলেন না। তাতেই সন্দেহ বেড়ে যায়। এর পর আমি ফের জেলাশাসকের কাছে আরটিআই করি। কিন্তু সেখানেও কোনও উত্তর না পেয়ে স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিবকে চিঠি লিখে বিষয়টি জানাই।’’ জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘ভারত সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকেও আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমি দু’বার চিঠি লিখে ওই সংস্থাকে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে বলেছিলাম। দু’বারই চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, তারা কিছুই জানাবেন না। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছিলাম।’’
তবে শ্যামলের উত্থানে রীতিমতো অবাক তাঁর গ্রাম জাভা। পরিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্যামলবাবু এক সময় ইন্দো-তিব্বত সীমান্তে চাকরি করতেন। সব ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন। সেখান থেকে যান শিলিগুড়ি। সেখানে চেম্বার খুলে চিকিৎসা শুরু করেছিলেন। এর পর তিনি কলকাতা চলে যান। তাঁর বাবা পঁচাশি বছরের বৃদ্ধ মহেন্দ্র দত্ত এখন বাড়ির সামনে ছোট্ট মুদিখানার দোকান চালান। তাঁর দাবি, ‘‘আমার ছেলে এমন কাজ করতেই পারে না।’’