Advertisement
০২ মে ২০২৪

অবহেলায় পড়ে কান্দি জেলা পরিষদের বাংলো

প্রাচীনতম পুরসভাগুলির এ কটি কান্দি। শহরের প্রায় প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে একটি অতিথিশালা। এক সময় কান্দিতে রাত্রিবাস করতে হলে জেলা পরিষদের এই ডাক বাংলোর নামই প্রথমে থাকত। তবে এলাকার বেশিরভাগ মানুষই এখন ভয় পান ওই চত্বরে ঢুকতে। সবুজঘেরা জমির মাঝখানে একতলা ছোট্ট বাড়িটিতে বছর দশেক আগেও নিয়মিত থাকতেন অতিথিরা। না, পর্যটকের আনাগোনা তেমন নেই এই অঞ্চলে। তবে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে যাঁরাই আসতেন, তাঁরা থাকতেন এই সরকারি বাংলোতেই।

কান্দির ডাকবাংলো। নিজস্ব চিত্র

কান্দির ডাকবাংলো। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কান্দি শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৩১
Share: Save:

প্রাচীনতম পুরসভাগুলির এ কটি কান্দি। শহরের প্রায় প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে একটি অতিথিশালা। এক সময় কান্দিতে রাত্রিবাস করতে হলে জেলা পরিষদের এই ডাক বাংলোর নামই প্রথমে থাকত। তবে এলাকার বেশিরভাগ মানুষই এখন ভয় পান ওই চত্বরে ঢুকতে।

সবুজঘেরা জমির মাঝখানে একতলা ছোট্ট বাড়িটিতে বছর দশেক আগেও নিয়মিত থাকতেন অতিথিরা। না, পর্যটকের আনাগোনা তেমন নেই এই অঞ্চলে। তবে বাণিজ্যিক প্রয়োজনে যাঁরাই আসতেন, তাঁরা থাকতেন এই সরকারি বাংলোতেই। স্বল্প ব্যয়ে সুন্দর ব্যবস্থাপনাও ছিল। কিন্তু এখন আগাছার ছড়াছড়ি। স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়াল ধরে ঝুলে আছে নানা লতা। তাদের শাসন করার ন্যূনতম তাগিদ নেই কারও। বর্ষার জলে পোকা, মাকড়ের আস্তানা হয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ এলাকবাসীদের।

জেলা পরিষদ সূত্রেই জানা গিয়েছে বাংলোটিতে মোট তিনটি ঘর রয়েছে। প্রতিটি ঘরই দ্বি-শয্যা বিশিষ্ট। সংলগ্ন শৌচাগারের ব্যবস্থাও রয়েছে। ঘরের ভিতরে সুদৃশ্য আলোকসজ্জা দেখে বোঝা যায় বাংলোটি বেশ প্রাচীন। যদিও ঠিক কবে এটি তৈরি হয়েছিল তা মনে করতে পারেননি কেউই। তথ্য পাওয়া যায়নি জেল পরিষদ সূত্রেও। এরই একটি ঘরের ভাড়া ১০০ টাকা। অন্য দু’টি ঘরের ভাড়া ৫০ টাকা। নিয়মের কড়াকড়িতে সহজে ঘর ভাড়া পাওয়া যেত না কখনই। বেশ কয়েকদিন আগে জেলা পরিষদ থেকে অনুমোদন করাতে হত। এখন অবশ্য সে সব অতীত। কাঠের জানলা, দরজা প্রতিদিন ভেঙে পড়ছে। দেওয়ালে লোনা ধরেছে বহু কাল। অল্প বৃষ্টি হলেই জল পড়ে। বৃষ্টির জলেই নষ্ট হয়েছে শয্যাগুলিও।

শুধু এই তিনটি ঘর নয়। ডাকবাংলো চত্বরেই রয়েছে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের অতিরিক্ত কার্যালয়। এমনকী তাঁর থাকার জন্য ঘরও নির্দিষ্ট ছিল। রয়েছে বাংলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি অফিস ঘরও। তবু প্রায় কিছুই করা যায়নি। কান্দি এলাকায় গড়ে উঠেছে দু’তিনটি বেসকারি হোটেল। তাদের ব্যবসা চলেছে বেশ রমরমিয়েই। শুধু ডাকবাংলো, হয়ে গিয়েছে ভূত বাংলো। স্বভবতই অসামাজিক কাজের আগার হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারাই জানালেন, বাংলোর চারদিকে না আছে কোনও প্রাচীর, না আছে আলোর ব্যবস্থা। ২০০২ সালের বন্যায় ভেঙে পড়ে চারপাশের প্রাচীর। গোটা চত্বরে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি বাতিস্তম্ভ। কিন্তু আলো জ্বলার ব্যবস্থা নেই। অন্ধকার নামলেই ওই চত্বরে শুরু হয় মদ, গাঁজার আসর। চলে জুয়া। এলাকাবাসীরা আতঙ্কিত, না জানি আরও কত কী হয় ওখানে। একজন সাফাইকর্মী-সহ দু’জনের পা পড়ে বাংলোয়।

তবে শুধু অসামাজিক ক্রিয়াকলাপ নয়, বাংলোকে গুদাম হিসাবে ব্যবহার করছে সরকারও। বাংলোর মাঠে একে একে জড়ো করা হয়েছে সেচ দফতরের পাইপ, যন্ত্রাংশ। পুরপ্রধান কংগ্রেসের গৌতম রায় বলেন, “আমরা জেলা পরিষদকে বারবার বলেছি বাংলোটি সংস্কারের কথা। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এমনকী বাংলোটি পুরসভাকে হস্তান্তরিত করার প্রস্তাবও দিয়েছি আমরা। পুরসভারও অতিথিশালা রয়েছে। এটিকেও তেমন করে নেওয়া যেতে পারে।” ওই বাংলোর জীর্ণদশার কথা স্বীকার করে নিয়েই মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কংগ্রেসের গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সাংসদ অধীর চৌধুরী ওই ডাকবাংলোটি সংস্কার করার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন। ডাকবাংলোটির সংস্কার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু হয় সেটা দেখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kandi kandi dakbanglo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE