Advertisement
০৩ মে ২০২৪
কাকভোরে নলকূপের আওয়াজ

ঘুম ভাঙালি কেন, খুন ভাইপোকে

সোমবার কাকভোরে মুরগির ফার্ম থেকে ফিরে নলকূপে হাত-মুখ ধুচ্ছিলেন পীযূষ বিশ্বাস (২৩)। নলকূপের সেই বিদঘুটে আওয়াজে কাঁচা ঘুম ভেঙে যায় পাশের ঘরে শুয়ে থাকা পীযূষের কাকা গোপাল বিশ্বাসের। অভিযোগ, ঘুম থেকে উঠেই বেমক্কা বাঁশ দিয়ে সে পেটাতে শুরু করে পীযূষকে।

শোকার্ত: নিহত পীযূষের পরিবার। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: নিহত পীযূষের পরিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তেহট্ট শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

ক’দিন ধরেই ভোগাচ্ছিল নলকূপটা। জল উঠছিল বটে তবে তার ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ শুনতে পেত তামাম পাড়া। সকলে ভেবেছিলেন, তেল দিলেই আওয়াজটা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ‘দিচ্ছি, দেব’ করে তা হয়ে ওঠেনি। সেই নলকূপের আওয়াজটাই যে এমন কাল হবে, কে জানত!

সোমবার কাকভোরে মুরগির ফার্ম থেকে ফিরে নলকূপে হাত-মুখ ধুচ্ছিলেন পীযূষ বিশ্বাস (২৩)। নলকূপের সেই বিদঘুটে আওয়াজে কাঁচা ঘুম ভেঙে যায় পাশের ঘরে শুয়ে থাকা পীযূষের কাকা গোপাল বিশ্বাসের। অভিযোগ, ঘুম থেকে উঠেই বেমক্কা বাঁশ দিয়ে সে পেটাতে শুরু করে পীযূষকে। ছেলেকে বাঁচাতে এসে মার খান পীযূষের মা ময়না বিশ্বাস। পরে মা ও ছেলে তার প্রতিবাদ করায় ফল হয় আরও মারাত্মক। অভিযোগ, এ বার আর বাঁশ নয়, গোপাল ভোজালি দিয়ে কোপায় পীযূষকে। কোনও রকমে তিনি পাশের বাড়ি পালিয়ে যান। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। সেখানে গিয়েও এলোপাথাড়ি কোপায় গোপাল। ঘটনাস্থলেই মারা যান পীযূষ। তেহট্টের দেবনাথপুরের ওই ঘটনায় গোপালের বিরুদ্ধে থানায় খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কিন্তু ঘটনার পর থেকেই পলাতক বরখাস্ত হওয়া সেনা কর্মী গোপাল। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তন্ময় সরকার বলছেন, ‘‘গোপালের বিরুদ্ধে মারধরের বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছি, নলকূপের আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে যাওয়ায় রেগে গিয়ে সে ভাইপোকে খুন করেছে। তবে এর পিছনে অন্য কারণ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোপালের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

এমন ঘটনায় অবাক সীমান্ত ঘেঁষা ওই জনপদ। তাঁরা জানাচ্ছেন, পড়শি জেলা ডোমকল এলাকায় এমন তুচ্ছ কারণে বহু খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। কখনও পড়শির বাড়িতে মুরগি যাওয়া, কখনও সজনের ডাঁটা নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে খুন হয়েছেন অনেকে। কিন্তু কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় কেউ যে নিজের ভাইপোকে খুন করতে পারে তা ভাবতেই পারছেন না এলাকার লোকজন। বিশ্বাস বাড়িতে বাবা, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন মুরগি ফার্মের শ্রমিক পীযূষ। মাস তিনেক আগে তাঁর বিয়ে হয়েছে। পাশেই থাকে গোপাল। সে আগে সেনা বিভাগে চাকরি করত। কিন্তু বরখাস্ত হয়ে এখন বাড়িতে। তাঁর স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বাবার বাড়িতেই থাকেন। অভিযোগ, গোপালের আচরণ ভাল ছিল না। সে প্রায়ই লোকজনকে মারধর করত।

এ দিন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পুষ্প মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি সবে ঘুম থেকে উঠেছি। আচমকা পীযূষ দৌড়ে এসে আমার ঘরে ঢুকে দরজায় খিল লাগিয়ে দেয়। গোপাল ঘরের দরজা ভেঙে আমার সামনে ওকে ভোজালি দিয়ে কোপাতে থাকে। রক্তে গোটা ঘর ভেসে গিয়েছে। সেই দৃশ্যটা আর গোপালের চেহারা মনে পড়লেই শিউরে উঠছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE