Advertisement
০৭ মে ২০২৪
কৃষ্ণগঞ্জে গুলি-চালনা

অভিযুক্তরা অধরা, ক্ষুব্ধ ঘুঘড়াগাছি

কৃষ্ণগঞ্জ-কাণ্ডে মোট ১২ জন অভিযুক্তদের মধ্যে ধরা পড়েছে একজন। পুলিশের সাফল্য বলতে এইটুকুই! রবিবার কৃষ্ণগঞ্জের ঘুঘড়াগাছিতে জমি দখলকে কেন্দ্র করে এক মহিলা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও তিন জন। সোমবার পুলিশ ওই ঘটনার ‘মাস্টার মাইন্ড’ লঙ্কেশ্বর ঘোষ ওরফে লঙ্কাকে গ্রেফতার করেছে। বাকি ১১ জন ‘পলাতক’ অভিযুক্তের খোঁজে পুলিশ এখনও ‘তল্লাশি’ চালাচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১২
Share: Save:

কৃষ্ণগঞ্জ-কাণ্ডে মোট ১২ জন অভিযুক্তদের মধ্যে ধরা পড়েছে একজন। পুলিশের সাফল্য বলতে এইটুকুই!

রবিবার কৃষ্ণগঞ্জের ঘুঘড়াগাছিতে জমি দখলকে কেন্দ্র করে এক মহিলা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও তিন জন। সোমবার পুলিশ ওই ঘটনার ‘মাস্টার মাইন্ড’ লঙ্কেশ্বর ঘোষ ওরফে লঙ্কাকে গ্রেফতার করেছে। বাকি ১১ জন ‘পলাতক’ অভিযুক্তের খোঁজে পুলিশ এখনও ‘তল্লাশি’ চালাচ্ছে।

পুলিশের এই তল্লাশির বহরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের একাংশ জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ অভিযুক্তদেরই তো পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারল না। ফলে একা লঙ্কা ধরা পড়লেও বাকিরা তো বাইরেই রয়েছে। তারা যে আবার নতুন করে কিছু করে বসবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?

সোমবার সন্ধ্যায় লঙ্কাকে উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানার চার মাইল এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার তাঁকে কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১২ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। কিন্তু লঙ্কাকে জেরা করে এখনও পর্যন্ত পুলিশ তেমন কোনও ‘বিস্ফোরক’ তথ্য জানতে পারেনি।

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, হার্টের ‘অসুখ’ থাকায় লঙ্কাকে বিশেষ ‘চাপ’ দেওয়া যাচ্ছে না। আর সেটাকেই কাজে লাগাচ্ছেন কৃষ্ণগঞ্জ-কাণ্ডে অন্যতম মূল অভিযুক্ত লঙ্কা।

ঘটনার পর থেকেই লঙ্কা নিজেকে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলে দাবি করেন। ওই ঘটনার পরে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। একে একে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা গ্রামে এসে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সঙ্গে এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারেরও দাবিও জানান তাঁরা।

গ্রামবাসীদের একাংশ ও বিরোধীদের অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমে লঙ্কা ঘোষের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসায় পুলিশ তাঁকে ধরার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু অন্যদের গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশ সে ভাবে সক্রিয় নয়। তাঁদের দাবি, পুলিশ চেষ্টা করলে যে অনেক কিছুই করতে পারে তার বড় উদাহরণ লঙ্কা। প্রশ্ন উঠছে, লঙ্কাকে যদি ভিন্ জেলা থেকে পুলিশ পাকড়াও করতে পারে তাহলে বাকিরা ধরা পড়ছে না কেন?

জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা বাকি অভিযুক্তদের ধরার জন্য সব রকম ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি। তদন্তে বেশ কিছু নতুন তথ্যও উঠে এসেছে। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে এই মুহূতের্র্ তা প্রকাশ করা যাবে না।”

যদিও জেলা তৃণমূল ও পুলিশের একাংশের দাবি, তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী লঙ্কা ঘোষের নাম প্রকাশ্যে চলে আসায় অস্বস্তিতে পড়ে যায় দল। প্রথম থেকেই তৃণমূল নেতৃত্ব লঙ্কার সঙ্গে দলের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করতে শুরু করেন। আর ঠিক সেই কারণেই লঙ্কার সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নেই এটা প্রমাণ করতে তড়িঘড়ি পুলিশের কাছে লঙ্কাকে গ্রেফতারের নির্দেশও আসে। সেই মতো পুলিশও লঙ্কাকে গোপালনগরের চার মাইল থেকে গ্রেফতার করে।

তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকেরা জানান, ধৃত লঙ্কেশ্বর নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করার পাশাপাশি এক এক সময় এক এক রকম তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করারও চেষ্টা করছেন। তদন্তকারী এক আধিকারিকের কথায়, “জেরায় একটা বিষয় আমাদের কাছে পরিষ্কার যে, লঙ্কাই গোটা ঘটনার ছকটা কষেছিল। সেই এই ঘটনার মাস্টার মাইন্ড। তবে শারীরিক সমস্যাকে হাতিয়ার করে সে অনেক কিছু গোপন করতে চাইছে। তবে তাকে জেরা করে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।”

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, ঘটনার পরে পুলিশ একাধিকবার তাঁর বাড়িতে হানা দিয়েছিল। দলও তাঁর মাথার উপর থেকে হাত তুলে নিয়েছিল। সেই অবস্থায় বিপদ আঁচ করতে পেরে রাতেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিলেন পাকা মাথার লঙ্কেশ্বর। নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে তিনি কাঁটাতারের ওপারে বাংলাদেশকেই বেছে নিয়েছিলেন। সেই মতো তিনি চলে যান গোপালপুরের চার মাইল এলাকায়। সেখান থেকে সীমান্ত একেবারেই কাছে।

পুলিশের ওই আধিকারিকের কথায়, “পরিকল্পনা মতোই এগোচ্ছিল লঙ্কা। চার মাইল যেতে আমাদের আর একটু দেরি হলেই সে বাংলাদেশে চলে যেত। তখন তার নাগাল পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ত।”

কিন্তু লঙ্কার নাথপুরের বাড়ি থেকে সীমান্ত মেরেকেটে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। তার উপরে গরু পাচারের সুবাদে তাঁর পক্ষে এই সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে চলে যাওয়া খুব সহজ ব্যাপার ছিল। কিন্তু তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা সীমান্ত ফেলে তিনি দূরের সীমান্ত বেছে নিয়েছিলেন কেন?

ওই আধিকারিকের কথায়, “ঘটনার পরেই বিএসএফকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। যাতে লঙ্কা-সহ অন্য অভিযুক্তরা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে যেতে না পারে। ফলে বাড়ির কাছাকাছি সীমান্ত পার হওয়া তার পক্ষে একটু কষ্টকর হয়ে পড়ত। তা ছাড়া খবরের কাগজে লঙ্কার ছবি প্রকাশিত হওয়ায় তার ধরা পড়ার সম্ভবনাও ছিল। তাই সে অন্য সীমান্ত বেছে নিয়েছিল।”

সম্মেলন। মোহনপুর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের গ্যালারিতে তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠন কর্মচারী সংসদের ত্রয়োদশ সম্মেলন হল বুধবার। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলে কোনও শিক্ষাকর্মী বা ছাত্র প্রতিনিধি থাকবে না বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার, তার বিরুদ্ধে এ দিন সম্মেলনে তীব্র ক্ষোভ জানায় কর্মচারী সংসদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

krishnaganj ghugragachi murder case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE