Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দিল্লিতে পাচার তুতো বোনকেও

বিকেলে পিসির ছেলে কুলজিত হাজরার সঙ্গে মোমো খেতে বেরিয়েছিল বছর চোদ্দোর মেয়েটি। দু’বছর হয়ে গেল, আজও বাড়ি ফেরেনি। অভিযোগ, নিজের মামাতো বোনকেও ছাড়েনি সে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৭ ১৩:৪৫
Share: Save:

বিকেলে পিসির ছেলে কুলজিত হাজরার সঙ্গে মোমো খেতে বেরিয়েছিল বছর চোদ্দোর মেয়েটি। দু’বছর হয়ে গেল, আজও বাড়ি ফেরেনি। অভিযোগ, নিজের মামাতো বোনকেও ছাড়েনি সে।

চেপে ধররার পর সে নাকি স্বীকারও করে নিয়েছিল যে মামার মেয়েকে পাচার করে দিয়েছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। জেলও খেটেছিল সে তিন মাস। কিন্তু কৃষ্ণনগরের নগেন্দ্রনগরের ওই ঘটনার পরেও তার চরিত্রের কোনও পরিবর্তন হয়নি। বরং একের পর এক মেয়েকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। আর প্রতি বারই তার ফাঁদে পা দিয়ে ঠকেছে সকলে।

বছর দেড়েক আগে পাশের খোড়োপাড়ার একটি মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে জড়িয়ে বিয়েও করেছিল। কিন্তু সেই সম্পর্কও বেশি দিন টেকেনি। কিছু দিন পর থেকেই শুরু হয়েছিল অত্যাচার। এর পর দিল্লিতে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করে। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসে তরুণী। আর ফেরেনি।

এর দিন দশেক পরেই ফের শিকার ধরে কুলজিত। এ বার ওই তরুণীর এক বান্ধবী। মেয়েটিকে নিয়ে কুলজিত পাড়ি দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশ। সেখান থেকে দিল্লি হয়ে ফরিদাবাদ। সম্প্রতি হরিয়ানা পুলিশের সঙ্গে সেখানকার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শক্তিবাহিনী ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে কুলজিতের ডেরা থেকে। গ্রেফতার করা হয়েছে কুলজিতকে।

এই ঘটনা জানাজানির হওয়ার পরে কুলজিতের মামার বাড়ি থেকে শুরু করে তার প্রথম স্ত্রী-ও কঠিন শাস্তি দাবি করেছে কুলজিতের। এ দিন নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কুলজিতের প্রথম স্ত্রী বলেন, “বিয়ের পর থেকেই বলত আমাকে নিয়ে দিল্লি চলে যাবে। আমি আপত্তি করলে খুব মারত। বুঝতে পেরেছিলাম যে নিশ্চয়ই কোনও গন্ডগোল আছে।”

কুলজিতের মা সীমা হাজরা দিল্লিতে থাকে। এই গোটা ঘটনার সঙ্গে সে-ও জড়িত বলেই এলাকার মানুষের দাবি। তাদের অভিযোগ, অসৎ উদ্দেশ্যেই কুলজিত ও তার মা মেয়েদের ফুঁসলিয়ে দিল্লি নিয়ে যেত। কুলজিতের মামার কথায়, “নিজের দাদার এত বড় একটা ক্ষতি করে দেবে, ভাবতেও পানিনি।”

এ বার অবশ্য তেমনটা হয়নি। কুলজিতকে লুকিয়ে এক বান্ধবীর কাছে ফোন করে খোড়োপাড়ার ওই কিশোরী। কিন্তু কুলজিত বারবার এলাকা বদল করত। বদলে ফেলত ফোন নম্বরও। পুলিশও সে ভাবে উদ্যোগী না হওয়ায়, অধরাই থেকে গিয়েছিল কুলজিত। দিনকয়েক আগে ফরিদাবাদ থেকে ফোন করে সে ফের বিপদের কথা জানায় ওই বান্ধবীকে। সেই মোবাইলে ফোন করে দেখা যায় যে নম্বরটি বাড়িওয়ালি মনীষা রায়ের। তিনিও জানান যে ওই কিশোরীর উপরে অত্যাচার করছে কুলজিত। তখন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা মানবাধিকার কর্মী তাপস চক্রবর্তী মনীষার নম্বরে ফোন করে ঠিকানা জেনে নেন। যোগাযোগ করা হয় দিল্লির একটি মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে। তাদেরই উদ্যোগে সেখানকার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শক্তিবাহিনী শুক্রবার হরিয়ানা পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে হানা দিয়ে উদ্ধার করে কিশোরীকে। গ্রেফতার হয় কুলজিত। এর পর সেখানকার পুলিশ যোগাযোগ করে নদিয়া পুলিশের সঙ্গে। রবিবারই কোতোয়ালি থানার অফিসারেরা রওনা হয়ে যান ফরিদাবাদে।

অভিযোগ, বারবার কোতোয়ালি থানায় গেলেও পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে উল্টে দুর্ব্যবহারও করে ফিরেয়ে দেয়। শেষমেশ মানবাধিকার সংগঠনের চাপে নিখোঁজ হওয়ার ২২ দিন পর পুলিশ অভিযোগ নিলেও ওই কিশোরীকে ফিরিয়ে আনার কোনও চেষ্টাই করেনি বলে অভিযোগ। তাপসবাবুর বলেন, “বাধ্য হয়ে দিল্লির একটি মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করি।” জেলার পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া অবশ্য বলছেন, “যদি কোনও পুলিশ অফিসারের গাফিলতি ধরা পড়ে, তা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

women trafficking Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE