Advertisement
E-Paper

ষাটোর্ধ্বেরা ‘তরুণ’ কিন্তু চল্লিশেই ‘বৃদ্ধ’! বয়স নিয়ে অনিয়মে বার্ধক্য ভাতা অমিল নদিয়ায়

নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে ভাতা পাওয়ার অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে উঠেছে, তাঁদেরও অনেকে ভাতা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:০০

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ ।

বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন বছর চল্লিশের যুবক-যুবতীরা! রাজ্য সরকারের তরফে ষাটোর্ধ্ব মানুষদের দেওয়া ভাতাতে এমনই বেনিয়মের অভিযোগে উঠল নদিয়ায়। অভিযোগ করলেন নদিয়ার হাঁসখালি এলাকার কয়েক জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। তাঁদের দাবি, এলাকার বছর চল্লিশের কয়েক জন যুবা বার্ধক্য ভাতা পেলেও তাঁরা সেই ভাতা পাচ্ছেন না। এই নিয়ে ব্লক অফিস থেকে মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে তাঁদের দাবি। উল্লেখ্য, নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে ভাতা পাওয়ার অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে উঠেছে, তাঁদেরও অনেকে ভাতা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। মহকুমা শাসক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়েছে সারা জেলা জুড়ে।

নদিয়ার রানাঘাট মহাকুমার হাঁসখালি ব্লকের দক্ষিণপাড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তির দাবি, তাঁদের বয়স অনেক আগেই ৬০ পেরিয়েছে। কিন্তু তাঁরা বার্ধক্য ভাতা পান না। এই নিয়ে রাজ্যের ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি দফতরে বার বার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। তবে কোনও লাভ হয়নি। অথচ, বিভিন্ন সরকারি নথি জাল করে এলাকার ৩০-৪০ বছর বয়সি অনেকেই সেই বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন বলেই অভিযোগ হাঁসখালি এলাকার ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের একাংশের। অভিযোগ, তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে তা এলাকার ৩০ থেকে ৪০ বছরের যুবকদের দেওয়া হচ্ছে। যোগ্য নন, এমন অন্তত ২২-২৪ জনকে বার্ধক্য ভাতা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন এলাকার প্রবীণরা। তাঁদের দাবি, পঞ্চায়েত প্রধানদের সহযোগিতাতেই এই বেনিয়ম হচ্ছে।

সত্তরোর্ধ্ব নরহরি সরকারের কথায়, ‘‘পাঁচ বার আবেদন করেও আমার কপালে বার্ধক্য ভাতা জোটেনি। নাতি-নাতনির বয়সি ছেলেমেয়েরা বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছে। দেখে হাসি পায়। আবার নিজের ভাগ্যের জন্য করুণাও হয়।’’

অন্য দিকে, ষাট বছর বয়সের মাপকাঠি না পেরোনো সত্ত্বেও চার বছর ধরে নিয়মিত বার্ধক্য ভাতা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন দক্ষিণপাড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা টুলু মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। পার্টির লোকেদের বলেছিলাম। ওরাই আমাদের সামান্য কিছু ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। শুধু আমি নয়, আমার স্বামীও ভাতা পাচ্ছে।’’

পুরো বিষয়টি নিয়ে শাসকদল তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার। তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূল দলটা এই ভাবে করেকম্মে খাওয়ার জন্য। পঞ্চায়েত প্রধানের আত্মীয়ের স্বামী বেঁচে থাকতে যদি বিধবা ভাতা পেতে পারেন, তা হলে যুবককেরাও যে বার্ধক্য ভাতা পাবেন, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে।’’

অন্য দিকে, সব অভিযোগ অস্বীকার করে রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘একাধিক পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। আর বিজেপি মানে দুর্নীতি — এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। প্রশাসন সজাগ রয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

বার্ধক্য ভাতায় বেনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে রানাঘাট মহকুমার শাসক রৌণক আগরওয়াল বলেন, ‘‘বিডিও এবং সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের আধিকারিকরা প্রত্যেকটি গ্রামে গিয়ে সরজমিনে খতিয়ে দেখবেন। ভাতা পাওয়ার অনুপযুক্ত এমন কেউ যদি ভাতা পান, তা হলে শীঘ্রই তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ভাতা যাতে প্রকৃত প্রাপকদের হাতে যায়, তার ব্যবস্থাও করবে প্রশাসন।’’ প্রশাসন তৎপরতা দেখানোর পর তাঁরা ভাতা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানিয়েছেন দক্ষিণপাড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জনা পঞ্চাশেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।

Old Age Pension Scheme Nadia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy