Advertisement
E-Paper

আধখানা আসমান

যতি ছিল তাঁতিঘরের মেয়ে। যখন তার তিন বছর বয়স, তখন তার বিয়ে হয়ে যায়। আর পাঁচ বছর বয়সে সে বিধবা হয়। সে যাতে নিজের গ্রাসাচ্ছনের ব্যবস্থা নিজেই করতে পারে, তাই তার হয়ে এক আত্মীয় নানা জায়গায় চিঠিচাপাটি করতে থাকেন।

শিবনাথ মাইতি

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৭ ০২:২৬

যতি ছিল তাঁতিঘরের মেয়ে। যখন তার তিন বছর বয়স, তখন তার বিয়ে হয়ে যায়। আর পাঁচ বছর বয়সে সে বিধবা হয়। সে যাতে নিজের গ্রাসাচ্ছনের ব্যবস্থা নিজেই করতে পারে, তাই তার হয়ে এক আত্মীয় নানা জায়গায় চিঠিচাপাটি করতে থাকেন। সৌভাগ্যক্রমে এক জায়গা থেকে প্রত্যুত্তর আসে এবং যতি একটি চাকরি পায়— এক বিপত্নীক তরুণ জমিদারের শিশুকন্যার লালন-পালনের কাজ।

জমিদার যদি ফের একটি বিয়ে করতেন, সেটা কোনও অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না। কিন্তু সন্তানবৎসল জমিদার ছেলেমেয়েদের জন্য সৎমা আনতে রাজি হলেন না। তাঁর সেই আত্মত্যাগের ফল ভুগল একটি মানুষ— যতি। বিধবা যতি জমিদারের শয্যাসঙ্গিনী হল। জমিদারের তীব্র নীতিবোধসম্পন্ন ছেলে এতে অন্যায় কিছু দেখলেন না। উল্টে এ কাজে বাবার আত্মত্যাগকেই বড় বলে মনে হয়েছিল।

জমিদার যতির নামে এক কাঠা জমি বা কোনও কোম্পানির কাগজ লিখে দেননি। তাঁর ধারণা ছিল, তাঁর ছেলেমেয়েরা যতিকে দেখবে। যদিও জমিদার বাড়িতে যতির ভরণপোষণের অভাব ছিল না। কিন্তু এক দিন জমিদারের বৌমার সঙ্গে যতির মনোমালিন্য হয় এবং সে কারণে তাকে জমিদারের বাড়ি ছাড়তে হয়। প্রৌঢ়ত্বের উপান্তে নিঃসম্বল অবস্থায় যতি মুর্শিদাবাদে নিজের গ্রামে ফিরে যায়। এবং এক বছরের মধ্যে মারা যায়।

জমিদার বাড়িতে যতির অবস্থান স্পষ্ট ছিল না। সে যে ভৃত্যশ্রেণির নয়, তার প্রমাণ, সে বিছানায় বসতে পারত। আবার সে যে প্রভুশ্রেণির নয়, তার প্রমাণ যতির প্রতি জমিদার-বৌমার ব্যবহার। যতির অবস্থান তা হলে ঠিক কোথায়? আরও একধাপ এগিয়ে বললে, সমাজে মেয়েদের অবস্থান কোথায়? সমাজে মেয়েদের অবস্থান কী হওয়া উচিত?

ফরাসি ভাবুক সিমোন দ্য বোভোয়া তাঁর ‘The Second Sex’ বইয়ের শুরুতে ঠিক এই দু’টি প্রশ্ন করেছেন। তবে তার আগে তাঁর মোক্ষম প্রশ্ন: নারী কী? কেউ বলেন, ‘নারী হল জরায়ু।’ আবার কিছু নারীর কথা বলতে গিয়ে বিশেষজ্ঞেরা বলেন, ‘ওরা নারী নয়,’ যদিও অন্যদের মতো তাদেরও জরায়ু আছে। সকলেই সহমত যে মনুষ্যজাতির স্ত্রীলিঙ্গ আছে, তারা সংখ্যায় মানবকুলের প্রায় অর্ধেক। তবু আমাদের বলা হয়, ‘নারীত্ব বিপন্ন’। জোর দিয়ে বলা হতে থাকে, ‘নারী হও, নারী থাকো, নারী হয়ে ওঠো।’ অর্থাৎ প্রত্যেক স্ত্রী-মানুষই আবশ্যিক ভাবে ‘নারী’ নয়, তাকে নারীত্বের এই রহস্যময় এবং বিপন্ন বাস্তবের অংশী হতে হবে।

নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে এমনটা কখনও কোনও পুরুষকে বলতে শোনা যায়নি, ‘আমি এক জন পুরুষ।’ বা কোনও দিনই তিনি পুরুষের অবস্থাটা কেমন তার ব্যাখ্যা দিয়ে বই লিখতে বসবেন না। কিন্তু লিখতে বসে কোনও মেয়েকে গোড়াতেই বলতে হয়, ‘আমি এক জন মেয়ে।’ এই বাস্তব সামনে রেখে বোভোয়া তাঁর আলোচনা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। তিনি দেখাচ্ছেন— সমাজের কেন্দ্রে রয়েছে পুরুষ, আর মেয়েরা হল তার সহযোগী। পুরুষই সকল কর্মকাণ্ডের হোতা, সে-ই প্রধান, সে-ই মুখ্য, সে-ই সর্বকাজের মূল। সেখানে মেয়েদের কোনও ঠাঁই নেই, তারা প্রান্তিক। তাদের অবস্থান এ সবের বাইরে, কোন এক সুদূরে। তাই পুরুষ হল ‘পরম’, আর মেয়েরা হল ‘অপর’। বোভোয়াই যে প্রথম ‘অপর’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, এমন নয়। কিন্তু তাঁর মতো এত বিস্তৃত ভাবে, এমন গভীরতায় গিয়ে তাঁর আগে কেউ অপরতার ব্যাখ্যা দেননি।

‘অপর’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন বোভোয়া?

তাঁর ব্যাখ্যা: আমাদের সমাজে কখনও দুই জাতি অর্থাৎ পুরুষ ও স্ত্রী সমান গুরুত্ব পায় না। যদিও আইনি কাগজপত্রে দু’টো শব্দকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে ছবিটা মোটেও অতটা সুখকর নয়। কখনও তা বিদ্যুতের দুই আধানের মতো নয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এই রকম যে, তারা হল ধনাত্মক আধান, সেই সঙ্গে ‘নিরপেক্ষ’ও। এমনটা বলার পিছনে যথেষ্ট কারণ আছে। যখন সমগ্র মানবজাতির কথা বোঝানো হয়, তখন ‘ম্যান’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু মেয়েদের বেলায় সীমিত কিছু লক্ষণ উল্লেখ করে বলা হয় যে, মেয়েরা হল ‘ঋণাত্মক আধান’।

এক জন পুরুষ ভাবে যে জগতের সঙ্গে তার সহজ, স্বাভাবিক, সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, যা সে আপনা থেকে অনুভব করে। কিন্তু নারী তার সেই অনুভবের পথে অন্তরায়। নারী যেন কয়েদখানা স্বরূপ। কিছু গুণের অভাবেই মেয়েরা মেয়ে,’’ বলেছেন অ্যারিস্টটল, ‘‘প্রাকৃতিক খামতির মতো মেয়েরা অসম্পূর্ণ।’’ আর সন্ত টমাস তো সরাসরিই ঘোষণা করেছেন, মেয়েরা হল ‘ক্রটিপূর্ণ পুরুষ’, ‘ঘটনাচক্রে’ সৃষ্ট একটা অস্তিত্ব। জেনেসিসের গল্পেও তো যে সেই একই প্রতীক, সেখানে আদমের হাড় থেকে তৈরি হচ্ছেন ইভ।

এই ভাবে মানবতাকে পুরুষের সঙ্গে সমার্থক হিসেবে দাবি করা হয়েছে। মেয়েদের ধরে নেওয়া হয়েছে পুরুষের সহযোগী হিসেবে, যদিও তাঁরা নিজেরা তা ধরে নেননি। কখনওই, কোনও কালে মেয়েদেরকে স্বয়ংসম্পূর্ণ জীব বলে ধরা হয়নি। এই প্রসঙ্গে, মেয়েদের সম্পর্কে ভারতীয় শাস্ত্রকার মনুর নিদানের কথা বলা যেতে পারে। মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে, নারীরা কোনও অবস্থাতেই স্বাধীনতা পাওয়ার যোগ্য নয়। সে বাল্যে বাবার অধীনে, যৌবনে স্বামীর অধীনে এবং বিধবা বা বৃদ্ধা হলে পুত্রের অধীনে থাকবে।

Benda যেমন তাঁর Rapport d'Uriel লিখেছেন, পুরুষের শরীর স্বনির্ভর, সেখানে মেয়েদের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। মেয়ে ছাড়াই এক জন পুরুষ তার নিজের অস্তিত্ব চিন্তা করতে পারে। কিন্তু কখনও কোনও নারী পুরুষকে ছাড়া চলতে পারে না। মেয়েরা হল ছেলেদের হুকুম পালনের পাত্রী। এই ভাবে এক জন মেয়ের পরিচয় গড়ে ওঠে। এই ভাবে পুরুষকে সামনে রেখে এক জন মেয়েকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। কিন্তু কখনও নারীর উদাহরণ দিয়ে পুরুষকে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।

মনুষ্য জাতির ইতিহাস যত পুরনো, অপরতার ধারণাও তত পুরনো। আদিম সমাজ থেকে পুরাণে, গল্পগাথায় সবর্ত্রই মুখ্য ও গৌণ— এই দ্বিত্বের উপস্থিতি। প্রথম দিকে অপরতার ধারণায় মেয়েদের জড়িয়ে ফেলা হয়নি, পরে তারাও এই ছকে জড়িয়ে পড়েছে।

পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, চিরদিনই দুর্বলদের উপর সবলেরা আধিপত্য বিস্তার করেছে। মাথা গুঁজতে একটু ঠাঁইয়ের খোঁজে পৃথিবী জুড়ে ইহুদিদের ছড়িয়ে পড়া, আমেরিকায় দাস ব্যবস্থার প্রবর্তন বা সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার তার উদাহরণ। কিন্তু এই আধিপত্যের বিরুদ্ধে কখনও কখনও দুর্বলদের আন্দোলন করতে দেখা গিয়েছে। যেমন রাশিয়ায় প্রোলেতারিয়েত বিপ্লব, হাইতিতে নিগ্রোদের। কিন্তু কখনও মেয়েদের দলবদ্ধ ভাবে পুরুষদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। আন্দোলন যা কিছু হয়েছে তা প্রতীকী মাত্র। পুরুষেরা দাবি করে এসেছে, যে মেয়েরা যা কিছু পেয়েছে তারা তা অর্জন করেনি। তাদের দেওয়া হয়েছে মাত্র।

কিন্তু কেন মেয়েরা দলবদ্ধ হতে পারেনি? মনুষ্যজাতির অর্ধাংশ হয়েও কেন তারা দুর্বল থেকে গেল? বোভোয়ার মতে, তা যে হয়নি তার কারণ, মেয়েদের কোনও ধর্ম নেই, অতীত নেই, ইতিহাস নেই। তারা পুরুষদের মাঝে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাস করে। গৃহস্থালির কাজে, সন্তান লালনপালনে ব্যস্ত থাকে। পুরুষদের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে তাদের জীনযাপন।

কোনও ইহুদি বা কালো মানুষ অত্যাচারীদের ধ্বংস করে নিজেদের দেশ-দুনিয়া গড়ে তোলার কথা কল্পনা করতে পারেন। কিন্তু কোনও মেয়েই পুরুষদের হটিয়ে শুধু মেয়েদের দেশের কথা কল্পনা করে না। আর সে কারণেই বোধহয় কলকারখানা থেকে রাজনীতি সর্বত্র পুরুষদের এত আধিক্য। আর সে কারণেই তারা গুরুত্বপূ্র্ণ পদগুলি কুক্ষিগত করে রাখে। ইদানীং মেয়েরা বহু ব্যাপারে যোগ দিতে শুরু করেছে। কিন্তু এখনও পৃথিবীটা একান্তই পুরুষদের।

এখনও ব্যাপারটা এ রকম যে, সব ক্ষমতার উৎস পুরুষেরা ঠিক করে দেয়। ঠিক করে, সমাজে মেয়েদের অবস্থান কী হবে, কী হওয়া উচিত। আর এই ভাবে একাধারে মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও সত্ত্বার স্বাধীনতার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। ফলে মেয়েদের কখনও আর চালকের আসনে বসা হয়ে ওঠে না। তাদের ‘অপর’ হিসেবেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

সিগমুন্ড ফ্রয়েড তাঁর ‘Female Sexuality’ প্রবন্ধে ধাপে-ধাপে মেয়েদের যৌনতার ধাপগুলি কেমন করে বয়সের সঙ্গে বদলে যায়, তার ব্যাখ্যা করেছেন। সেই ব্যাখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিমোন দ্য বোভোয়া। তাঁর মতে, ফ্রয়েডের এই ব্যাখ্যা পুরুষের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবা। ফ্রয়েড ধরেই নিয়েছেন যে, একটি বাচ্চা মেয়ে ভাবে তার পুরুষাঙ্গ ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু এই ধারণা তার পুরুষের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা এবং তার ভিত্তিতে আহৃত জ্ঞান থেকে পাওয়া। বোভোয়া সেখানে বলছেন, মনঃসমীক্ষণের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এক জন মেয়ে পুরুষের সঙ্গে শারীরিক ভিন্নতার কারণে যে দুঃখ পায় তার পিছনে শুধু সেটাই দায়ী নয়। আরও কিছু কারণ থেকে তার এই হীনমন্যতার জন্ম হয়।

এখানে তিনি আডলারের প্রসঙ্গ টেনেছেন। কারণ, ফ্রয়েড যে ভাবে যৌনতার উপরে ভর করে মানুষের জীবন ব্যাখ্যা করেছেন তাতে গলদ খুঁজে পেয়েছেন আডলার। তাঁর মতে, মেয়েরা যে নিজেদের প্রান্তিক বলে ভেবে নেয়, কারণ তার নারীত্বকে প্রতিনিয়ত অপমান করা হয়। এই হীনমন্যতা শুধু তার শারীরিক পার্থক্যের জন্য নয়, বরং তার পিছনে সার্বিক পরিস্থিতি দায়ী। যদি কোনও মেয়ে হীনমন্যতায় ভোগে, তা হলে তার পিছনে কারণ হল এই, শুধু মাত্র ছেলে হওয়ার জন্য এক জন পুরুষ শিশু যে সুবিধা ভোগ করে তা ওই বাচ্চা মেয়েটি পায় না। পরিবারে তার বাবার জায়গা, পুরুষশাসিত সমাজ, তার নিজের শিক্ষা— সব কিছুই তাকে এই ধারণায় পৌঁছতে সাহায্য করে যে, পুরুষই হল সর্বেসর্বা। ফলে, হয় কোনও নারী নিজেকে পুরুষ ভাবতে শুরু করে বা কোনও পুরুষকে বশ করতে তার মেয়েলি গুণপনা ব্যবহার করে।

বোভোয়ার মতে, ছেলেরা মেয়েদের মধ্যে এত খুঁত দেখতে পায় যে, কোনও অত্যাচারীও তা অত্যাচারিতের মধ্যে পায় না। ছেলেদের বদঅভ্যাস হল, যেমনটি সে চাইবে, মেয়েদের তা করতে হবে। পুরুষেরা সুবিধেবাদী। তারা চিরদিনই মেয়েদের বোঝা বলে মনে করে। যদি কেউ উদার মনেরও হয় তা হলেও। আবার উদারমনস্ক হওয়ার জন্য নিজের প্রশংসা করতে ছাড়ে না ছেলেরা। এবং তার পর যদি কোনও কারণে সঙ্ঘাত বাধে তো তখন সে বলে, ‘মেয়েরা অকৃত়়জ্ঞ’। কিঞ্চিৎ বিরক্তির সঙ্গে বলে, ‘‘আমি তার প্রতি যথেষ্ট উদার।’’ মেয়েটি ভাবে, তাকে করুণা করা হচ্ছে। তার চাওয়া-পাওয়ার জন্য সে গ্লানি অনুভব করে।

এই হীনমন্যতায় ভোগার ব্যাপারটা একটু একটু করে বদলাচ্ছে। বোভোয়ার মতে, আমাদের এই পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েরা বরাবর প্রান্তিক। তাই মেয়েদের এই শিকল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার চিরদিনই রয়ে গিয়েছে। ইদানীং সেটা বেড়েছে। কোনও পুরুষকে পাল্টা বন্দি করার চেয়ে গোটা ব্যবস্থাটা থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব মেয়েরা। এখন মেয়েরা পুরুষদের ‘সবাই সমান’ সেই তত্ত্ব না বুঝিয়ে বরং নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরছে। ফলে পুরুষদের মনে এক নতুন দ্বিধার জন্ম হয়েছে— হয় মেয়েদের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিতে হবে বা তাকে অস্বীকার করতে হবে।

এ দিকে, দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা এখন পুরুষের মতো আচরণ করতে শুরু করছে। তারা নিজেদের চিন্তাভাবনার জন্য, পদক্ষেপ করার জন্য, নিজের কাজের জন্য নিজেকে বাহবা দেয়, যেমনটা পুরুষেরা এত দিন পেয়ে এসেছিল। এখন নিজেদের অবজ্ঞা করার বদলে মেয়েরা পুরুষদের সমান হিসেবে নিজেদের তুলে ধরে। তবে বোভোয়া এ-ও স্বীকার করছেন যে, কিছু পুরুষ সত্যিই মন থেকে মেয়েদের উন্নতি চায়। তারা চায়, এত দিন যে আত্মত্যাগ মেয়েরা করে এসেছে, তার প্রতিদান তারা পাক।

মেয়ে ও ছেলেদের মধ্যে পার্থক্য চিরদিন থাকবেই। মেয়েদের শরীর, কোনও পুরুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক, সন্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনও পুরুষের মতো হবে না। দরকার যেটা সেটা হল, এই নারী-পুরুষের পার্থক্য মেনে নিয়ে তার মধ্যে সমতা আনা। বোভোয়ার স্বপ্ন, এমন একটি সমাজ গড়ে উঠুক যেখানে এক জন সুলতান যেমন ক্ষমতা ভোগ করেন, তাঁর হারেমের সুন্দরীরাও যেন সেই ক্ষমতা ভোগ করেন। অর্থাৎ শুধু জমিদার নয়, যতিরাও যেন সমান সুবিধে ভোগ করে।

বোভোয়ার কথায়, ‘‘যদি আমরা মনুষ্যজাতির অর্ধাংশ অর্থাৎ মেয়েদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পারি, তা হলে মনুষ্যত্ব তার আসল মানে পাবে, নারী ও পুরুষ তাদের সত্যিকারের রূপ পাবে।’’

ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সহায়ক গ্রন্থ

যতির ঘটনাটি তপন রায়চৌধুরীর ‘বাঙালনামা’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া।

Women empowerment social development
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy